April 24, 2024, 7:55 am

সীমান্তে গোলা, পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের দুঃখ প্রকাশ

যমুনা নিউজ বিডিঃ দুই মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংস ঘটনায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে বিজিপিকে বলা হয়। অন্যদিকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে টেকনাফ ২ নম্বর বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, ‘পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশ-মিয়ানমারে সীমান্ত এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাড়াও অবৈধভাবে মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচাররোধ সম্পর্কে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ আস্থা এবং নির্ভরতার পরিবেশ তৈরির জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।’

শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার আরও বলেন, ‘গত দুইমাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান ঘটনায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টার উড্ডয়ন, সীমান্ত এলাকায় ক্ষুদ্রাস্ত্র এবং ভারী অস্ত্রের ফায়ারিং, জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে চলমান সংঘাতের জের ধরে যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনও গোলা না পড়ে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে বিজিপিকে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে বিজিবি আশা করে যে মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংকট শিগগিরই সমাধান হবে এবং সীমান্তে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। বৈঠকে বিজিপি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ, কক্সবজারের গ্রুপ কমান্ডার লে. কর্নেল আহমদ তারিক কবির, অপস অফিসার মেজর মুতাসিম শাকিল বিল্লাহ। এর আগে, সকাল সাড়ে ৯টায় নাফনদ সংলগ্ন সীমান্তে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির নির্মিত সাউদার্ন পয়েন্ট রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে দু’দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমার থেকে দুটি স্পিডবোটে করে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে পৌঁছায়। পরে সকাল ১০টায় পতাকা বৈঠক শুরু হয়। এতে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এবং মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাও না ইয়ান শো’র নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

সীমান্তে উত্তেজনার রেশ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও রাখাইন প্রদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ। গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমারে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। তবে বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া আরও দুটি মর্টার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। একইদিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর আবারও বাংলাদেশে অভ্যন্তরে এসে পড়ে কয়েকটি মর্টার শেল। যার মধ্যে শূণ্যরেখায় একটি মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়ে মারা যান এক রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আহত হয় আরও ৬ জন। তুমব্রু সীমান্তে বন্ধ হতেই নতুন করে উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত ও টেকনাফ সীমান্তে শুরু হয় গোলাগুলি। সবশেষ গত ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। দুইদিন চলার পর এখন পর্যন্ত আর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD