May 2, 2024, 6:20 am

রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ

রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে এক কোটি কার্ডধারীর কাছে কম দামে চাল-ডাল-তেল-চিনি-খেজুর বিক্রি করবে সরকার। এছাড়া ন্যায্য মুল্যে মাছ মাংস ডিম বিক্রি করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।

পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে চালসহ টিসিবির পণ্যাদি (ভোজ্য তেল ও ডাল) সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম বিক্রয় ৭ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে। একটি কার্ডধারী পরিবার মাসে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও এক কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা, প্রতিকেজি চিনি ১০০ টাকা ও মসুর ডাল ৬০ টাকা, খেজুর ১৫০ টাকা ও চাল ৩০ টাকায় বিক্রি করছে টিসিবি।

বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি ও দাম ঠিক রাখতে চিনি এবং পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার। এছাড়া এই মুহূর্তে বন্ধ করা হয়েছে চাল রপ্তানি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি না করে স্থায়ী দোকানের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। দুই একদিনের মধ্যে ভারত থেকে এক লাখ মেট্রিক টন চিনি এবং ৫০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসবে।

তিনি আরও বলেন, ‘শুল্ক কমানোর জন্য ১০ টাকা কমেছে ভোজ্য তেলের তেলের দাম। রোজাকে সামনে রেখে সব পণ্যের যথেষ্ট পরিমাণ সরবরাহ আছে। রোজায় কোনও পণ্যের দাম বাড়বে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং বাজারে অব্যাহত আছে। কেউ এবার কারসাজি করতে পারবে না।’

রমজান মাস উপলক্ষে কম দামে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রিস শুরু করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে রবিবার (১০ মার্চ) সকালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গনে ভ্রাম্যমাণ দুধ ডিম ও মাংস বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্ববধানে প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪টি নির্ধারিত স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে ২৪০ টাকা কেজি দরে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ১০০ কেজি রুই, ৩০০ গ্রামের ১৩০ টাকা কেজি দরে ১০০ কেজি তেলাপিয়া, এক থেকে দেড় কেজির পাঙ্গাস ১৩০ টাকা দরে ৭৫ কেজি, ২০ পিসে ১ কেজি ওজনের পাবদা মাছ ২৫ কেজি বিক্রয় করা হবে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২ কেজি মাছ ক্রয় করতে পারবেন।

এছাড়া ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে এবার গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, ড্রেসড (চামড়া ছাড়া) ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতিটি ৯ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া দুই সিটির পাঁচ জায়গায় অস্থায়ী দোকানে ৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস ও আট জায়গায় সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রি হবে। গরু, খাসি, মুরগির মাংস এক কেজি করে কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের বিভিন্নমুখী পদক্ষেপের ফলে ইতোমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। আসন্ন রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য যাতে সহনীয় থাকে সে লক্ষ্যে আমাদের এই পদক্ষেপ।’

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের উদ্যোগে রমজান মাস উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী সুলভ মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রোববার (১০ মার্চ) সকাল থেকে রাজধানীর শ্যামলী মাঠের সামনে অস্থায়ী এই বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে বেগুন ৪০টাকা, উস্তা ৭৫ কেজি, শিম ৫০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৩৫ টাকা, লাউ ৪০ টাকা পিস, কচুর লতি ৭৫ টাকা কেজি, গাজর ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, পুঁইশাক ১৫টাকা, ফুলকপি ২৫ টাকা, লালশাক ১০ টাকা আঁটি, বইতা শাক ১৫ টাকা আঁটি, পালংশাক ১০ টাকা আঁটি, ধনেপাতা ৮০ টাকা কেজি, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা কেজি, টমেটো ৩৫ টাকা কেজি, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা পিচ, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘রমজান মাসে যেখানে বাজারদর কম হওয়া উচিত। সবকিছু সুলভ মূল্যে বিক্রি করা উচিত ব্যবসায়ীদের। সে জায়গা থেকে যারা উল্টো মানুষকে জিম্মি করে উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে, তাদেরকে আমি একটি সতর্কবাণী দিলাম। বাজার কারসাজি করলে কেউ রেহাই পাবে না।’

রমজানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচিবদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। রমজানে কোনোভাবেই যেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না পায়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বাণিজ্য সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মজুতদারি রোধে সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশও দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। পাশাপাশি ইফতার ও সেহরিতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারের রমজানে দেশে অনেক বেশি খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মজুত আছে। এছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজারে আছে। রোজার প্রস্তুতি আমরা যথাযথভাবে নিতে পেরেছি। যখন যা প্রয়োজন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে কারও কোনো সমস্যা হবে না।’

এছাড়া বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে। অপরিশোধিত সয়াবিন, পরিশোধিত/অপরিশোধিত পাম তেল আমদানিতে আমদানি পর্যায়ে ১০% এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় ভ্যাট হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। খেজুর আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্কহার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।চাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং রেগুলেটরি ডিউটি ২৫% এর পরিবর্তে ৫% নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা নারীসহ কম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন স্বস্তি আসবে, তেমনি পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এতে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD