December 2, 2023, 8:00 am
এম আর শাইন : বগুড়ায় স্কুল-কলেজের আশপাশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বখাটেদের আড্ডা। স্কুল-কলেজ শুরু কিংবা ছুটির সময় ছাত্রীদের প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে তারা। এদের অনেকেই মাদকাসক্ত। এদের হাত থেকে রা পেতে অনেক ছাত্রীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ছাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ছে। উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। তারা বখাটেদের উৎপাত রোধে স্কুল-কলেজের সামনে টহল পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
জানা যায়, বগুড়া শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত। এ জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে কলেজ ১৪টি, মহিলা ডিগ্রি কলেজ একটি ও মহিলা উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ দুটি। সারা দেশের মধ্যে প্রতি বছর এ জেলা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। কিন্তু বখাটেদের উৎপাতে পড়ালেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। সরেজমিনে বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজ ঘুরে দেখা গেছে, প্রবেশ ফটকের সামনে ও আশেপাশে ছোট ছোট দলে আড্ডা দিচ্ছে কিশোর বয়সী ছেলেরা। ছাত্রীরা আসামাত্রই তাদের লক্ষ্য করে নানা মন্তব্য ছুড়ে দেয়। মেয়েরা দ্রুত ভাড়া মিটিয়ে মাথা নিচু করে বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে।
দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, বাইরের ছেলেরা বিদ্যালয়ের আশপাশে আড্ডা দিয়ে থাকে। তাদের বেশি কিছু বলা যায় না। বলতে গেলে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে তেড়ে আসে।
এদিকে, শহরের স্বনামধন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আড্ডা দিচ্ছিল বেশ কয়েক জন কিশোর ও যুবক। আড্ডা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাদের মধ্যে আরমান হোসেন, আব্দুল আলিম, ইমারন হোসেন নামের তিন জন জানায়, কলেজের এক বন্ধু এ এলাকায় থাকে, তার সঙ্গে দেখা করতে এখানে এসেছে তারা। কলেজ ছুটির পর মেয়েকে বাসায় নিতে এসেছেন ১০-১২ জন অভিভাবক। তারা এ প্রসঙ্গে জানান, প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে এ প্রতিষ্ঠানের আশপাশে বসে বখাটেদের আড্ডা। এ কারণে আমরা মেয়েদের একা স্কুলে পাঠাতে সাহস পাই না। বখাটেরা প্রথমে মেয়েদের প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হলেও বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে থাকে। এমনকি তাদের কেউ কেউ মেয়েদের হাত ধরে টানাটানিও করে থাকে। স্কুল-কলেজের সামনে টহল পুলিশের ব্যবস্থা করলে বখাটেদের উৎপাত কমবে বলে তারা জানান। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন।
অভিভাবক মরিয়ম বেগম জানান, বখাটেদের উৎপাতের কারণে দশম শ্রেণিতে ওঠার পর বড় মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। তাকে প্রতিদিন স্কুল নিয়ে আসি এবং ছুটি হলে নিজে এসে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যাই।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানান, প্রতিষ্ঠানের ভিতরে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তারা। কিন্তু বাইরের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করার মতা তাদের নেই। ক্ষেত্রে বখাটেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, বখাটেরা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে অযথা ঘুরাফেরা করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।