March 29, 2024, 11:32 am

সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালে ডাক্তারসহ জনবল সংকট

সান্তাহার (বগুড়া) প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী জংশন সান্তাহারে শতবর্ষী রেলওয়ে হাসপাতালে দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ডাক্তার, সিনিয়র-জুনিয়র নার্স, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, লেডি হেলথ ভিজিটর, ওয়ার্ড এটেনডেন্টসহ মঞ্জুরিকৃত ২৭ জন লোকবলের জায়গায় আছে মাত্র ৮ জন। ২২ শয্যা বিশিষ্ট এই জরাজীর্ণ ভবন সম্বলিত হাসপাতালে নেই কোন রোগী। ফলে চিকিৎসা সেবা প্রায় নাই বললেই চলে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেশের সর্ববৃহৎ সেবা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের আউটডোর চিকিৎসা সেবা, ইনডোরে রোগী ভর্তি করা, বিভিন্ন টেস্টসহ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ফার্স্ট এইড বক্স সরবরাহ করা, রোগীদের পথ্য-খাদ্য সরবরাহ করা, স্টেশনসহ কলোনী ও অফিস ভবন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন্ রাখাসহ রেলওয়েতে কর্মরত জনবলের সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে রেলওয়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমানে সান্তাহার জংশন স্টেশনের প্লাটফরম উঁচু, দৃষ্টিনন্দন যাত্রী ছাউনি, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ অধিকতর নিরাপত্তা বেষ্টনী ওয়াল নির্মাণ এবং ট্রেনগুলোতে যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন করা হলেও চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় নাই।

সরেজমিনে গিয়ে এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে মঞ্জরিকৃত ২ জন ডাক্তার, ৪ সিনিয়র নার্স, ১জন জুনিয়র নার্স, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ১ জন লেডি হেলথ ভিজিটর, ১ জন মিড ওয়াইফ, ৬ জন এটেনডেন্ট, ১ জন মেডিসিন ক্যারিয়ার থাকার কথা থাকলেও ওই সকল পদে দীর্ঘদিন থেকে কোন জনবল নেই। বর্তমানে ২ জন ফার্মাসিস্টের স্থলে মাত্র ১ জন,  ইনডোর সিস্টার ইনচার্জ ১ জন, কম্পিউটার অপারেটর ১ জন, ২ জন ড্রেসারারের স্থলে১ জন, ২ বাবুর্চির স্থলে ১ জন, ২ আয়ার স্থলে  ১ জন ও ১ জন মেডিসিন ক্যারিয়ার আছেন।

অপরদিকে হাসপাতালের অধীনে কনজারভেন্সি বিভাগে সেনিটারী ইন্সপেক্টর ও জমাদার পদে কেউ নেই। ২ জন খালাসীর স্থলে ১জন ও ৪৪ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বিপরীতে মাত্র ৩১ জন দায়িত্ব পালন করছেন। সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালে প্রথমে ২২ টি শয্যা মঞ্জুরী থাকার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে ৯টি শয্যার অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ১৩টি শয্যা বিদ্যমান থাকলেও কোন রকম ইনডোর সেবা নেই, ফলে কোন রোগী ভর্তি নেয়া হয় না।

তা ছাড়া ১৯১৭ সালে স্থাপিত এই হাসপাতালের মূল ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো খুবই নাজুক। কয়েকটি আবাসিক কোয়ার্টার পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। সব মিলিয়ে হাসপাতালের বেহাল চিত্র ও দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে আউটডোরে কোন রোগীর দেখা মেলেনি। রেলের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পোষ্যরা হাসপাতালমূখী হচ্ছে না। বিদ্যমান ৮ জন জনবল নিয়ে নানা রকম সংকট নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম।

বর্তমানে সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালের ড্রেসারার আব্দুল মান্নান জানান, ডাক্তার না থাকার কারনে কোন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। তবে ১ জন ফার্মাসিস্টের অধীনে আউডডোরে প্রতিদিন ৩০/৩৫ জন রোগী দেখভাল করা এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রদান করা হয়। কিন্তু সরেজমিনে কোন রোগীর দেখা পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে  পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শাকিল আহমেদ বলেন, রেলওয়ে হাসপাতাল নীতিমালা অনুযায়ী যাদের মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা, তারাই কেবল হাসপাতাল থেকে খাবার সরবরাহ পাবে। মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকার উর্ধ্বে হলে কোন রোগীকে হাসপাতাল থেকে কোন খাবার সরবরাহ পাবে না। এই বৈষম্যমূলক নীতির কারণে অনেকে হাসপাতালে আসে না।

তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়া ও জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি, অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD