October 11, 2024, 4:57 am
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : দেশের উত্তরের খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ধান ও চাল উৎপাদনের পাশাপাশি আম উৎপাদনেও এগিয়ে চলেছে নওগাঁ। এ জেলার ধান, চাল ও নানা জাতের সবজি চাষে সমৃদ্ধশীল। প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে কৃষিজাত নানা পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। গত ৬বছর থেকে জেলায় প্রচুর পরিমাণে আমের আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে নওগাঁ জেলা। এ জেলার আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে আমের ভরা মৌসুমে আম সংরণের ব্যবস্থা না থাকায় আম চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। সরকারি ভাবে জেলায় আম সংরণাগার বা হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন জেলার আম চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর বেশি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্টিক টন। উৎপাদনের ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্টিক টন। গোপাল ভোগ, হিমসাগর, আ¤্রপালী, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজিকিসহ দেশী বিদেশী বিভিন্ন জাতের আম চাষ হচ্ছে। এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। সেই অনুযায়ী ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।]
নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পতœীতলা উপজেলার কিছু অংশ ঠা ঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। পানি স্বল্পতার কারণে অন্যান্য ফসল চাষ করে লোকশান গুনতে হতো। যার কারনে এসব জমিতে ধান চাষ কমিয়ে বর্তমানে ওই অঞ্চলগুলোর প্রান্তিক চাষিরা আম চাষে ঝুঁকছেন। আম চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে এর আবাদ। জেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয় সাপাহার ও পোরশা উপজেলায়।
এসব এলাকার আম চাষিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমের ভালো দাম থাকে মৌসুমের প্রথম ও শেষের দিকে। কিন্তু মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে আমের বাজার পড়ে যায়। তখন দাম অনেক কম থাকে। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় ও জেলায় সর্ববৃহৎ আমের বাজার বসে সাপাহার উপজেলায়। যার ফলে পার্শ্ববর্তী ধামইরহাট, পতœীতলা, পোরশা এমনকি রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অনেক ব্যবসায়ী আম বিক্রয় করতে আসেন এই বাজারে। যার ফলে অতি পরিমাণ আম হবার ফলে বাজার দর কমে যায়। এছাড়াও উৎপাদিত আমের সংরণাগার ও বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীরা লাভের বড় অংশ লোফে নেন। তাই জেলায় আম সংরণাগার করা হলে আম সংরণ করে পরবর্তী সময়ে বিক্রি করলে অধিক পরিমাণ লাভ হবেন তারা। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত ২৫মে থেকে গুটি জাতের আম নামানো মধ্যে দিয়ে জেলায় আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাতের জাতের আম নামানো হবে।
জেলার পত্নীতলা উপজেলার আম চাষী রানা হোসেন বলেন, আম নামানো শুরু হয়েছে ২৫মে থেকে। প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। শুরু ও শেষের দিকে আমের দাম ভালো পাওয়া যায়। সরকারি বা বেসরকারি ভাবে জেলায় কোন হিমাগার নেই। আম সংরক্ষণের জন্য যদি একটি হিমাগার থাকতো, তবে সেখানে আম সংরক্ষণ করে সুবিধামত সময়ে বিক্রি করা গেলে লাভবান হওয়া যেত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, নওগাঁয় প্রচুর পরিমানে আমের আবাদ হচ্ছে এবং প্রতি বছর আমের বাগান সম্প্রসারিতও হচ্ছে। চলতি মৌসুমেও আমের ব্যাপক চাষ হয়েছে। যদি হিমাগার স্থাপন করা যায়, তাহলে জেলার আম সংরণ করে চাষিরা আম সংরক্ষণ করতে পারবেন। তার পর কিছুদিন আম হিমাগারে রেখে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন। একটি হিমাগার খুবই প্রয়োজন জেলায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কৃষি অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলায় আম সংরণাগার বা হিমাগার স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করবো।
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, নওগাঁর আম দেশ ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। আম চাষীদের সব ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ আমরা দিয়ে যাচ্ছি। চাষীদের উৎপাদিত আম সংরণের জন্য একটি আম সংরণাগারের প্রয়োজন। জেলার কৃষি বিভাগের সাথে আলোচনা করে আগামীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।