March 29, 2024, 8:29 am

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কী আসলেই ‘শ্বেত হাতি’?

হঠাত করেই আজকে একটি খবর ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নাকি শ্বেত হাতি। অর্থাত অত্যধিক ব্যয়বহুল প্রকল্প যার বেনিফিট খুবই কম। আবার হেডলাইনে বড় করে লেখা আছে মাত্র ২৪০০ মেগাওয়াট এর জন্য ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক লাখ তেরো হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর পরিশোধ করতে হবে ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  সাধারণত এত বড় বড় সংখ্যা দেখে সবাই মেনেই নিবে আসলেই এটি একটি নিকৃষ্টতম সাদা হাতির প্রকল্প।

যাইহোক হাতি সাদা হোক আর কালো হোক হাতি লাভবান কিনা সেটা দেখা যাক।  প্রথমত এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিবে ১ বিলিয়নের কিছু বেশি। এবং রাশিয়া লোন দিবে ১১ বিলিয়নের মতো। আর ২ টি রিএক্টর চালু হওয়ার পর প্রতি বছর কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার। যেহেতু কিস্তি পরিশোধ করতে হবে তাই এই প্রকল্পের রিটার্ন থেকে কিস্তির অর্থ উঠে আসলে সবচেয়ে ভালো। তাহলে ভর্তুকির দরকার পরবেনা।  #বিদ্যুত বিক্রি থেকে আয়: দুটি রিএক্টর থেকে বিদ্যুত পাওয়া যাবে ২৪০০ মেগাওয়াট।  ২৪০০ মেগাওয়াট = ২,৪০,০০,০০ কিলোওয়াট বা ইউনিট। এক ইউনিট বিদ্যুত যদি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। তাহলে এক ঘন্টায় আয় হবে ২,৪০,০০,০০×৫= ১,২০,০০,০০০ (এক কোটি বিশ লাখ টাকা)। ১ দিনে ২৪ ঘন্টা হিসেবে দৈনিক আয় ১,২০,০০,০০০×২৪ = ২৮,৮০,০০,০০০ (২৮ কোটি ৮০ লাখ।  আর বছরে ২৮,৮০,০০,০০০× ৩৬৫ = ১০৫১২,০০,০০,০০০ ( ১০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা বার্ষিক আয়। যদি ডলার হিসেব করা হয় , তাহলে বার্ষিক আয় ১০৫১২,০০,০০,০০০ ÷ ৮৫ = ১,২৩৬,৭০৫,৮৮২. ডলার বা ১২৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

#মোট ব্যয়: প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে জ্বালানি খরচ হবে ৪.৫-১১.২ $. এবং মেইনটেনেন্স এন্ড অপারেশন কস্ট হবে প্রতি মেগাওয়াটে ৮-১৪ $. এই দুই ধরনের ব্যয় মিলিয়ে প্রতি মেগাওয়াটে গড় খরচ হবে ১৬-১৮ ডলারের মতো। এর বেশি হবেনা কারণ ভিভিইআর-১২০০ সবচেয়ে আধুনিক রিএক্টর এবং রাশিয়ান জ্বালানি তুলনামূলক সস্তা। যাইহোক প্রতি মেগাওয়াট ১৮ ডলার হিসেবে ২৪০০মেগাওয়াট এ খরচ হবে ২৪০০×১৮= ৪৩,২০০$ বা ৩৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা ঘন্টা। এক দিনে খরচ ৪৩,২০০×২৪= ১০,৩৬,৮০০ ডলার।  এক বছরে খরচ ১০,৩৬,৮০০×৩৬৫= ৩৭৮,৪৩২,০০০ ডলার বা ৩৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  এবার ধরে নেওয়া যাক ২৪০০ মেগাওয়াট -এ না চলে ৯০ শতাংশ ক্যাপসিটি তে রান করলো। তাহলে এর ব্যয় কমে দাঁড়াবে ৩৭৮×৯০%= ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।  পাশাপাশি আয় ও কমে দাঁড়াবে ১২৩৬×৯০%= ১,১১২ মিলিয়ন ডলারে।  তাহলে বার্ষিক নিট লাভ কত?  Net income =( Total income – Total cost)
=(১,১১২ – ৩৪০)
= ৭৭২ মিলিয়ন ডলার প্রতি বছর কমপক্ষে ৭৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ হলে ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কেন পরিশোধ করতে পারবেনা এই প্রকল্প?  এভাবে ২০ বছরে কিস্তি পরিশোধ করেও প্রতি বছর ২০০ মিলিয়ন লাভ হবে। আর এই ১২ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প থেকে ৬০ বছরে রিটার্ন আসবে প্রায় ৬০×১১১২= ৬৬৭৭৪ মিলিয়ন বা ৬৬ বিলিয়ন ৭৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  অর্থাৎ ৬৬÷১২= ৫.৫ গুন রিটার্ন।  এছাড়াও ৬০ বছরের পরেও আপগ্রেড করে চালানো যাবে।

এটাতো গেলো আর্থিক লাভের হিসাব, সাথে এর ফলে যে দীর্ঘ মেয়াদী পাওয়ার সোর্স পাওয়া গেলো, টালমাটাল বিশ্ব পরিস্হিতিতে আমদানি নির্ভর জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুতের অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচা গেলো তথা ‘জ্বালানি নিরাপত্তা’ নিশ্চিত হলো, এটা অন্যতম একটা বড় ভ্যালু এ প্রজেক্টের। সাথে এ প্রকল্পকে ঘিরে যে হিউজ পরিমান দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ডিপার্টমেন্ট খুলেছে, শিক্ষা খাতে একটা বুষ্ট এড হচ্ছে এমন অনেক বিষয়ই এই বিশিষ্ট ‘বুদ্ধিজীবির’ বিবেচনায় নেই?!  যাইহোক হাতি সাদা হলেও কিন্ত খুবই উপকারী।  সুতরাং বুদ্ধি বিক্রি করা কথিত বুদ্ধিজীবীদের আর্টিকেল পরে বোকা না হয়ে নিজের বুদ্ধিটা কাজে লাগিয়ে একটু ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে উত্তর বের করুন।

লেখক ঃ ফয়সাল আহসান

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD