May 2, 2024, 1:00 am

শীতে কাঁপছে দেশ, বিপর্যস্ত জনজীবন

যমুনা নিউজ বিডি: চলতি বছরের পৌষ মাস থেকেই জেঁকে বসেছে শীত। শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল উত্তরের জনপদ। পর্যায়ক্রমে যা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরের জনপদের পাশাপাশি শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে রাজধানীও। গত কয়েকদিনে সুর্যের দেখা মেলেনি রাজধানী ঢাকার আকাশে। ঢাকার আকাশ ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) ছিল বাংলা মাঘ মাসের ৮ম দিন। সকাল হয়ে বেশ খানিকটা সময় পার হরেও রাজধানীর আকাশে দেখা নেই সূর্যের, দুপুরের দিকে সুর্যের দেখা মিললেও ঠান্ডা কমেনি। সারাদেশে কুয়াশা, ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে আকাশ। শহর কি গ্রাম সর্বত্র হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। এক কথায় শীতে কাঁপছে সারা দেশ।

সোমবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত খোলা থাকলেও সড়কে মানুষের উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। তবে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। তাদের শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে বের হতে হচ্ছে। আর মানবেতর জীবনযাপন করছেন ছিন্নমূল মানুষেরা। খোলা আকাশের নীচে শীতে কষ্ট করছেনে এসব অসহায় মানুষ।

রাজধানীর রমনা পার্ক এলাকায় থাকেন ঝিনুক তারা (ছদ্ম নাম)। বয়স আশির কাছাকাছি। বাড়ি টাঙ্গাইল। এক সময় গ্রামে স্বামী-সংসার ছিল তার। এখন আপন বলতে পৃথিবীতে কেউ নেই। জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক সংগ্রামী নারী।

রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে সিদ্ধেশরী কলেজের সামনে শীতে কাঁপছিলেন এই বৃদ্ধা। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, পেটের জ্বালা, এখন শীতের জ্বালা। এত বেশি শীত, মনে হয় পেটের চেয়ে এখন শীতের জ্বালা বেশি।

এই শীতে ঘরে সাধারণ কম্বলের নিচে থাকা দায়। সেখানে এই বয়সে রাস্তায় টিকে থাকা কঠিন। প্রকৃতির দয়ায়ই হয়তো বেঁচে আছে ঝিনুক তারারা।

নাদের সরদার। বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনিতে। রাজধানীর বাংলামটরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে মনে হয় এমন শীত পড়েনি। হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাপরেও অফিসের কাজে বের হতে হচ্ছে। কি আর করার। তবে সরকারিভাবে দুই একদিন ছুটি দিলে ভাল হতো।

এর আগে সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসানুন স্কুলের সামনে অপেক্ষমাণ অভিভাবক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, সকাল শিফটের ক্লাস শুরু হয় সাড়ে সাতটায়। সকাল বেলা খুব বেশি ঠান্ডা থাকে। বাচ্চাদের খুব কষ্ট হয়। স্কুল বন্ধ থাকলেই মনে হয় ভাল হতো।

অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই মহাসড়কের দূরপাল্লার যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। রাতের বেলা বন্ধ থাকছে নৌ পথে ফেরি চলাচল। তীব্র শীতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ বছর শীতের প্রকোপ বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

চলতি মাসের শুরু থেকে হাড় কাঁপানো শীতের পর গত দুদিন রোদ উঠে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছিল। কুয়াশার দাপটও তেমন একটা দেখা যায়নি। কিন্তু রোববার (২১ জানুয়ারি) দিনগত রাত থেকে উত্তরের হিমেল বাতাসে ফের জেঁকে বসেছে শীত। ইতোমধ্যে দেশের ২২ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এরমধ্যে চার বিভাগে দেওয়া হয়েছে বৃষ্টির পূর্বাভাস।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এ অবস্থায় সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রাও সামান্য কমবে। ঘন কুয়াশার দাপটও দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। অর্থাৎ সোমবার দিনগত রাত থেকে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।

এ ছাড়া একই সময়ে যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, সোমবার দিন-রাতে তাপমাত্রা প্রায় একইরকম থাকলেও মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৪০ জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD