April 19, 2024, 5:58 am

অস্থির চিনির বাজার:চিনি বাজার থেকে উধাও!

যমুনা নিউজ বিডিঃ দেশে শীতকাল শুরুর পর থেকে দাম কমে স্বস্তি ফিরছে সবজির বাজারে। শীতের সবজির ভরপুর সরবরাহ থাকায় দামও অনেক কম। তবে প্রায় দুই মাস ধরে সংকটে থাকা চিনির বাজার এখনো অস্থিতিশীল। স্বস্তি ফেরেনি। প্যাকেটজাত চিনি বাজার থেকে উধাও। সরকারের বেঁধে দেয়া দামেও চিনি কিনতে পাচ্ছে না ভোক্তারা। উল্টো খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৩ থেকে ১৮ টাকা বেশি দরে। আসছে রমজানেও চিনির সংকটের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। গতকাল সরজমিন রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রায় দুই মাস ধরে বাজারে চিনির সংকট। পাইকারি বাজারে পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে।
জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তৈরি হওয়া ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে গত বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়।

এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দেয়। এরপর আরও দুই দফা দাম বাড়ায় সরকার। সংকট কাটাতে বাজারে চালানো হয় অভিযান। এত কিছুর পরও বাজারে চিনির সংকট কাটেনি। বাজারে নতুন করে আরও চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনির সরবরাহও সীমিত। সর্বশেষ গত নভেম্বরে খুচরা পর্যায়ে প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনির দাম ১০৭ টাকা বেঁধে দেয় সরকার।
এদিকে নানা সংকটের অজুহাত দেখিয়ে চিনি কল মালিকরা সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বাজারে চিনি সরবরাহ করছেন না। পাইকারি বাজারেই প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি লেনদেন হচ্ছে ১০৮ থেকে ১০৯ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে আসতে আসতে এই দাম আরও ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে কমে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চিনি কেনা যায় না। অন্যদিকে প্রতি কেজি চিনির প্যাকেটের গায়ের দাম ১০৭ টাকা। এ অবস্থায় ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি দামে বিক্রি করতে পারে না খুচরা বিক্রেতারা। এ কারণে প্যাকেটজাত চিনির চেয়ে খোলা চিনি বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হয় তারা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা চিনির কেজি ১০২ এবং মোড়কজাত চিনির কেজি ১০৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপরও বেশির ভাগ জায়গায় চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও পাওয়া গেলেও ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে। একই দরে বিক্রি হচ্ছে খোলা চিনিও। তবে এর চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে আখের লাল চিনি। মোড়কজাত এ ধরনের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তালিকায়ও কেজি প্রতি চিনির দাম দেখানো হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। টিসিবি’র মতে, এক বছর আগে রাজধানীতে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। এতে এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশের বেশি।
মিল মালিকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে তারা ঠিকমতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের তুলনায় ডিসেম্বরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি ঋণপত্র উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। গত অক্টোবরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি ঋণপত্র হয়েছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৫ টন। নভেম্বরে আমদানি ঋণপত্র হয় ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০২ টন। আর সর্বশেষ ডিসেম্বরে আমদানি ঋণপত্র হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৫২ টন অপরিশোধিত চিনি।
এদিকে আসন্ন পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে গত ডিসেম্বরে ব্যবসায়ীদের কম টাকা জমা দিয়ে চিনিসহ আট পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও ঋণপত্র খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন আমদানিকারকেরা।
চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, মিলগুলোতে পর্যাপ্ত কাঁচামালের জোগান অব্যাহত রাখতে আমদানি ঋণপত্র খুলতে এখনো সমস্যা হচ্ছে। ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। রমজানে এ চাহিদা আরও বেড়ে যায়। অথচ দেশে সবমিলিয়ে উৎপাদিত হয় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন। শুধু রমজানে চিনির চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টন। চাহিদার বড় অংশই জোগান দেয়া হয় আমদানির মাধ্যমে। রমজানে যাতে চিনির সংকট না হয়, সেজন্য আমদানি পর্যায়ে আরোপিত ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে সহনীয় পর্যায়ের নিয়ে আসতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হবে বলে গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে বাজারে উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে অধিকাংশ পণ্যের দাম। যেমন; আটা, ময়দা, ডাল, সয়াবিনের মতো পণ্যের দাম এখনো চড়া। মাঝারি ও সরু চালের দামও বাড়তি। বাজারে আমন ধানের নতুন চাল আসায় মোটা চালের দাম অবশ্য কিছুটা কমেছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাজারে আসা শুরু হয় আমন ধানের নতুন চাল। এতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে কিছুটা কমতে থাকে চালের দাম।
বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা। গত সপ্তাহে এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫১ টাকার মধ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে এ চালের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। টিসিবি’র হিসাবে, এক বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল সর্বনিম্ন ৪৫ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দাম ১০ টাকা বেড়ে, সেখান থেকে এখন ৫ টাকা কমেছে। তবে চিকন বা মিনিকেট চালের দাম কমেনি। এ মানের চাল এখনো ৭২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী খালেক বলেন, আমাদের বেশির ভাগ মিনিকেট চালের ক্রেতা এখন বিআর-২৮ জাতের চাল কিনছেন। খরচ কমানোর জন্যই চাল কেনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছেন ক্রেতারা।
এদিকে শীত মৌসুমের বেশির ভাগ সবজির দাম কমেছে। দু-তিনটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে শিম, শালগম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, মুলা ও নতুন আলু কেনা যাচ্ছে এ দামে। অন্যদিকে সরবরাহ বাড়ায় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে।
সবজির দাম কিছুটা কমলেও বাজারে খুব বেশি সুখবর নেই। তাই সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে চাপের মধ্যেই রয়েছে। গত সপ্তাহের ব্যবধানে মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা। বাজারে এখন এক কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যা সপ্তাহখানেক আগে ৮০ টাকা ছিল।
কাওরান বাজারের মরিচ বিক্রেতা মোল্লা মিয়া বলেন, পাইকারিতে ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে কাঁচামরিচের দাম বাড়ছে। সরবরাহ কম সেজন্য দাম উঠছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়তি।
এ ছাড়া আগের মতোই ডিম প্রতি ডজন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় কেনা যাচ্ছে। প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দামও। মাছের বাজারেও দর-দাম রয়েছে প্রায় অপরিবর্তিত।

উৎস: মানবজমিন

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD