April 19, 2024, 11:50 pm

রাত পোহালেই কুসিক নির্বাচন, নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা

যমুনা নিউজ বিডিঃ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টায়। নির্বাচন হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। একইসঙ্গে সারা দেশে ১৪১ ইউপি, পাঁচ পৌরসভা ও চার উপজেলায় ভোট হবে। ইতিমধ্যেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি গঠিত নির্বাচন কমিশনের এটাই প্রথম নির্বাচন। নতুন কমিশন গঠিত হলেও নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। আজকের নির্বাচনটি এই কমিশনের জন্য ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমও বটে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। মেয়র পদে ৫ জন, ২৭ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৮ ও সংরতি কাউন্সিলর পদে ৩৬ প্রার্থী এখন ভোটের অপেক্ষায়। এই সিটিতে ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার। এর মধ্যে দেড় লাখ ভোট কাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভোটের দিন হালকা বা মাঝারি ধরনের বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বৃষ্টি হলে কমতে পারে ভোটারের উপস্থিতি।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) ও কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ প্রতীক)। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাধারণ ভোটারদের হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলেছেন সাক্কু ও কায়সার। অপরদিকে নৌকার প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, কিছু প্রার্থী নির্বাচনে কালো টাকা ছড়াচ্ছেন। ২৮ মে থেকে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রচারণার প্রথম থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার। এর মধ্যে ৮ জুন থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। নির্বাচন কমিশন থেকে তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তোয়াক্কা করেননি। সাক্কুর অভিযোগ, এই সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করছেন। নির্বাচনে এর বেশ প্রভাব পড়বে।

এদিকে, প্রচারণার শেষ দিনে গতকাল সোমবার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে হুমকি ধমকি এগুলো থাকবেই। কিন্তু জোর খাটিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে না আসতে দিলে অথবা যদি তাদের কোনোভাবে প্রভাবিত করা হয় তাহলে ভোটের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু ইসি এক চিঠি দিয়েই চুপ। এরপরও বিশ্বাস করি, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। আর নির্বাচন নির্বাচনের মতো হলে আমাকেই জনগণ ভোট দেবেন।’

প্রচারণার শেষ দিন গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বহিরাগতদের আনাগোনার বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার। অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আমি মনোনয়নপত্র দেওয়ার পর ২৬ মে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কুমিল্লায় সফরে এলে ভোটারদের ও জনমনে শঙ্কার কথা উল্লেখ করেছিলাম। নির্বাচনি প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসে ল্য করছি, নির্বাচনি এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে। অলি-গলিতে ক্যাডাররা মহড়া দিচ্ছে। বিভিন্ন হত্যা মামলার চিহ্নিত আসামিরাও প্রকাশ্যে আসছে। এতে ভোটারদের মাঝে ভয় ও শঙ্কা বাড়ছে। যদি ভোটারদের কেন্দ্র যেতে কোনও বাধা দেওয়া হয় বা ভোটারদের মনে আতঙ্ক তৈরি করা হয় অথবা কোনও কারণে ভোটার উপস্থিতি না হয় তাহলে ভোটের ফলাফল হবে ভিন্ন। যা মোটেও জনগণের পে হবে না। তাই ভোটারদের কেন্দ্রে আনার নিরাপত্তা দিতে হবে।’ প্রচারের শেষ দিন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘কিছু লোক কালো টাকা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আশা করি, ১৫ তারিখ কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। এ ছাড়াও যারা ঝামেলা করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছে- আমি বলবো তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কুমিল্লার মানুষ নৌকা প্রতীকের ওপর আস্থা রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, বিজয় মিছিল আমরাই দেবো।’

গতকাল সোমবার কুমিল্লায় আসেন নির্বাচন কুমিশনার আহসান হাবিব খান ও রাশেদা সুলতানা। রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘যদি ভোটের পরিস্থিতি ভালো না থাকে তাহলে নির্বাচন স্থগিত করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে।’ এমপি বাহারের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার একজন জনপ্রতিনিধি। ওনারা আইন প্রণয়ন করেন। যদি ওনারাই আইন না মানেন তাহলে আর কী বলার! ওনাকে তো আর আমরা টেনে-হিঁচড়ে নামাতে পারি না।’ আহসান হাবিব বলেন, ‘ভোটের পরিস্থিতি ভালোই আছে। কোনও খারাপ ঘটনা এখনও ঘটেনি। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা যা দরকার সবই করা হয়েছে।’ নির্বাচনে নিরাপত্তার বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে থাকবে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত।’

জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ভোটের দিন ২৭ ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন হাজার ৬০৮ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৩০টি টিম, ১০৫ কেন্দ্রে এক হাজার ২৬০ আনসার সদস্য, এপিবিএনের ৫০ জন সদস্য নিরাপত্তা রায় নিয়োজিত থাকবেন। ভোটের মাঠে ভোটারদের নিরাপত্তায় আমরা প্রস্তুত।’ রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘প্রাকৃতিক কোনও কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হবে না। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা ভেবে দেখবো। আশা করছি, বিগত কয়েকদিনে তেমন অভিযোগ আসেনি। নির্বাচনের দিনও কোনও অভিযোগ আসবে না।’ কুমিল্লা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, ‘ভোটের দিন হালকা বা মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে পুরো ভোটকেন্দ্র থাকছে কোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে লাগানো হচ্ছে ৮৫০টি ক্যামেরা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকরে প্রতিটিতে বসানো হচ্ছে এই যন্ত্র। এতে মোট ৮৫০টি সিসি ক্যামেরা পর্যবেণ করবে ভোটারসহ সবার গতিবিধি। ভোটকেন্দ্রের প্রবেশ পথ ও ভোটকরে প্রবেশ পথে থাকবে সিসি ক্যামেরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD