October 3, 2023, 2:56 pm
যমুনা নিউজ বিডিঃ রেস্টুরেন্টে গেলে অনেকের মেনু কার্ডের প্রথম অর্ডার থাকে ‘পাস্তা’। এই খাবারটি এতটাই সুস্বাদু যে, অল্প ক’দিনেই বিশে^র নানা দেশে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এমনকি পাস্তার জন্য আছে আলাদা রেস্টুরেন্টও। আছে নানা নাম ও স্বাদের পাস্তা।
তবে আপনি জানেন কি এর ইতিহাস?
বিশ্বের অন্যতম ভ্রমণকারী মার্কো পোলো চতুর্দশ শতাব্দীতে চীন ভ্রমণের সময় পাস্তা আবিষ্কার করেন। সেখানে ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকেই পাস্তা খাওয়ার চল রয়েছে। মার্কো তার লেখায় একটি গাছের কথা উল্লেখ করেছিলেন যা থেকে পাস্তা তৈরি করত চীনারা। যেটি এখন আমদের কাছে সাবু দানা হিসেবে পরিচিত।
পাস্তা ইতালির জনপ্রিয় খাবার হলেও এর জন্ম চীনে। তবে একথা অনেক গবেষক স্বীকার করতে চান না। কারণ চীনের আর ইতালির পাস্তার মধ্যে বেশ অনেকটাই তফাত রয়েছে। চীনে পাস্তা বলতে নুডুলসকে বোঝানো হয়েছে। সেখানে তারা বেশিরভাগ সময় ভাত দিয়ে বা চালের গুঁড়া থেকে নুডুলস বা পাস্তা তৈরি করে। আর ইতালিয়ান পাস্তা তৈরি হয় গমের আটা, ডিম আর দুধ দিয়ে।
অনুমান করা হয় ইতালিয়ানরা বছরে গড়ে ষাট পাউন্ড পাস্তা খেয়ে থাকে। তারা পাস্তা রান্না করতে বিভিন্ন সসের সঙ্গে ভেড়া এবং শূকরের মাংস ব্যবহার করে। মাঝে মাঝে সবজিও ব্যবহার করে থাকে পাস্তায়। ইতালির পরেই আমেরিকায় পাস্তার জনপ্রিয়তা সবথেকে বেশি। তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সারাবিশ্বে পাস্তার চাহিদা মেটাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবেও বেশ অর্জন হচ্ছে তাদের এই খাতে।
নোক্রাটিস-এর গ্রীক কথাসাহিত্যিক অ্যাথেনিয়াস লাগনার প্রথম শতাব্দীতে পাস্তার একটি রেসিপি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ময়দার সঙ্গে লেটুস পাতার গুঁড়া,বিভিন্ন মশলা এবং জলপাই তেল ব্যবহার করেছিলেন। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেনের রচনায় পাওয়া যায় পাস্তা তৈরির পদ্ধতি। সেখানে তিনি ময়দা আর পানি তৈরি একধরনের পাস্তার কথা লিখেছিলেন।
খাদ্য ইতিহাসবিদরা মনে করেন ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মধ্যযুগের বৃহত্তর ভূমধ্যসাগরীয় ব্যবসায়ের মাধ্যমে ইতালিতে পাস্তার আগমন। সেসময় থেকে ষোড়শ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ধীরে ধীরে এর প্রচলন শুরু হয়। এরপর এটি ইতালিয়ানদের প্রধান খাবারে পরিণত হয়। দক্ষিণ ইতালীয়দের মতে অষ্টম শতাব্দীতে আরব অঞ্চল থেকে সেখানে অনেক মানুষ আসে। তাদের মাধ্যমেই নাকি এদেশে এসেছিল পাস্তা।
বর্তমানে আমরা যে ম্যাকারোনি খাই তা এসেছে সিসিলিয়ান থেকে। সেসময় সিসিলিয়ায় গম উৎপাদন হতো অনেক বেশি। অন্যান্য ফসল ভালো না হওয়ায় তারা ময়দাকে খাবারের মূল উপকরণ হিসেবে বেছে নেয়। ময়দার সঙ্গে ডিম আর পানি মশিয়ে ডো তৈরি করে প্রথমে। তারপর লম্বা করে কেটে সিদ্ধ করে টমেটো সস, মাংস দিয়ে রান্না করে খেত। যদিও সেসময় সিসিলিয়ানরা পাস্তায় বাদাম, কিসমিস, দারুচিনি ব্যবহার করত।
বিংশ শতাব্দীতে এসে আমেরিকানরা পাস্তার সঙ্গে পরিচিত হয়। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বেশ চড়া দামে বিক্রি হতে থাকে পাস্তার নানা পদ। ১৯৩৫ সালে পাস্তার প্রথম বিজ্ঞাপন বের হয়। ইতালিয়ানরা এখনো টাটকা পাস্তা খেতে পছন্দ করে। তবে ব্যস্ত জীবনকে সহজ করতে এবং বাণিজ্য করতে পাস্তা প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত করা হয়। সেসময় পাস্তা তৈরি করে কাঠের লম্বা লম্বা তারে শুকানো হত। এরপর প্যাকেটে ভরে বিক্রি জন্য প্রস্তুত করা হত।
সূত্র: লাইফইনইতালি