April 18, 2024, 10:11 am

সিরাজগঞ্জে উদ্বোধনের অপেক্ষায় পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য নির্মিত দেশের প্রথম বিশ্রামাগার 

তারিকুল আলম, সিরাজগঞ্জঃ চালুর অপেক্ষায় রয়েছে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য নির্মিত আধুনিক সুবিধা সম্বলিত দেশের প্রথম বিশ্রামাগার। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। আধুনিক পার্কিং সুবিধাসহ এ বিশ্রামাগারটি চালু হলে সড়কের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে চালকদের।

সিরাজগঞ্জ সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৩ দশমিক ৫৬ একর জায়গায় নির্মিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি ৮০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বর্ধিত সময়ের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন প্রকল্পটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় উত্তরাঞ্চলের ট্রাকচালক ও শ্রমিকরা। উদ্বোধনের পর প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক ইজারার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছে সওজ।

গত রোববার (৪ ডিসেম্বর) প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাবস্টেশনসহ (বিশ্রামাগার) ভবন ও পার্কিংয়ের রাস্তা নির্মাণকাজ শেষ। রাস্তায় লাগানো হয়েছে আলোকসজ্জার লাইট। ১০০ চালকের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত দ্বিতল বিশ্রামাগারে বিনোদন পয়েন্ট, ক্যান্টিন, গোসলখানা, নামাজের জায়গা, ঘুমানো ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কক্ষ রয়েছে। এছাড়া ১০০টি পণ্যবাহী গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান, ড্রেনসহ রয়েছে যানবাহনের ত্রুটি মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপ। পণ্যবাহী চালকরা অল্প খরচে এসব আধুনিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর এ প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড, রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড ও মের্সাস সাগর বিল্ডার্স যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। ২০২০ সালের ২১ মে থেকে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল, যা আগামী ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

ট্রাকচালক ফারুক আহম্মেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগারটি নির্মিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। কেননা আমাদের বেশির ভাগ সময় মহাসড়কের পাশে গাড়ি থামিয়ে ঘুমাতে ও খেতে হয়। এটি আমাদের জন্য খুব কষ্টদায়ক। এই বিশ্রামাগারটি উদ্বোধন হলে আমাদের সেই কষ্ট আর থাকবে না।

কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডার্সের নির্বাহী পরিচালক বাপ্পি সমদদার বলেন, করোনার কারণে দু-দফায় কয়েক মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। তাই আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছে সওজ। এছাড়া কয়েকবার ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় সাবস্টেশন ভবন নির্মাণও কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়।

মের্সাস সাগর বিল্ডার্সের প্রকল্প ম্যানেজার শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্রামাগারের মূল কাজ জুন মাসেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত করার পর কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক ও ট্যাংক-লরি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানি বলেন, মহাসড়কে চলাচল করা পণ্যবাহী যানবাহনের চালকদের সুবিধার্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের অনেকটাই স্বস্তি মিলবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নামদার হোসেন বলেন, জেলায় প্রায় সাড়ে চার হাজার ট্রাকচালক ও হেলপার আছেন। সরকারের কাছে দাবি, তাদের আয়ের কথা বিবেচনা করে যেন বিশ্রামাগারটিতে প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপদের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, প্রকল্পটির ৯০ ভাগ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ১০ ভাগ কাজ আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। এতে উত্তরবঙ্গের পণ্যবাহী চালকদের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হবে। সেইসঙ্গে চালকরা স্বস্তিদায়কভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও হ্রাস পাবে বলে আমি মনে করি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD