October 4, 2024, 6:15 am
যমুনা নিউজ বিডি: একসময় অবৈধ দখলে ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গার লালদিয়ার চরের প্রায় ৫২ একর জায়গা। পরে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে সেই জায়গা উদ্ধারে সক্ষম হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এবার সেখানকার ৪৪ একর জায়গায় কনটেইনার টার্মিনাল গড়তে চাইছে ডেনমার্কভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং কোম্পানি মায়েরস্ক লাইন। এজন্য ৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অঙ্ক প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
মূলত পতেঙ্গা কনটেনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার সুযোগ না পেয়ে লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিটি। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লালদিয়ার চরে কনটেইনার টার্মিনাল হলে তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। বহির্নোঙরের কাছাকাছি কোনো বাঁক না থাকায় স্থানটি টার্মিনালের জন্য আলাদা গুরুত্ব বহন করবে। এখানে অনায়াসে বড় জাহাজ বার্থিং দেওয়া যাবে। বাঁক না থাকায় লম্বা জাহাজ ভিড়তেও সমস্যা হবে না। বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব। প্রায় এক হাজার নতুন কর্মসংস্থান হবে।
বহুবছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবসা করছে মায়েরস্ক লাইন। বিশ্বের ১১৬ দেশে এই কোম্পানির বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে। ৭৮৬টিরও বেশি জাহাজ পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ধারণক্ষমতা ৪ দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউএস। ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ডেনিশ কোম্পানিটি চট্টগ্রাম বন্দরে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু এই দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের মালিকানাধীন রেড সি গেটওয়েকে দেওয়ার পর লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ এবং পরিচালনার ব্যাপারে নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছে মায়েরস্ক লাইন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট মায়েরস্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রবার্ট মায়েরস্ক উগলা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনিশ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড্রেস বি কার্লসেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। প্রস্তাব দেন লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ স্থাপনের। তারা আরও বলেন, আগামী ৪০ বছর এই টার্মিনাল থাকবে মায়েরস্কের নিয়ন্ত্রণে। এরপর টার্মিনালটি যেমন থাকবে সেভাবেই চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে হস্তান্তর করে চলে যাবে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে এক হাজার লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে বাংলাদেশ থেকেই। এসব প্রস্তাব খুব ভালোভাবেই নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত টার্মিনাল নিয়ে এখন সার্ভে চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করছে মায়েরস্ক লাইন।
চট্টগ্রাম বন্দরে মায়েরস্কের এই নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলছে, বন্দরে যত বেশি বিদেশি জায়ান্ট যুক্ত হবে, সেবার মান তত উন্নত হবে। বিশেষ করে ডলার সংকটের এই সময়ে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ খুবই ইতিবাচক।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বিনিয়োগের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহনের পরিধি বাড়বে। তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানির সঙ্গে বাড়বে আমদানি। জাহাজ বার্থিংয়ের সময় ও লিড টাইম কমে আসবে। কমবে পণ্য পরিবহন ব্যয়।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দর সুবিধা বাড়াতে মায়েরস্কের মতো প্রতিষ্ঠানের নতুন বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে আরও নতুন বিনিয়োগ আসার পথ তৈরি হবে। বাড়বে কর্মসংস্থানও।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ বলেন, বন্দর পরিচালনায় কোনো গ্লোবাল জায়ান্ট যুক্ত হওয়ার অর্থ হলো অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা আসা।
কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন পতেঙ্গার লালদিয়ার চর এলাকাটি ছিল অবৈধ দখলে। ২০২১ সালের মার্চে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হয় এ এলাকা। দুই বছরেরও বেশি খালি পড়ে আছে এলাকাটি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, লালদিয়ার চরে বন্দরের ৫৩ একর জায়গা রয়েছে। সেখানে একটি টার্মিনাল করার প্রস্তাব দিয়েছে মায়েরস্ক। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে বিদেশি বিনিয়োগ এলে সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশে কনটেইনারে পরিবাহিত পণ্যের ৯৮ শতাংশ পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রপ্তানিপণ্য জাহাজে তোলার আগে স্টাফিং (কনটেইনার ভর্তি) করা হয় চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি আইসিডিতে। এসব আইসিডি থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৩০ শতাংশ পরিবহন করে মায়েরস্ক লাইন শিপিং কোম্পানির জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ কনটেইনার পরিবহন হয়। আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের এক-তৃতীয়াংশ মায়েরস্ক লাইন পরিবহন করে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, লালদিয়ার চর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভেড়ানো যায়। লালদিয়া টার্মিনালেও একই আকৃতির জাহাজ ভেড়ানো যাবে।