March 19, 2024, 7:55 am

১ কেজি রোজেলা ফুলের দাম ৫ হাজার টাকা!

নাটোর প্রতিনিধিঃ  নাটোর সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ঔষধিগ্রামে বাণিজ্যকভাবে চাষ হচ্ছে রোজেলা ফুলের। নাটোরে উৎপাদিত রোজেলা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা কেজি দরে। বাজারে এই ফুলের চাহিদায় রয়েছে। উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় এখানকার কৃষকরা ঝুকেছেন রোজেলা ফুল চাষে। এই রোজেলা ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে একে ফসল হিসেবে একটি সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত করা যেতে পারে। রোজেলা ফুল দিয়ে উৎপাদিত চা, আমসক্তের মতো ফ্রুট, জ্যাম, জেলি, জুস, আচার ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা।

এক সময় গ্রাম অঞ্চলে পথের ধারে, জঙ্গলের ভিতরে প্রচুর পরিমাণ এই গাছের জন্ম হতো। নাটোরের আঞ্চলিক ভাষায় ‘চুকাই চুকা’ অথবা ‘টকের গাছ’ বলে ডাকা হতো। তবে মূলত গাছটির নাম ‘রোজেলা’। ঔষধি গ্রামের চাষিরা বলছেন, অধিক লাভজনক এই ফুল উৎপাদন করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। আর জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে রোজেলা চাষিদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোজেলার গুণের নেই শেষ। রোজেলা চা, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। রোজেলায় আছে কমলালেবুর তুলনায় প্রায় ৯ গুণ এবং পেয়ারার তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি ভিটামিন সি। অত্যন্ত কম খরচে রোজেলা আমাদের ভিটামিন সি’র প্রধানতম উৎস হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া রোজেলা থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন বি ওয়ান, বি টু, বি সিক্স, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন ইত্যাদি।শারীরিকভাবে অনেক রোগ প্রতিরোধ করবে। তবে বাজার মূল্য বেশি হওয়ার কারণে এই চাষ কতটুকু সফলতা অর্জন করবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের।

নাটোর সদর উপজেলা লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঔষধি গ্রামখ্যাত কাঠালবাড়িয়া এলাকার ভেষজ চাষি মো. শহিদুল ইসলাম জানান, পরীক্ষামূলক ১০ কাঠা জমিতে রোজেলা চাষ করেছিলাম। উৎপাদন হয়েছে ২৫ কেজি। উৎপাদিত ফুলের বর্তমান বাজার মূল্য ১ লক্ষ টাকা। রোপণ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত সর্বমোট ব্যয় হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। এবার আমি ১০ বিঘা জমিতে এই ফুলের চাষ করার পরিকল্পনা করছি। আমার নিজস্ব নার্সারিতে চারা উৎপাদন করছি যা ৫ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। চা তৈরির নিয়মাবলী সম্পর্কে তিনি জানান, এক কাপ গরম পানিতে ৩ থেকে ৪ টি ফুল বয়েল করলেই চা তৈরি হয়ে যাবে। অন্য কিছুই প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই।

নাটোর সদর হাসপাতালে অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, রোজেলা চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। শরীরে উচ্চ রক্তের চর্বি হৃদরোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রোজেলা চা উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের তারল্যসংকট, হৃদরোগ, রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিসের মতো প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসায় সমাদৃত। এছাড়া হাড়ের ক্ষয়রোগ, হাড়ের গিঁটে বাত, মূত্রজনিত বা মূত্রনালির সমস্যা, মুখের ঘা ইত্যাদি রোগেও চুকইয়ের চা পান করে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

নাটোরের গণমাধ্যমকর্মী মেহেদী হাসান বাবু বলেন, সাধারণত একটি চা দোকানে ৫ টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু রোজেলা চা পেতে হলে কমপক্ষে ৩০ টাকা ব্যয় হবে। যা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। যদি বেশি বেশি ফুল উৎপাদন হয়, ১০ থেকে ১৫ টাকায় এক কাপ চা পাওয়া যায়, তবেই সাধারণ মানুষের জন্য এটা পান করা সম্ভব হবে।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদুল ইসলাম জানান, ঔষধি গ্রামের ভেষজ চাষি শহিদুল ইসলাম পরীক্ষামূলক এই রোজেলা চা উৎপাদন করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। অন্যান্য কৃষকরা যেন লাভজনক রোজেলা চাষে আগ্রহী হয়, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধক ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এই রোজেলা চা উৎপাদনে বিস্তার ঘটুক নাটোরের আনাচে-কানাচে, স্বাস্থ্যসম্মত এই চা খেয়ে উপকৃত হোক জনসাধারণ, নাটোরের উৎপাদিত এই রোজেলা ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাক দেশসহ বহির্বিশ্বে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হোক নাটোরের- এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD