March 19, 2024, 3:17 am
ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহন করে খসড়া “প্রস্তাবিত থ্রী-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রন নীতিমালা-২০২১’র” দ্রæত চূড়ান্ত ও কার্যকর করাসহ ৬ দফা দাবিতে-কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশহিসাবে ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে আজ-০৫ জুলাই ২০২২, মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক, বগুড়া এর মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয় এবং স্মারকলিপি পেশের পূর্বে সাতমাথায় মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন-সমাবেশে সভাপতিত্ব করেণ সংগ্রাম পরিষদ বগুড়া জেলা সংগঠক মাসুদ পারভেজ, মানববন্ধন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু, বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাড. দিলরুবা নূরী, সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সুকুমার দাস, সুমন, জাহিদুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশ শেষে সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধি টিম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বরাবর স্মরকলিপি পেশ করে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সড়কে চলাচলের সুযোগ দেয়ার নামে এই সব ব্যাটারি চালিত যানবাহনের চালক মালিকদের কাছ থেকে নানা ভাবে বিভিন্ন হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। স্টিকার লাগিয়ে হাজার হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে, আবার লাইসেন্স দেয়ার নামে দরিদ্র চালকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। এতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তপনা উৎসাহিত হচ্ছে এবং রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে ট্যাক্স ও রাজস্ব থেকে। কোথাও আবার এ সব বাহন পুলিশের পক্ষ থেকে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং জব্দ বা ডাম্পিং করা হচ্ছে। ফলে যেমন কষ্টার্জিত জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি দরিদ্র চালক মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা অসহায় হয়ে পড়েছে। আমরা তাই আপনার কাছে এর সুষ্ঠু প্রতিকার প্রত্যাশা করি। আমরা আশা করি আপনি ব্যাটারি চালিত যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, আধুনিকায়ন ও নীতিমালা চুড়ান্তকরন ও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। আমরা মনেকরি, সরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিবন্ধন, রুট পারমিট ও লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা চালুহলে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এর ফলে সরকার পাবে রাজস্ব, সড়কে আসবে শৃঙ্খলা আর চালক মালিকরা পাবে স্বস্তি। যার সামগ্রিক ফলাফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে, দুর্নীতির পথ বন্ধ হবে।
অ্যাড. দিলরুবা নূরী বলেন,‘বগুড়ায় ব্যাটারী চালিত যানবাহন নিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মেয়র যৌথভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বগুড়ার প্রায় ৩০ হাজার রিক্সা শ্রমিকের কর্ম কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যখন কিনা আদালত হাইওয়ে ছাড়া সর্বোত্র ব্যাটারীচালিত যানবাহন চলাচলের বিষয়ে মতামত দিয়েছে। বগুড়াতে ৩০ হাজার ব্যাটারীচালিত যানবাহরে বিপরীতে মাত্র ২ হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে, সেইসাথে শহরে টাউন সার্ভিস, মিনি বাস চালুর কথাও তারা বলছেন। বাকী রিক্সাগুলোকে আর শহরে ঢুকতে দেওয়া হবে না আগামী ০১ আগস্ট থেকে। প্রশ্ন হলো এই সিদ্ধান্ত তারা কেন নিল? সেটা কি এই টাউন সার্ভিস আর মিনিবাসের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার জন্য? অন্যদিকে কার্যকর করার আগে এই শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা কি করেছেন? সেইসাথে এতদিন যারা রিক্সা চালকদের কাছে জোরপূর্বক চাঁদা তুলর আজ সেই চাঁদাবাজদের লোক দিয়ে সে¦চ্ছাসেবক নাম দিয়ে ট্রাফিকের কাজ করাচ্ছেন। তাহলে প্রশাসন কি চাঁদাবাজদে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব নিয়েছেন?’ তিনি প্রশাসনকে অবিলম্বে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আইন প্রণয়ন করে বিআরটিএর মাধ্যমে ব্যাটারী চালিত যানবাহনগুলো লাইসেন্স দেয়ার দাবি জানান।
মানববন্ধন-সমাবেশে অন্যন্য নেতৃবৃন্দ বলেন: আমরা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গত ১০ বছর ধরে একটি নীতিমালা প্রনয়ন করে ব্যাটারি চালিত যান বাহনের আধুনিকায়ন, লাইসেন্স প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে ধারাবাহিক ও সু-শৃঙ্খল আন্দোলন পরিচালনা করে আসছি। নীতিমালা চুডান্ত ও কার্যকর করার পদক্ষেপের পাশাপাশি সংগ্রাম পরিষদের বাকি দাবি গুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান।
৬ দফা দাবি সমূহঃÑ
১. সংগ্রাম পরিষদের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহন করে খসড়া “প্রস্তাবিত থ্রী-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রন নীতিমালা-২০২১’র” দ্রæত চূড়ান্ত ও কার্যকর করতে হবে।
২. প্রস্তাবিত থ্রী-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রন নীতিমালা-২০২১’র আলোকে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশার দ্রæত নিবন্ধন, রুট পারমিট এবং লাইসেন্স প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যটারিচালিত যানবাহন আধুনিকায়ন করে লাইসেন্স প্রদানে বাঁধা প্রদানকারী তিন ও চারচাকার ভিন্ন মডেলের গাড়ী ব্যবসায়িদের চক্রান্ত রুখে দাঁড়ান।
৪. ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১ এ ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যটারি চালিত যানবাহনকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৫. চালক, মেকানিক, ক্ষুদে মালিক, গ্যারেজ মালিকসহ আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত ৫০ লাখ মানুষ ও তাদের উপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষা করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা বা কর্মসংস্থান ছাড়া রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজি বাইক উচ্ছেদ করা চলবেনা।
৬. প্রতিটি সড়ক মহাসড়কে স্বল্প গতির যান বাহনের জন্য পৃথক লেন ও সার্ভিস রোড নির্মাণ ও অবৈধ রেকারিং, ডাম্পিং, নির্যাতন, হয়রানি, ব্যাটারি ছিনতাই ও চাঁদা বাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।