December 7, 2023, 12:04 am
যমুনা নিউজ বিডিঃ অঢেল টাকা হলেই বিপুল পরিমাণের কৃষিজমির মালিক হওয়ার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুষ্টিমেয় মানুষ সিংহভাগ জমির মালিক হওয়ার সুযোগ পাবে না। ৬০ বিঘার বেশি জমি হলে অতিরিক্ত জমি সরকার বারেজয়াপ্ত করে নেবে। এমন বিধান রেখে প্রণয়ন হচ্ছে ভূমি উন্নয়ন আইন-২০২২। বৃহস্পতিবার আইনটি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভূমি কর উন্নয়ন আইন-২০২২ এবং আরও বেশ কয়েকটি আইন অনুমোদন দেওয়া হয়। ভূমি উন্নয়ন আইন অনুযায়ী পরিবারভিত্তিক কৃষিজমির খাজনা ২৫ বিঘা পর্যন্ত মাফ করা হবে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সচিব বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হওয়ার সুযোগ নেই। ব্যক্তিমালিকানায় একজন ম্যাক্সিমাম ৬০ বিঘা রাখতে পারবে। এর বেশি কেউ রাখতে পারবে না। ৬০ বিঘার বেশি হলে ওটা সিজ করে নিয়ে যাবে সরকার। কিন্তু সে যদি কোনো ইন্ডাস্ট্রি করে কৃষিপণ্যের, যেটা রপ্তানিমুখী তাহলে ৬০ বিঘার সিলিং তার জন্য প্রযোজ্য নয়।’ ভূমি উন্নয়ন আইন, ২০২২ ১৯৮৪ সালের একটি অধ্যাদেশ প্রতিস্থাপন করবে বলে জানান সচিব। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমি সংস্কার আইন-২০২২ এর খসড়ায় ছয়টি অধ্যায়ে ২৬টি ধারা রয়েছে। উপধারা রয়েছে দুই থেকে আড়াইশ। এর মধ্যে কৃষিজমি অর্জন সীমিতকরণ, স্থায়ী সম্পত্তির বেনামি লেনদেন/হস্তান্তর বন্ধ করা, বাস্তুভিটা, বর্গাদার, সায়রাত মহলের বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হওয়ার তথ্য গোপন করলে তাকে অতিরিক্ত জমির মূল্য প্রদান না করেই বাজেয়াপ্ত করা হবে। আর যারা ৬০ বিঘার মালিক হয়ে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত জমির ঘোষণা দেবেন, সরকার সংশ্লিষ্ট মৌজার রেট অনুযায়ী সেই অতিরিক্ত জমি কিনে নেবে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, শতভাগ রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য বা কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি ক্রয় বা অর্জন করা যাবে। কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবার ৬০ বিঘার অধিক কৃষিজমির মালিক হলে তিনি হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য যে কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষিজমি অর্জন করতে পারবেন না বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জনকল্যাণে কোনো সংস্থা অনুমোদন সাপেক্ষে অতিরিক্ত জমি অর্জন করতে পারবেন। চা, কফি, রাবার বা অন্য ফলের বাগানের জন্যও অতিরিক্ত জমি অর্জনের সুযোগ থাকছে। এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ভূমি উন্নয়ন কর আইনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগের একটি অধ্যাদেশকে পরিমার্জন করে নতুন আইন করা হচ্ছে। নতুন আইন পাস হলে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি ও পরিবারভিত্তিক কৃষিজমির পরিমাণ ৮ দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হবে না। তবে জমি ২৫ বিঘার ওপরে থাকলে সব জমির জন্য ট্যাক্স দিতে হবে। ধরেন আমার ২৬ বিঘা জমি আছে, তাহলে পুরো ২৬ বিঘার দিতে হবে। তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে জরিমানা করে আদায় করা হবে। আনোয়ারুল ইসলাম আরও জানান, সরকারি কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, ঈদগাহ, মাঠ, মন্দির, গির্জা বা সর্বসাধারণের প্রার্থনার স্থানকে ভূমি উন্নয়ন করের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কবরস্থানের ক্ষেত্রে ট্যাক্স দিতে হবে। কারণ পারিবারিক কবরস্থানের রেকর্ড ব্যক্তিনামে থাকে। এলাকাবাসী মিলে মসজিদের পাশে যে কবরস্থান করে সেটি মসজিদের নামে হওয়ায় কর দিতে হয় না।