April 27, 2024, 7:08 am

ছুটিতে ঘুরে আসুন ‘বাংলার নিলাদ্রি লেক ও নীলগিরি

যমুনা নিউজ বিডিঃ  বাংলাদেশের অনেক পর্যটক প্রতিবছর দার্জিলিং ও কাশ্মীর ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভিড় করেন ভারতে। তবে যাদের ভারত যাওয়ার সামর্থ্য নেই কিংবা আপাতত দার্জিলিং বা কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই, তারা দেশের ভেতরেই কিন্তু ঘুরে দেখতে পারেন বাংলার কাশ্মীর ও দার্জিলিং। এবারের ঈদের ছুটিতে চাইলে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই দুটি স্থানে।

বলছি বাংলার কাশ্মীরখ্যাত স্থান সুনামগঞ্জের নিলাদ্রি লেক, আর বাংলার দার্জিলিংখ্যাত স্থান বান্দরবানের নীলগিরির কথা। এই দুটি স্থানের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। চাইলে এবারের ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন দেশের মধ্যেই বাংলার কাশ্মীর ও দার্জিলিং থেকে।

বাংলার কাশ্মীর খ্যাত নিলাদ্রি লেক

একদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমারোহ অন্যদিকে সবুজ নীলাভ রঙের জল খেলা করছে। তার অন্যপাশে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। আর নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর। এ যেন শিল্পীর হাঁতে আঁকা অসাধারণ এক ছবি।

দেশের মধ্যেই এমনই সুন্দর এক দৃশ্য নিজ চোখে উপভোগ করতে পারবেন। এ যেন টুকরো কাশ্মীর। বলছি, সুনামগঞ্জের শহীদ সিরাজ হ্রদ বা শহীদ সিরাজ লেকের কথা। এটি দেশবাসীর কাছে নিলাদ্রি লেক বলেই পরিচিত। প্রকৃতির বিষ্ময়কর এই স্থানটি পর্যটকদের মন কেড়েছে।

নিলাদ্রি লেক নামকরণের কারণ হলো এই হ্রদের পানির রং সবুজ নীলাভ বর্ণের। যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত স্থানটি।

নীলাদ্রি লেক ভ্রমণের এখনই উপযুক্ত সময়। এ সময় সেখানে গেলে কিছু দূরের শিমুল বাগানও ঘুরে আসতে পারবেন। এ সময়টাইতেই শিমুল বাগান ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। বাইকে করে যেতে হয় নিলাদ্রি লেকে।

যেতে যেতে আপনি উপভোগ করবেন গ্রামীণ পরিবেশ ও সংস্কৃতির স্বাদ। মাটির রাস্তার দু’পাশে দেখবেন সারি সারি সবুজ গাছপালা। রাস্তার অদূরেই আছে সবুজ পাহাড়।

নীলাদ্রি লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনি নৌকা পাবেন। নীলাদ্রি লেকের পাশে রয়েছে সিমেন্টের তৈরি বসার জায়গা। চাইলে একটু বসতে পারেন। সেখানে বসেও সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

এর পাশেই আছে চায়ের টং দোকান। এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে উপভোগ করতে পারবেন সেখানকার সবটুকু সৌন্দর্য। চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন নিলাদ্রি লেকে। এজন্য রাতের বাসে টিকিট কাটুন। তাহলে ভোর হতেই পৌঁছে যাবেন সুনামগঞ্জে।

নীলাদ্রি ভ্রমণে গেলে চাইলে টাঙ্গুয়ার হাওড়, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগানও ঘুরে আসতে পারেন। তবে হাতে বেশি সময় থাকলে সুনামগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারবেন

কীভাবে যাবেন নিলাদ্রি লেকে?

ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জ যেতে হবে প্রথমে। এরপর মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে (জনপ্রতি ১০০ টাকা) তাহিরপুর উপজেলা অথবা লাউড়েরগড় যেতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে এগোলেই যাদুকাটা নদী ও বারিক্কা টিলা।

এরপর মোটরসাইকেল ভাড়া করে সীমান্ত দিয়ে টেকেরঘাট, ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। বর্ষায় তাহিরপুর থেকে নৌকায় যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। এজন্য সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। শুকনো মৌসুমে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে টেকেরঘাট যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

নিলাদ্রি লেকের আশেপাশে থাকার জন্য তেমন ভালো কোনো হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল পাবেন। আর বর্ষায় গেলে সেখানে নৌকায় থাকতে পারবেন।

খাওয়া-দাওয়া টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার বা তাহিরপুর বাজারে করতে পারবেন। সেখানে বেশ কয়েকটি ভালো মানের খাবারের হোটেল পাবেন। আর নৌকা ভাড়া নিলে সেখানেই রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে নৌকায় ওঠার আগে বাজার করে নিতে হবে।

বাংলার দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি

বাংলার দার্জিলিং বলা হয় নীলগিরিকে। সেখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটক। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীলগিরি। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা দার্জিলিংখ্যাত এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২২০০ ফুট।

উঁচু এই পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ করেন পাহাড়বাসী। নীলগিরি যাওয়ার পথে আরও অনেকগুলো আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্র আছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো- শৈলপ্রপাত ঝরনা, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র ও সাইরু হিল রিসোর্ট।

চাইলে খুব সহজে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে পরপর এই স্পটগুলো ঘুরতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আগে সরাসরি নীলগিরি চলে যান।

আর যদি বিকেলে নীলগিরিতে সময় কাটাতে চান তাহলে যাওয়ার পথেই সব আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে তারপর নীলগিরি যেতে পারেন।

নীলগিরি যেতে হলে প্রথমেই দেশের যে কোনো স্থান থেকে বান্দরবান যেতে হবে। বাসে যেতে চাইলে এক্ষেত্রে নন এসির ভাড়া ৫০০-৫৫০ ও এসি বাসের ভাড়া ৯০০-১৬০০ টাকা। বাসে গেলে বান্দরবান পৌঁছাতে ৭-১০ ঘণ্টা লাগবে।

যদিও ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের কোনো ট্রেন নেই। তাই ঢাকা থেকে প্রথমে ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া হবে শ্রেণিভেদে ৩০০-১২০০ টাকা করে। এরপর সেখান থেকে পৌঁছাতে হবে বান্দরবান।

এরপর বান্দরবন থেকে নীলগিরি পৌঁছানোর বেশ কয়েকটি মাধ্যম আছে- জিপ, মহেন্দ্র, সিএনজি, লোকাল বাস অথবা চান্দের গাড়িতে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে।

পরিবার কিংবা বন্ধুরা সঙ্গে থাকলে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে নিন। এতে নীলগিরি যাওয়ার পথের অন্যান্য জায়গায়ও ঘুরে দেখতে পারবেন। আর যদি একদিনেই নীলগিরি ঘুরে আসতে চান তাহলে জিপ নিতে পারেন। বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী ৩-৬ হাজার টাকায় ভাড়া নিতে পারবেন।

এছাড়া চান্দের গাড়ি, সিএনজি, ছোট জিপ ইত্যাদি দিয়েও যেতে পারবেন। নীলগিরির মেঘের মেলা দেখতে চাইলে খুব সকালে বেরিয়ে পড়ুন।

বেশিরভাগ পর্যটকই বান্দরবান থেকে নীলগিরি ঘুরে একদিনেই ফিরে আসেন। বান্দরবানে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট আছে। যারা নীলগিরিতে থাকতে চান, তারা চাইলে সেখানকার কটেজে থাকতে পারেন।

সেক্ষেত্রে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। রুমভেদে ভাড়া ৫-১০ হাজার টাকার মধ্যেই। তবে বিভিন্ন মৌসুমের উপর ভাড়া নির্ভর করে। তাই ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে দিন।

তবে অফ সিজনে গেলে ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। মনের মতো ক্যাফেও পেয়ে যাবেন সেখানে খাওয়া দাওয়ার জন্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD