March 28, 2024, 12:12 pm

নারীর কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবীতে অর্থমন্ত্রী বরাবর বগুড়ায় স্মারকলিপি পেশ

 

নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরূপণকরা, নারীর কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা;নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলার উদ্যোগে সাতমাথায় সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমšী¿ বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখার সভাপতি এ্যাড. দিলরুবা নূরী। বক্তব্য রাখেন বাসদ জেলা কমিটির আহŸায়ক এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা সহ-সভাপতি রাধা রানী বর্মন, সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা আক্তার এ্যানি, সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা অর্থ সম্পাদক নিয়তি সরকার নিতু ।

সমাবেশে এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন,“ নারীর কাজের অর্থনৈতিক অবদান প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমতঃ মজুরীর বিনিময়ে কাজ এবং টাকা উপার্জনের জন্য স্বনিয়োজিত কাজ, যা জিডিপির হিসাবে যুক্ত হয়। দ্বিতীয়তঃ নারীর মজুরী বিহীন কিছু পারিবারিক কাজ যেমন হাঁস, মুরগী, গবাদি পশুপালন করে বিক্রি করা ইত্যাদি, এর আর্থিক মুল্য ও জিডিপিতে যুক্ত হয়। তৃতীয়তঃ নারীর গৃহস্থালি কাজ, যার বাজার মুল্য বা বিনিময় মূল্য নেই, যা বাজার জাত করা যায় না তা জিডিপিতে যুক্ত হয় না এমন কি শ্রম শক্তির হিসেবেও গণ্য হয় না। ২০১৪ সালে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীর কাজের ৭৮- ৮৭ শতাংশই অর্থনৈতিক হিসাবে আসেনা। যেমন, কাপড় ধোয়া, রান্নাকরা, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যদি। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে নারীদের গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য ১১ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। এই হিসাব করা হয়েছে বাজার প্রতিস্থাপন খরচ পদ্ধতিতে। গৃহকর্ম করতে অন্য কাউকে নিয়োগ দিলে কত টাকা ব্যয় হতো, তার ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছে। ঘরে বাইরে নারী যে কাজ করে তার পুরোটা হিসাবে আনলে এবং আর্থিক মূল্য বিবেচনা করলে জিডিপিতে নারী পুরুষের অবদান সমান হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে এ্যাড. দিলরুবা নূরী বলেন, “বাজেট শুধু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয়, বাজেটের মাধ্যমে সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীও প্রতিফলিত হয়। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর অগ্রযাত্রার সাথে দেশের এগিয়ে যাওয়াও যুক্ত। বাল্যবিবাহ, মাতৃমৃত্যু, নারীনির্যাতন-ধর্ষণ, কর্মক্ষেত্রে নারীর মজুরী বৈষম্য, শ্রম বাজারে নারীর কম অংশগ্রহণ সহ অসংখ্য ক্ষেত্রে নারী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এ সকল বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নারীর শ্রমের স্বীকৃতি ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাজেট বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। গৃহস্থালি কাজ ছাড়া কোন পরিবার ও সমাজ কল্পনা করা যায় না। আর গৃহস্থালি কাজের সিংহ ভাগই করে থাকেন পরিবারের নারী সদস্যরা। ঘরে সবার জন্য খাবার তৈরি, জামা-কাপড়, তৈজসপত্রসহ ঘরদোরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, শিশুদের লালন-পালন করা, স্কুলে আনা-নেয়া, পড়ানো, বয়স্ক ও রোগীদের সেবা প্রদানসহ গৃহব্যবস্থাপনার প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ নারীরা করে থাকেন। গৃহস্থালি কাজ ছাড়া মানুষের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হওয়া তো দূরের কথা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এ কাজের কোন স্বীকৃতি নেই, মর্যাদা নেই,এমনকি এ কাজ কেতাচ্ছিল্য করা হয় সবসময়। যে নারীর ানিজগৃহে এই কাজ গুলো করেন তাদের কোন পারিশ্রমিকও নেই।
কিন্তু দীর্ঘদিনধরে দাবিজানানোরপরওনারীর গৃহস্থালিরকাজেরআর্থিক মূল্য হিসাবকরারজন্য রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগপরিলক্ষিতহয়নি। গৃহিনী নারীদের বা গৃহস্থালির কাজের অবদানের মূল্যায়ন না হওয়ায় নারীরা তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হন এবং অসহায় বোধ করেন। নির্যাতন-বৈষম্যের শিকার হন। আমরা মনে করি, নারীর শ্রমের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী ও নারীদের সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে রাষ্ট্র বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। রাষ্ট্র নারীদের শ্রমের মূল্যায়ন করার মধ্য দিয়ে তার কাজের স্বীকৃতি দিতে পারে। সাথে সাথে একটি থোক বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখতে পারে গৃহিনী নারীদের জন্য। স্বামীর সংসারে নির্যাতিত নারী, স্বামী-নিগৃহিতা, দুঃস্থ ও বিধবা নারীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসনের জন্য এই তহবিল বরাদ্দ হবে।”

অন্যান্য বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে প্রতিবছর যে জেন্ডার বাজেট হয় তা জাতীয় বাজেটের মাত্র ১ শতাংশের মতো যা মূলত বিভিন্নভাতা প্রদানেই সীমাবদ্ধ। ভাতা গুলোর পরিমানও খুব সামান্য (মাসে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা)। ভাতার পরিমাণ ও পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের যেসব উদ্যোগ আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। দেখা যাচ্ছেদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা অনেক কম। যেসব কারণে নারীরা কর্মক্ষেত্রে আসতে পারেন না বা কর্মক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়েন ঐসব বাধাগুলো দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবেএবংএসব বিষয়ে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মানসম্পন্ন ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ, নারীদের জন্য কর্মজীবী-শ্রমজীবী হোস্টেল,স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবাসহ মাতৃসদনÑএসব নির্মাণে খুব বেশি বাজেট বরাদ্দ লাগেনা; প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় মনোযোগ ও উদ্যোগ নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করা এবং পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে সমাজে ভূমিকারাখানার ক্ষেত্রে যেসকল প্রতিবন্ধকতা তা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে রাষ্ট্র এবং সে সকল ক্ষেত্রে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখার দাবি জানান। দাবি আদায়ে নারী-পুরুষের মিলিত সংগ্রামকে বেগবান করার আহŸান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD