October 11, 2024, 9:45 am
যমুনা নিউজ বিডি: পবিত্র কোরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় ও ২য় সূরা হচ্ছে সূরা আল বাকারা। সূরাটির শেষ ২ আয়াতের রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও তাৎপর্য।
বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোরআনের কোন সূরা সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, সূরা ইখলাস। এরপর ব্যক্তিটি আবার প্রশ্ন করলেন, কোরআনের কোন আয়াতটি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, আয়াতুল কুরসি। এরপর লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি কোন আয়াতটি পছন্দ করেন, যাতে আপনার উম্মত লাভবান হবে। নবীজি (সা.) বললেন, সূরা বাকারার শেষ ২টি আয়াত।
সূরা আল বাকার শেষ ২ আয়াত
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
উচ্চারণ: ‘আ-মানাররাসূলু বিমাউনঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহী ওয়াল মু’মিনূনা কুল্লুন আ-মানা বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুসূলিহী লা-নুফাররিকুবাইনা আহাদিম মির রুসূলিহী ওয়া কা-লূ সামি‘না ওয়াআতা‘না গুফরা-নাকা রাব্বানা-ওয়া ইলাইকাল মাসীর’।
অর্থ: ‘রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তার পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তার পয়গম্বরদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে’। (সূরা আল বাকার, আয়াত: ২৮৫)
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
উচ্চারণ: ‘লা-ইউকালিলফুল্লা-হু নাফসান ইল্লা-উস‘আহা-লাহা-মা কাসাবাত ওয়া ‘আলাইহা-মাকতাসাবাত রাব্বানা-লা-তুআ-খিযনা ইন নাসিনা-আও আখতা’না-রাব্বানা ওয়ালা-তাহমিল ‘আলাইনা-ইসরান কামা-হামালতাহূ আলাল্লাযীনা মিন কাবলিনা-রাব্বানা-ওয়ালা তুহাম্মিলনা-মা-লা-তা-কাতা লানা-বিহী ওয়া‘ফু‘আন্না-ওয়াগফিরলানা-ওয়ারহামনা-আনতা মাওলা-না-ফানসুরনা-‘আলাল কাওমিল কা-ফিরীন’।
অর্থ: ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর’। (সূরা: আল বাকার, আয়াত: ২৮৬)
সহিহ মুসলিম শরিফ এ ২টি আয়াতের ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, ‘এ ২টি আয়াত রাসূল (সা.)-কে মিরাজের রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে আসমানে দান করা হয়েছে’।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ৩টি জিনিস দান করা হয়: ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত, ৩. উম্মতদের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ’। (মুসলিম, তাফসিরে মাজহারি)
সূরা বাকারার শেষ আয়াত দুটি নিয়ে হাদিসে আরো অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এ ২টি আয়াতের ফজিলত প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে এ ২টি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এটাই যথেষ্ট’।
জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূরা আল-বাকারাকে আল্লাহ এমন ২টি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে, স্ত্রীদেরও শেখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায় ও (দীন দুনিয়ার সব) কল্যাণ লাভের দোয়া’। (মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৩)
আবু মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত ২টি তেলাওয়াত করবে, তার জন্য এ আয়াত ২টিই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাতে কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সূরা বাকারার শেষ ২টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট’। (বুখারি: ৪০০৮)
হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘আমার মতে যার সামান্য বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ ২টি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না’। এ আয়াত ২টি নিয়মিত পড়লে বিপদ-আপদ দূরে থাকে, জান্নাতের পথও সুগম হয়।