April 16, 2024, 4:36 pm

দ্রব্য মূল্যের পাগলা ঘোড়ার পাগলামিতে জনগণের দুর্ভোগ

মোঃ মুরশীদ আলম
সমুন্দ। অতি উৎকৃষ্ট জাতের একটি ঘোড়া। একবার দৌড় শুরু করলে কোনোক্রমে আর তাকে থামানো যায় না। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আনা যায় না বশে কিছুতেই। এতে তার সোয়ারিকে কতই না দুর্ভোগ আর কষ্ট সহ্য করতে হয়। লে পৌঁছে তবেই থামে। বর্তমানে আমাদের দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সুমন্দ ঘোড়াটা ছুটে চলছে ল্যহীন ভাবে। এতে সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগ সহ্য করছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বিত্তবানদের গায়ে দ্রব্যের বর্ধিতমূল্যের আগুনের তাপ খুব একটা লাগে না। লাগলেও তাঁরা এটা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। বিচলিত হয়না। কেননা তাদের নানা ধরণের আয় উপার্জন আছে। দ্রব্য মূল্যের তাপ নিবারণের জন্য জানা আছে নানা কলা কৌশল। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে অভিজ্ঞ অগ্নি নির্বাপক কর্মীর মতো প্রাণ বাঁচিয়ে দ্রব্য মূল্যের আগুনের সাগর পাড়ি দিতে সম হয়। নিম্ন বিত্ত মানুষের বহু ধরণের আয়ের পথ খোলা আছে। চন্ডি পাঠ থেকে জুতা সেলাই তারা করতে পারে। এতে তাদের কোনো অসুবিধা হবেনা বা হয় না। গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে- ‘মোর তাঁত আছে হাল ও আছে’। অর্থাৎ এক লোকের তাঁত আছে আবার জমি জিরাত চাষ বাস করার জন্য গরু সহ হাল আছে। একদিন তাঁত চালাতে গিয়ে সুতা বার বার ছিঁড়ে যাওয়ায় সে বিরক্ত হয়ে স্বগতোক্তি করে, ‘তাঁত তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস। আমার হালও আছে।’ এই বলে সে তাঁত বন্ধ করে হাল নিয়ে মাঠে যায়। এই গৃহস্তের মত নিম্নবিত্ত মানুষেরা হাল ছেড়ে তাঁত চালাতে পারবে। তাদের কোনো অসুবিধা হবে না। হয়তো সকালে মজুর দিল। সন্ধ্যা বেলা রিকশা চালাতে শুরু করল। যে ভাবেই হোক দু পয়সা ঘরে আনতে সম হচ্ছে। সংসারের জ্বালাময় ইঞ্জিনটা সচল রাখে। গতি খুব মন্থর। এতে তাঁদের আত্মসম্মানে বাধেনা। তাদের লোক লজ্জার ভয় নাই। তারা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু যত অসুবিধা ঐ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। তারা অতিরিক্ত আয়ের জন্য বিকল্প কোনো কাজ করতে পারছে না। লোক লজ্জার ভয়, আত্মসম্মান আর প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব সহ নানা অসুবিধার জালে তারা জড়িয়ে আছে। এ জাল তারা কিছুতেই ছিঁড়তে পারছে না। তাদের ত্রিশঙ্কু অবস্থা। তবুও তাদের চলতে হয়। ফিনিক্স পাখি যেমন জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে আবার উড়তে শুরু করে তার প্রয়োজনের তাগিদে। তেমনি মধ্যবিত্তরা ফিনিক্স পাখি হয়ে উড়ে চলছে এই দ্রব্য মূল্যের অনল তপ্ত গগনে। খাক হচ্ছে। খ্যাঁক খ্যাঁক করছে কাশের কারণে। ওষুধ খাওয়া দরকার। কিন্তু টাকা কই। পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি। প্রকৃতপে কতটুকু ক্রয় মতা বেড়েছে তা টিসিবির গাড়ির পিছনে ছুটে চলা মানুষ কে দেখলে খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়।
নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির একটি কারণ হলো, সরবরাহ কম। অসাধু ব্যবসায়ীরা মিলে পণ্য মজুদ করে রাখে। সিন্ডিকেট করে বাজারের লাটিম টা তাদের হাতে রাখে। কোনো শক্তিই তাদের গায়ে হাত দিতে পারে না। শোনা যায় উচ্চমহলের অনেকের সংগে তাদের সখ্য আছে। ফলে কোনো কিছুই করা যায় না তাদের বিরুদ্ধে। কোনো কিছু ব্যবস্থা নিলে তা বজ্রআঁটুনি ফস্কা গিরোর মতো হয়ে যায়। কিন্তু না, এদের কে কঠোর হস্তে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনো প্রকার অনুকম্পা দেখানো ঠিক হবে না। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ সহ্য করছে সঞ্চয়পত্রের আয়ের উপর নির্ভরশীল মানুষেরা। এই খাত বা প্রকল্প হতে তারা যে মুনাফা পায় তা থেকে সরকারকে কর দেওয়ার পর যে যৎ সামান্য পয়সা তারা হাতে পায় তা নিয়ে থলে হাতে বাজারে তারা আর যেতে পারেনা। তারাই জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায় দ্রব্যমূল্যের আগুনে। এদের করার কিছুই নেই। তারা যেন তীরবিদ্ধ আহত পাখি। ছটফট করছে কিন্তু প্রাণবায়ু বের হচ্ছেনা।
এদের জন্য কারো কোনো ভাবনা নেই। ভাব খানা এমন যে তারা তো সঞ্চয় পত্র খরিদ করেছে। তাদের আবার অভাব কি। সীমিত আয়ের মধ্য দিয়ে তাদের সংসার চালানো বড় কষ্ট সাধ্য হয়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরান অবস্থা তাদের। তারা কারো কাছে কিছু বলতে পারেনা। কারো কাছে হাতও পাততে পারেনা। লজ্জায় তাদের মাথা নত হয়ে আসে। লজ্জাবতি গাছের মতো নেতিয়ে যায়। কাকে বলবে। কে বলবে। তাদের তো কোনো সমিতি নেই। নেই কোন মঞ্চ। ফলে সরকার এদের উপর হাত চালায়। পাতিলে রাখা জিয়েল মাছের মতো যখন তখন ধরে পাক করার মতো।যখন খুশি মুনাফা কমে দিচ্ছে। আবার সঞ্চয় সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এ যেন ভানু মতির খেলা। আর এ খেলার দর্শক হচ্ছে তারা। তাদের জন্য সরকারের কিছু করা দরকার। অনেককেই তো সদাশয় সরকার এই করোনাকালীন সাহায্য করেছে। এর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের উপর যারা নির্ভরশীল তাদর ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। দুই বছরের জন্য তাদের কর মওকুফ করে দেওয়া হোক। সরকারের বিভিন্ন অফিসে যে অপচয় হয় বা হবার সম্ভাবনা আছে তা কঠোর হাতে দমন করা হোক। যেমন পল্লী সড়ক সংস্কার ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অডিও ভিডিওর জন্য ৬ কোটি টাকা চেয়েছে প্রকল্প কর্তৃপ। এ ধরণের প্রকল্পের সংগে অডিও ভিডিওর কি সম্পর্ক। কেননা যদি জনসচেতনতার বিষয় থাকত তাহলে না হয় বোঝা যেত এটার প্রয়োজন আছে। এমন ধরণের অপচয় অন্যান্য অফিসেও যদি থাকে তাহলে সেগুলো বন্ধ করতে পারলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষকে সাহায্য করা কঠিন হবে বলে মনে করা যায় না।
লেখক-সাংবাদিক, কলাম লেখক এবং
২০১৯ সালে গ্রামীণ সাংবাদিকতায় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক প্রাপ্ত।
মোবাইল ফোন নম্বর –০১৭১৮৫৩৩৭৬৬

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD