March 29, 2024, 1:15 pm

বেঁচে গেলেন মরিনহো, ওয়েঙ্গারেরও স্বস্তি

বড় বাঁচা বেঁচে গেলেন হোসে মরিনহো। পোর্তোর সঙ্গে বাঁচা-মরার লড়াইয়ের ম্যাচটা জিতে জায়গা করে নিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে। হেরে গেলে কী জবাব দিতেন রাফায়েল বেনিতেজকে?

একটু চমকেই যাওয়ার কথা। ম্যাচ চেলসি-পোর্তোর, তাতে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ বেনিতেজের কথা আসছে কেন? আসছে ‘শত্রু’র উদ্দেশে মরিনহোর স্বভাবসুলভ এক খোঁচার কারণে। বছর দুয়েক আগে বেনিতেজ যখন চেলসির কোচ ছিলেন, মরিনহো ছিলেন রিয়ালে। বেনিতেজ চেলসিকে সেই মৌসুমে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতিয়েছিলেন দেখে মরিনহো একটু খোঁচা মেরে বলেছিলেন— ‘এটা আবার কোনো প্রতিযোগিতা হলো!’

সময়ের আবর্তনে বেনিতেজ-মরিনহোর ভূমিকা বদলে গেছে। বেনিতেজ রিয়ালে, মরিনহো এখন চেলসিতে। মজার ব্যাপার, আর একটু হলেই বেনিতেজেরও সুযোগ থাকত মরিনহোকে খোঁচাটা ফিরিয়ে দেওয়ার। কাল চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোর্তোর সঙ্গে হেরে গেলেই যে চেলসিকে খেলতে হতো ইউরোপা লিগে। মরিনহোর সৌভাগ্য, অমনটা হয়নি। ঘরের মাঠে পোর্তোকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে উঠে গেছে চেলসি।

পোর্তোর বিপক্ষে এই জয়ের কৃতিত্ব চলতি মৌসুমে চেলসির সর্বোচ্চ দুই গোলদাতার— উইলিয়ান ও ‘আত্মঘাতী গোল!’ চমকানোর কিছু নেই। মৌসুমে এখন পর্যন্ত চেলসির হয়ে সর্বোচ্চ গোল উইলিয়ানের (৬টি)। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ গোল এসেছে প্রতিপক্ষের বদান্যতায়। মৌসুমে কেন চেলসি ভালো করতে পারছে না, ব্যাপারটা কিন্তু এখান থেকেও খানিকটা আঁচ করা যেতে পারে।

মরিনহো তাঁর উদ্‌যাপনে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন আরেক ‘শত্রু’ আর্সেন ওয়েঙ্গারকে। আর্সেনালের জন্যও কালকের ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার। তাতে অলিভিয়ের জিরুর হ্যাটট্রিকে অলিম্পিয়াকোসের মাঠে ৩-০ গোলে জিতেছে গানাররা।

গতকাল ম্যাচের আগে সমীকরণটা ছিল চেলসির পক্ষেই। ড্র করলেই হবে। তবু মরিনহোর চাকরি বাঁচাতে একটা জয় বেশ দরকার ছিল। জয়টা যে চেলসি পেল, তার জন্য ভাগ্যকে বড় একটা ধন্যবাদ দিতে পারেন পর্তুগিজ কোচ। ম্যাচের ১২ মিনিটে যে গোলটিতে চেলসি এগিয়ে গিয়েছিল চেলসি, তাতে নিজেদের চেয়ে ভাগ্যের অবদানটাই যে বেশি। ডিয়েগো কস্তার শটটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পোর্তো গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস। কিন্তু ফিরে আসা বলটি গোলপোস্টের দিকে দৌড়াতে থাকা পোর্তো ডিফেন্ডার ইভান মারকানোর গায়ে লেগে ঢুকে যায় জালে। দ্বিতীয়ার্ধের সাত মিনিটে দুর্দান্ত খেলতে থাকা এডেন হ্যাজার্ডের থ্রু ধরে পেনাল্টি বক্সের প্রান্ত থেকে নিচু শটে গোল করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার উইলিয়ান। মজার ব্যাপার, এই মৌসুমে ফ্রি কিক বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা উইলিয়ানের এটি ‘ওপেন প্লে’ থেকে প্রথম গোল। এর আগের বাকি ছয়টি গোলই এসেছে ফ্রি কিক থেকে।

কেবল ভাগ্যকে কৃতিত্ব দিলে অবশ্য চেলসিকে খাটোই করা হবে। কাল অনেক দিন পর মরিনহোর দলটা কিন্তু যথেষ্ট ভালো খেলেছে। ঠিক যেন গেল মৌসুমের মতো। শেষ ১৫ মিনিটে তো বেশ কয়েকবারই গোলের কাছাকাছি গিয়েছিল চেলসি। মৌসুমে এখনো গোল না পাওয়া হ্যাজার্ডের একটি শট ফিরে এসেছে পোস্টে লেগে। না হলে জয়টা আরও বড়ই হতে পারত।

জয় আর চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোই স্বস্তি মরিনহোর। আপাতত বেঁচে গেলেন বরখাস্ত হওয়ার হাত থেকে। কাল স্টেডিয়ামে ছিলেন চেলসি মালিক রোমান আব্রামোভিচও। গুঞ্জন ছিল, রুশ এই ধনকুবেরের সবচেয়ে ‘প্রিয়’ প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়লে চাকরি চলে যাবে মরিনহোর। এ যাত্রা তো বেঁচে গেলেন, কিন্তু মরিনহো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী? নিজের দলকে ‘আন্ডারডগ’ ঘোষণা করে চেলসি কোচ অবশ্য হাবেভাবে জানিয়েও দিলেন শিরোপার আশা আছে তাঁরও, ‘আমাদের মতো দল, যারা রীতিমতো ধুঁকছে, তারা কখনোই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফেবারিট হতে পারে না। তবে ২০০৪-এ পোর্তোতে যখন জিতেছিলাম, আমরা ফেবারিট ছিলাম না। ২০১০-এ ইন্টার মিলানে যখন জিতেছিলাম, তখনো আমরা ফেবারিট ছিলাম না।’

পরের রাউন্ডে চেলসির প্রতিপক্ষ হতে পারে পিএসজি, রোমা, জুভেন্টাস, বেনফিকার মতো দলগুলো। কাকে চান পরের রাউন্ডে, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের দিকে ইঙ্গিত করে মরিনহোর মজার উত্তর, ‘আমাদের সঙ্গেই সবাই খেলতে চাইবে। কেউ বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো কিংবা বায়ার্নের সঙ্গে খেলতে চাইবে না। যারাই দ্বিতীয় হয়েছে, সবাই চেলসিকেই চাইবে।’

চেলসির সঙ্গে লন্ডনের অন্য ক্লাব আর্সেনালও কাল চলে গেছে শেষ ষোলোতে। তাদের সমীকরণটা অবশ্য অনেক কঠিনই ছিল। অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হতো, আর্সেনাল জিতল তিন গোলের ব্যবধানে। এ নিয়ে টানা ১৬ বার চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্ব থেকে সফলভাবে উতরে গেল আর্সেন ওয়েঙ্গারের দল।
ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট একটু অগোছালো ছিল আর্সেনাল। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ফিরে আসে খেলায়। ২৯ মিনিটে জিরুর গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় তারা। দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে শঙ্কা ছিল, কিন্তু সেই শঙ্কাটা মুছে গেল বিরতির চার মিনিট পরই। উইংয়ে তরুণ জোয়েল ক্যাম্পবেলের দুর্দান্ত টাচ ও ড্রিবলিংয়ের পর থালায় সাজানো পাস পেয়ে গোল করতে কোনো সমস্যাই হয়নি জিরুর। ১৮ মিনিট পর পেনাল্টি থেকে দলের ও নিজের তৃতীয় গোলটি করে সব অনিশ্চয়তা মুছে দেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। দলের এমন জয়ে খুশি কোচ ওয়েঙ্গার এমন পারফরম্যান্সকে বলেছেন ‘নিখুঁত।’

গ্রুপের অন্য ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখ ২-০ গোলে হারিয়েছে ডায়নামো জাগরেবকে। বায়ার্নের হয়ে গোল কে করেছেন এটি অনুমান করা এখন দুনিয়ায় সবচেয়ে সহজ কাজগুলোর মধ্যে একটি— রবার্ট লেভানডফস্কি। দ্বিতীয়ার্ধে দুই মিনিটে দুই গোল করে দলকে সহজ জয় এনে দেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার। চ্যাম্পিয়নস লিগে এ নিয়ে ৬ ম্যাচে ৭ গোল হলো লেভার।

এদিকে ভ্যালেন্সিয়ার কোচ হিসেবে অভিষেকটা ভালো হলো না গ্যারি নেভিলের। জিতলে পরের রাউন্ডে— এমন ম্যাচে অলিম্পিক লিওঁর কাছে ২-০ গোলে হেরে গেছে ভ্যালেন্সিয়া। তথ্যসূত্র: বিবিসি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD