October 13, 2024, 1:45 am
যমুনা নিউজ বিডিঃ কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার এই বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০১ টাকা দিতে হয়েছে। সোমবার ৯৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সে কারণেই প্রতি দিনই দর বাড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা ডলার পাচ্ছি না। আজ আমি এক ডলারও কিনতে পারিনি। তাই কোনো ডলার বিক্রিও করতে পারছি না।’
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। সোমবার বড় দরপতন হয়। এক দিনেই আমেরিকান ডলারের বিপরীতে ৮০ পয়সা দর হারায় টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক দিনে টাকার এত বড় দরপতন হয়নি।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়। মঙ্গলবারও এই একই দামে বাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে ৫ টাকা বেশি দরে।
ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার সরকারি ছুটির কারণে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বন্ধ ছিল। সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক লাফে আরও ৮০ পয়সা কমিয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
টাকার মূল্য পতনে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো ছাড়া অন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশই তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এখন আমরা যদি না করি, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা ঠিক, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিটা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। রিজার্ভ বাড়বে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা মঙ্গলবার ৯২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকও ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত (সাড়ে ১০ মাসে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৬ মে পর্যন্ত) ৫২০ কোটি (৫.২০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত।
কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সে কারণেই দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।