April 16, 2024, 9:19 pm

ঈদ উল আযহা উপলক্ষে শিবগঞ্জে ব্যস্ত সময় কামার শিল্পের কারিগররা

সাজু মিয়া শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। আর মাত্র ৫দিন পরেই কোরবানি ঈদ। এই ঈদের অন্যতম কাজ হচ্ছে পশু কোরবানি করা। ঈদ-উল আযহা সামনে রেখে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিবগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর, বানাইল, আচলাই, সংসারদিঘী, কালিপাড়া, পিরব এলাকার কামার শিল্পের কারিগররা। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন সব ধারালো সামগ্রী। তবে এসব তৈরিতে এখনো আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। পুরানো সেকালের নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া।

তবে দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা বেশি এবং ঈদের এখনও বেশ কিছুদিন বাকি থাকায় জমে উঠেনি বটি দা, কাচি, কোপা দা, ছুরি, চাপাতির বেচাকেনা। ফলে এই মুহুর্তে অলস সময় পার করছে ব্যবসায়ীরা।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম হচ্ছে ঈদুল আযহা। আর এই ঈদে মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রাজি খুশি করতে সুন্দর, সুন্দর পশু জবাই করে থাকে। এই পশু জবাইয়ের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি। মাংস কাটা এবং কোরবানির পশু জবাই করার বিভিন্ন ধাপে ছুরি, দা, চাপাতি এসব ব্যবহার করা হয়। ঈদের বাকি আরও ৫দিন। তাই পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে কামারের দোকান অনেকটাই ব্যস্ত সময় পার করছে।
দগদগে আগুনে গরম লোহায় ওস্তাদ-সাগরেদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামারের দোকান। প্রস্তুত করছেন জবাই সামগ্রী। ঈদে শত শত গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি পশু কোরবানি করা হয়ে থাকে। এসব পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুত পর্যন্ত দা-বঁটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার আবশ্যকীয় হয়ে যায়। ঈদের আগেই পশু জবাই করার ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি, চাপাতি, প্লাস্টিক ম্যাট, চাটাই, গাছের গুঁড়ি সহ সবকিছু প্রস্তুতি রাখতে হয়।
দেশি চাপাতিগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ওজনের চাপাতির দাম ৫ শত টাকা থেকে ৬ শত টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিদেশি চাপাতির দাম ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ী বিবারণ কর্মকার, প্রদীপ কামার, মিলন কর্মকার ও দ্বিপক কর্মকার জানান, সারাবছর বেচাকেনা কিছুটা কম থাকে। কোনোরকম দিন যায়। এই সময়ের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি আমরা। কোরবানির ঈদের আগে এক সপ্তাহ ভালো বেচাকেনা হয়। ওই সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। লোহার তৈরি ছোট ছুরি ৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জবাই ছুরি মিলছে ৬০০-৭০০ টাকায়। এছাড়া বিভিন্ন সাইজের চাপাতি ৫০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। দা-বটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। ঈদের গরুর বাজার এখনো ভালোভাবে শুরু না হওয়া কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। আগে মানুষ গরু কিনবে পরে ছুরি-চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কিনবে।
কবে থেকে পুরোদমে বেচা কেনা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ‘ঈদের ৩/৪দিন আগে থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে এবছর অন্যান্য বছরের চেয়ে বেচাকেনা ভালো হবে বলে আশা করেন তারা। ঈদের বেচাকেনা এখনো মুরু হয়নি। আরও পরে শুরু হবে। তবে আমরা এখন বানিয়ে রাখতেছি পরে শুধু বিক্রি করব। সারা বছর কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদের এ সময় টা বারবারই ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের।’
বানাইল গ্রামের কামার ব্যবসায়ী প্রদীপ কর্মকার জানায়, ‘এ পেশায় অধিক শ্রম, জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে আমরা এখনও আঁকড়ে ধরে আছি। বিভিন্ন সময় এসবের চাহিদা কম থাকলেও কুরবানির পশুর জন্য বেশি প্রয়োজন হওয়ায় সকলেই আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। এই ঈদ মৌসুম ছাড়াও সারা বছর কাস্তে, কুড়ালও তৈরি করে সময় কাটে আমাদের।’
শিবগঞ্জ উপজেলার ধামাহার গ্রামের আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন ক্রেতা জানান, কোরবানির ঈদের আর কয়েক দিন বাকি তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলতেছি আমরা। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকুর দাম একটু বেশি বলে জানান তিনি। লোহার পাশাপাশি স্টিলের ছুরি চাকুও বিক্রি হয় অনেকাংশে বেশী।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD