April 20, 2024, 2:08 pm

সুরা ফাতিহার গুরুত্ব-বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

যমুনা নিউজ বিডিঃ পবিত্র কোরআনের সারমর্ম বা সারসংক্ষেপ সুরা ফাতিহা। এটি কোরআন মজিদের প্রথম ও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সুরা। ‘ফাতিহা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ভূমিকা, প্রারম্ভিকা। সুরা ফাতিহাকে উম্মুল কোরআন বলা হয়। উম্মুল-এর আভিধানিক অর্থ ‘মা’ বা ‘জননী’। সুরাটির উল্লেখযোগ্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাতিহাতুল কিতাব, ফাতিহাতুল কোরআন, উম্মুল কিতাব, উম্মুল কোরআন, আসাসুল কোরআন, সাবউল মাসানি ইত্যাদি।

আল্লাহর কাছে সুরাটি এতটাই প্রিয় যে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য এই সুরা পড়া ফরজ করে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেল। মিশকাত: ৮২৩

সুরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য

১. এই সুরা পবিত্র কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সুরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কোরআন কোনো কিতাবে এই সুরার তুলনীয় কোনো সুরা নেই। (বুখারি, মেশকাত: ২১৪২)

২. সুরা ফাতিহা এবং সুরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নুর, যা ইতোপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (সহিহ মুসলিম: ৮০৬)

৩. যে ব্যক্তি নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসুলুল্লাহ (স.) এ কথাটি তিনবার বললেন। (মেশকাত: ৮২৩)

৪. আবু সায়িদ খুদরী (রা.) বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (সহিহ বুখারি: ৫৪০৫)

অর্থের দিক থেকে সুরা ফাতিহার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এই সুরার সাতটি আয়াতের মধ্যে প্রথম তিনটি আয়াতে আমরা পাই আল্লাহর পরিচয়। আর শেষ তিন আয়াতে আমরা পাই আল্লাহর কাছে আমাদের চাওয়া। সুরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘উম্মুল কোরআন’।

পবিত্র কোরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহিদ, আহকাম ও নসিহত। সুরা ইখলাসে ‘তাওহিদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সুরা ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কোরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভ করেছে। (তাফসিরে কুরতুবি: ১৪৮)

সুরা ফাতিহার ফজিলত

১. উবাই ইবনু কাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ উম্মুল কোরআনের মতো তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাজিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাবউল মাসানি’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসায়ি: ৩১৯)

২. আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা সুরা ফাতিহা পড়ো। কোনো বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতায়ীন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। (মুসলিম: ৩৯৫)

৩) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আ.) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনোদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সুরা ফাতিহা এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। (মুসলিম: ৮০৬)

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD