April 26, 2024, 5:56 am

সংসদে অর্থমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জিং বাজেট পেশ

যমুনা নিউজি বিডিঃ ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে উত্থাপিত হলো ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন করেন। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সামনে রেখে এবারের বাজেটকে অনেকেই বলছেন সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং।

গতকাল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া মূল বাজেটের তুলনায় ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। সে হিসাবে নতুন বছরের উত্থাপিত বাজেট এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। গতকাল বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এবারের বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, এনবিআরের ল্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআরবহির্ভূত কর ১৮ হাজার কোটি টাকা, করছাড় প্রাপ্তি ৪৩ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক অনুদান ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

বরাবরের মতো এবারও উত্থাপিত বাজেটকে ঘাটতি বাজেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। উত্থাপিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ আসবে ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে আসবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের ল্যমাত্রা ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাজেট পেশের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন অতিমারির তৃতীয় বছরে এসে আমাদের অগ্রাধিকার হবে আয়বর্ধন ও কর্মসৃজনের ধারা অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে টেকসই করা ও এর মাধ্যমে অর্থনীতির ভিত্তিকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া। এজন্য আমরা প্রণোদনা কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়ন আগামী অর্থবছরে অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতির সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর যাতে অতিমারির প্রভাব সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারে সে লক্ষে সব ধরনের নীতি-সহায়তা প্রদান করবো। আগামী অর্থবছরই হবে অতিমারির প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের শেষ বছর।

তিনি বলেন, করোনা অতিমারি থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অর্জনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হলো সফলভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারা। ২০২১ সালের শুরুর দিকে বিশ্বে কোভিড-১৯ টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই ঘোষণা দেন যে, যত অর্থ প্রয়োজন পড়ুক, সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় নিয়ে আসবে। টিকার বৈশ্বিক সরবরাহে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অনুসারে আমরা বিভিন্ন বিকল্প উৎস হতে প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহ করতে সম হয়েছি। মাত্র এক বছরের মধ্যে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের প্রায় সব নাগরিককে সফলভাবে দুই ডোজ টিকা প্রদান করতে পেরেছি। বর্তমানে আমরা বুস্টার ডোজ প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। প্রথমটি হলো, আমরা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহার করতে দেইনি। অর্থাৎ দেশে ব্যবহৃত সব কোভিড-১৯ টিকা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক কার্যকর ও নিরাপদ হিসেবে অনুমোদিত। আমাদের দ্বিতীয় সাফল্যটি হলো টিকার ক্ষেত্রে আমরা শহর-গ্রাম, ধনী-গরিব ও নারী-পুরুষের সাম্য নিশ্চিত করতে সম হয়েছি। এ পর্যন্ত দেওয়া প্রায় ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকার প্রায় ৫০.১ শতাংশ গ্রহণ করেছেন দেশের নারীরা। পাশাপাশি আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন ছিন্নমূল মানুষ, বেদে সম্প্রদায়, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ইত্যাদির জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে তাদেরকে টিকার আওতায় আনতে সম হয়েছি। ব্যাপকভাবে টিকাদানের ফলে দেশে সংক্রমণের হার দ্রুত কমে এসেছে। একইসঙ্গে কমেছে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার। এসবের ফলে করোনার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও মানুষের মধ্যে করোনার ভীতিও কমে এসেছে। ফলে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে এসেছে।

শিক্ষা : এবারের বাজেটে শিাখাতে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ সবার নজর কেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিা মন্ত্রণালয় এবং শিা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর শিাখাতে বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। শিা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য করা হয়েছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। শিা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।

স্বাস্থ্য : ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে বরাদ্দ বেড়েছে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছর (২০২১-২২) এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকায়। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রমসহ কোভিড-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যখাতের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করছি, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা ছিল।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, “জনস্বাস্থ্য ও জনজীবনের ওপর ‘কোভিড-১৯’ অতিমারির প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন অব্যাহত রাখা, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন, স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ, যথাসময়ে কোভিড ভ্যাকসিন ক্রয় এবং পর্যায়ক্রমে তা জনসাধারণের মধ্যে প্রয়োগ করার মতো অতি জরুরি পদপে আমরা যথাসময়ে গ্রহণ করেছি। ফলে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রেখে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।’

কৃষি : কৃষি ক্ষেত্রে (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) সার্বিক উন্নয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা ছিল। বরাদ্দ বেড়েছে ৯ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। কৃষিখাত সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ সরকারের একটি অন্যতম ল্য। বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সম হয়েছে। সরকারের মৎস্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক ও লাগসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ টন, যা ২০০৯-১০ সালের মোট উৎপাদনের চেয়ে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় ও বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। এ ছাড়া বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ ও এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। বিশেষ সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৮ম ও ১২তম স্থানে রয়েছে।

সবার জন্য পেনশন : ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারিভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পেনশন প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি, সরকার আগামী অর্থবছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

ভাতার আওতা বৃদ্ধি : নতুন উত্থাপিত বাজেটে ভাতার আওতায় আরও ২ লাখ ৯ হাজার নারী-শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক সুরা বলয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৫৪ হাজার নারী ও শিশু ভাতার আওতাভুক্ত হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরের উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৪৫ হাজার। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক সুরা কর্মসূচির আওতাভুক্ত বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি কার্যক্রমে এবং দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচির আওতায় পল্লি ও শহর সমাজসেবা কার্যক্রম, অ্যাসিড দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে শতকরা ৫০ ভাগ নারী এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা দুস্থ মহিলা ভাতা এবং পল্লি মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমে শতকরা ১০০ ভাগ নারী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিদেশে চাকরির সুযোগ : নতুন অর্থবছরে সরকার ৮ লাখ ১০ হাজার কর্মীকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, রিক্রুটিং এজেন্টগুলোর কার্যক্রম প্রতিনিয়ত তদারকির ফলে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত হয়েছে। কর্মী নিয়োগে পেশাভিত্তিক ডেটাবেজ, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ভিসা যাচাই, অভিবাসনবিষয়ক অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য পৃথক পোর্টাল, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কার্যক্রম অটোমেশন ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে এ খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, নতুন অর্থবছরে উপজেলা পর্যায়ে ১০০টি কারিগরি প্রশিণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুধু করা হবে। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছর ৮ লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং ৫ লাখ ২০ হাজার জনকে বিভিন্ন ট্রেডে দতা উন্নয়নমূলক প্রশিণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

১৫ টাকা কেজিদরে চাল বিক্রি : বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সামাজিক সুরা বলয়ে নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ পরিবার বছরে পাঁচ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পাবে। প্রতিটি পরিবার এ দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারবে।
এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরেও এ কর্মসূচিতে ৫ দশমিক ৭০ লাখ টন চাল ও ৪ দশমিক ৮৫ লাখ টন আটা বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা ২০২২-২৩ অর্থবছরেও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। ৫০ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে বছরের কর্মহীন সময় যথা: সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল–এই পাঁচ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হবে। পরিবারপ্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল দেয়া হবে।

২ লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ : আগামী ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৩ হাজার ৯৪৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেয়ার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার দারিদ্র্য হ্রাস ও জীবনমান উন্নয়ন এবং গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মাধ্যমে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি)-৩য় পর্যায় (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় এযাবৎ ৮ হাজার ৮২৮টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮২ জন সুবিধাভোগীকে প্রশিণ দেয়া হয়েছে। আগামী ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৩ হাজার ৯৪৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেয়ার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমন সময় নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপিত হলো যখন বিশ্ব করোনা-পরবর্তী সংকট সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে, চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জাতিসংঘ খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে, বিশ্বব্যাংক মন্দার ভয় দেখাচ্ছে, দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতি নতুন রেকর্ড গড়ছে, দেশীয় রেমিট্যান্স নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের দেখা দিয়েছে নাভিশ্বাস। এসব চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এবারের বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দু সামাজিক সুরা বলয়কে আরও শক্তিশালী করা, মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেয়া ও দেশজ সম্পদ ও বিনিয়োগকে আরও বিস্তৃত করা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD