April 19, 2024, 10:38 pm

এখনো নদীর সঠিক সংখ্যা বের করতে পারিনি: প্রতিমন্ত্রী

যমুনা নিউজ বিডিঃ  এখনো দেশের নদণ্ডনদীর সঠিক সংখ্যা বের করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। সোমবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে। বাংলাদেশের নদণ্ডনদীর সংখ্যার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো নদণ্ডনদীর সঠিক সংখ্যা বের করতে পারিনি। তবে অফিসিয়ালি আমরা বলি বাংলাদেশে ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদীপ্রধান দেশ। এখানে নদীভাঙন পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। তবে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে, আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। তিস্তা চুক্তি নিয়ে নিজেদের উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, চুক্তিটি আমরা করতে চাই। ধীরগতিতে হলেও কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কারণে এটি স্লো হয়ে গেছে। আমরা হয়তো অচিরেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারটি সমাধান করতে পারব। তিস্তা চুক্তির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ ফারুক বলেন, এটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী-আমরা আগে চেষ্টা করেছিলাম। কাজটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে। এটার স্টাডি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। কোন কোম্পানি কাজটা করবে সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যালোচনা করছে। পর্যালোচনার পর একটা দিক-নির্দেশনা দিলে সেই বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, দুবছর আগে আমি যখন হাঙ্গেরি গিয়েছিলাম তখন ভারতের জনশক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আসার পর আমি তাকে কয়েক বার পত্র দিয়েছি। আমি তাকে বাংলাদেশে আসার জন্য দাওয়াতও দিয়েছি। আমি বলেছি, আসেন আমরা আলোচনা করি। উনি হয়তো একটা সময় দেখে আসবেন। সুনামগঞ্জের হাওর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথম থেকে সুনামগঞ্জের বিষয়ে আমার নজর রয়েছে। সেখানে আমরা এক হাজার ৫৪৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছি। সেখানে আমরা ১৪টা নদী খনন করব। সমীক্ষা সেপ্টেম্বর মাসে চলে আসবে, অক্টোবরের মধ্যে চেষ্টা করব একনেক থেকে সেটা পাস করিয়ে নেব। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই আমরা কার্যক্রম শুরু করবো। বর্ষার আগে আমরা যদি ২০ শতাংশ কাজও করতে পারি, আমরা আশা করি সুনামগঞ্জের হাওর তেমন কোনো ক্ষতি আর হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক একজন ঠিকাদার ৫০ থেকে ৭০টি কাজ নিয়ে বসে আছেন। সে কাজগুলো তারা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারছে না। এই ঠিকাদাররা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত- এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথমে ১১ জন ঠিকাদার ছিল। অনেক বড় বড় ঠিকাদার ছিল। এক একজন ডিপিএমে (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার কাজ পেতো। আমরা একটি কাজও ডিপিএমে দেইনি। আমরা বলেছি এই ১১ জন ঠিকাদার কাজ শেষ না করা পর্যন্ত নতুন করে কোনো কাজ পাবে না। কাজগুলো শেষ করার পর সেই পুরনো ১১ জনকে এখন আমরা কাজ দিচ্ছি। এখন নির্দেশনা হচ্ছে একজন ঠিকাদার তিনটির বেশি কাজ করতে পারবে না। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে ও নির্মাণ সামগ্রীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বালুর। তবে পরিকল্পনাহীন বালু উত্তোলনের রয়েছে নানা ক্ষতিকর প্রভাব। অবৈধভাবে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর তীরের বসতবাড়ী ও ফসলের জমি। সঠিকভাবে বালু উত্তেলন করলে ভাঙ্গন অনেকাংশে কমে আসবে। এ ব্যাপারে তিনি মিডিয়ার দায়িত্বশীল ভূমিকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অবৈধভাবে বালি উত্তোলন সম্পূর্নভাবে বন্ধ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে স্হানীয় প্রশাসনকে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়পূর্বক বালুমহল লিজ/ইজারা দেয়ার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেয়া প্রয়োজন। অতি শীঘ্রই বালু উত্তোলন সংক্রান্ত নীতিমালা মন্ত্রীপরিষদে উপস্থান করা হবে। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান; বিগত বার বছরে প্রাকৃতিক দূর্যোগে বার বার আঘাত সত্ত্বেও কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য এবং জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক অর্জন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথকে মসৃন করেছে। সরকারের একারপক্ষে সবকিছু করা সম্ভব না জনগণেরও সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তিনি জানান দায়িত্ব নেয়ার পর গতে এ পর্যন্ত ৪৩০ টি এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গন কবলিত মানুষের দুখ: দুর্দশা নিজ চোখে দেখে যেখানে যা করা প্রয়োজন তাৎক্ষনিক সে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ প্রর্যন্ত ১৭ হাজার কি:মি: বাঁধ নির্মান করেছে। এই বাধগুলোর রক্ষা ও যত্ন প্রয়োজন,তা করতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের এগীয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও ভিশন বাস্তবায়নে জলবায়ু পরিবর্তনসহ একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা সমুন্নত রাখতে বর্তমান সরকার “বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০” প্রণয়ন করেছে। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ জানান; ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০ টি কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে যার ৪৫ টি কার্যক্রম এককভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর অর্ন্তভূক্ত ২৫ টি কার্যক্রম ৫০টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা প্রদানসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও পানি দূষণ কমাতে সক্ষম হবে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় ৬৪টি জেলায় অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়)” প্রকল্পটির আওতায় প্রায় ৫২৬২ কিঃমিঃ নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন করা হচ্ছে। ফলে ১০৯টি ছোট নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। জলাশয়, খাল ও নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হবে। এ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির ২য় পর্যায়ে ৬৪টি জেলায় আরও ২,৪১৫ টি ছোট নদী,খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন করা হবে যার দৈর্ঘ্য ১৩,৮৪৩ কিমি। এর ফলে ২১২টি ছোট নদী, ২০০৪টি খাল ও ১৯৯টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আনুমানিক ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর এলাকার জলাবদ্ধতা, বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপযয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রায় ১লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের ফলে বার্ষিক প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মে: টন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ সময় প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২২ সালের সংঘটিত আগাম বন্যায় হাওরের ০৭টি জেলার আওতাধীন ৪,৭২,৭৬৬ হেক্টর ধানী জমির মধ্যে ৩,৩০৩ হেক্টর ধানী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (সুনামগঞ্জ-৩,৩০০ হেক্টর এবং নেত্রকোনা- ৩ হেক্টর)। হাওর অঞ্চলে সংস্কার ও মেরামতকৃত ৮,৬২ কি:মি: বাধেঁর মধ্যে মাত্র ৩,১৫ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (সুনামগঞ্জ- ২৮৫ মিটার এবং নেত্রকোনা- ৩০ মিটার)। সুনামগঞ্জ এলাকায় ১,৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি নদী খনন এবং বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুনামগঞ্জ এলাকায় আগাম বন্যা হতে ফসলাদি ও জানমালের ক্ষতির পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। যদিও এবারের বন্যা নিয়ে কিছুকিছু ভুল তথ্য এসছে বলা হয়েছে এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জে ৫ থেকে ৬শ কোটি টাকা দূর্নীতি হয়েছে,কিন্তু বাস্তবতা হলো সুনামগঞ্জে বরাদ্দ ছিল ১২০ কোটি টাকা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দখলকৃত যায়গা উদ্ধার চলমান রয়েছে। এছারা কোথাও কোথাও কৃষিকাজ ও মৎস্য চাষের জন্য জমি লিজ দেয়া হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন একই ঠিকাদারের ৫০-৬০ টি কাজ পাওয়ার আর সুযোগ নেই। যারা একাধিক কাজ পেয়েছেন তাদের কাজ শেষ না হলে নতুন করে কাজ দেয় হচ্ছে না। তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আছে,আমরা আশাবাদী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ সময় বিএসআরএফ সহ-সভাপতি মোতাহার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী আজাদ মাসুম, অর্থ সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ সুমন, কার্যনির্বাহী সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, শাহজাহান মোল্লা, হাসিফ মাহমুদ শাহ, শাহাদাত হোসেন (রাকিব), মো. বেলাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD