October 13, 2024, 1:44 pm
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব এলাকায় নৌকা প্রতীকে বেশি ভোট পড়েছে, সেসব এলাকায় নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন নৌকার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, চাঁদা আদায় করেছে। বেশ কয়েকটি পরিবার সব হারিয়ে প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি রাতে খোকসার জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের রাধানগর উথলী গ্রামে এশার নামাজ শেষে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে নৌকার কর্মী মোস্তফার বাড়ীতে হামলা চালানো হয়। বাড়িঘরের সবকিছু তছনছ করে দেওয়া হয়। সোনাদানা, কাপড়চোপর ও লোনের দুই লাখ টাকা লুটপাট হয়। সব হারানোর পরও দুধ ব্যবসায়ী মোস্তফা প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন। তার স্ত্রী রুপালি খাতুন তিন সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছেন।
একই রাতে ইউপি সদস্য বদিয়ার রহমান, সালাম ও কুতুবের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। যে চায়ের দোকানে নৌকার কর্মীরা চা খেত সেই চায়ের দোকানটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশন ছিনিয়ে নিয়েছে হামলাকারীরা।
মোস্তফার স্ত্রী রুপালী খাতুন বলেন, তার সবকিছু শেষ করে দিয়েছেন হামলাকারীরা। ঘরের খাট, লোনে কেনা ফ্রিজ, সমস্ত আসবাবপত্র, ঘরের টিনের বেড়া সব কেটে কেটে আলাদা আলাদা করে দিয়েছে। লোনের দুই লাখ টাকা, গরু কিনবো বলে রেখেছিলাম সেটাও নিয়ে গেছে। ছেলে মেয়ের সোনার গহনা এমনটি কাপড়চোপড় নিয়ে গেছে তারা। শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে ধ্বংস দেখছিলাম। কথা বলার ভাষাও ছিল না। স্বামী বাড়ীতে ছিল না। থাকলে কুপিয়ে তাকেও শেষ করে দিত। এখনও বাড়ী আসতে পারিনি সে। আর আমাদের খাবার কিছুও নেই। তার (স্বামী) অপরাধ সে নৌকায় ভোট করেছে। আমরা নৌকায় ভোট দিয়েছি। এই কেন্দ্রে নৌকা ফাস্ট হয়েছে। সেলিম আলতাফ জর্জ নৌকা প্রতীক নিয়ে হেরে যাওয়ায় নির্বাচিত স্বতন্ত্র এমপি আব্দুর রউফের লোকজন এই তান্ডব চালায়।
নৌকায় ভোট দেওয়ায় কর্মীদের ওপর চলছে নির্যাতন, বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট
ইউপি সদস্য বদিয়ার রহমান বলেন, চরম আতঙ্কে রয়েছি। যে কোনো সময় হামলা হতে পারে। লোকজনরা চাঁদা ধরছে। চাঁদা দিয়ে নাকি এলাকায় থাকতে হবে।
এছাড়াও সান্দিয়ারা বশিগ্রামে নৌকার কর্মী তিন জনের বাড়ী থেকে চারটি গুরু ও তিনটি ছাগল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। নৌকায় ভোট দেবার কারণে টাবলুর কাছ থেকে গরু ছাগলসহ আরও ২০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে স্বতন্ত্র এমপির লোকজন।
কুমারখালীর কয়াতেও নৌকার কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিও ছুড়েছে হামলাকারীরা। এসব ঘটনায় অন্তত ১০ জন নৌকার কর্মী আহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান নির্যাতিতরা।
খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তার বলেন, নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ হেরে যাওয়ার পর থেকে বর্তমান এমপি আব্দুর রউফের সমর্থকরা জামায়াত বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ নিধন করছে। এটাই তার মূল উদ্দেশ্য।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে কুষ্টিয়ায় অন্তত ৫০টির মত সহিংস ঘটনা ঘটেছে যা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে জেলাজুড়ে।