December 3, 2023, 7:17 am
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ছয় জেএমবি সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই হত্যাকাণ্ডে দায়েরকৃত বিস্ফোরক মামলায় তাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নান এ রায় ঘোষণা করেন। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, ২০১৬ সালে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই রায় দেন বিচারক।
দণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্যরা হলেন রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, গোলাম রব্বানী, হাসান ফিরোজ ওরফে মোখলেছ, মাহাবুব হাসান মিলন ওরফে হাসান ও আবু নাসের ওরফে রুবেল। তাদের মধ্যে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী পলাতক রয়েছে। বাকি পাঁচ আসামির উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। পলাতক রিয়াজুলকে গ্রেফতারের পর থেকে সাজা কার্যকরের আদেশ দেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় দশ জেএমবি সদস্যকে আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু চার্জশিট দাখিলের আগেই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন আসামি এবং চার্জশিট দাখিলের পর আরও এক আসামি নিহত হলে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাকি ছয় জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর, রিয়াজুল ও গোলাম রব্বানীর নামে হত্যা মামলার পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, উভয় মামলার আসামিদের মধ্যে রিয়াজুল পলাতক রয়েছে। অপর পাঁচ আসামি বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়ে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে বন্দি ছিল। তাদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়।
এদিকে রায় ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীর একমাত্র ছেলে ও মামলার বাদী রুহুল আমিন আজাদ। তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পর হলেও মামলার রায় ঘোষণায় আমরা খুশি। আমরা চাই দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হোক।
পিপি এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অপপ্রয়াসে এই খুন করা হয়েছে। এটি কোনও সাধারণ হত্যা নয়। একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ হত্যা করা হয়েছে। আসামিরা আদালতে দেওয়া তাদের জবানবন্দিতে সেটি স্বীকারও করেছে।
এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পরপরই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় দণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্যদের কারাগারে পাঠানো হয়।
২০১৬ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের কৃষ্ণপুর গাড়িয়াল পাড়ার কাছে গড়ের পার এলাকায় প্রাতভ্রমণে বের হন ঐ এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী। সকাল পৌনে ৭টার দিকে ঐ এলাকার আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরে পাকা রাস্তার ওপর তাকে কুপিয়ে হত্যা করে জেএমবি সদস্যরা। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের আটকের চেষ্টা করলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হত্যাকারীরা। ঐ দিনই অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের আসামি করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা করেন নিহত মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র ছেলে রুহুল আমিন আজাদ।