March 29, 2024, 11:55 am

খানসামায় পাখির কিচিরমিচিরে মুখর চেয়ারম্যানবাড়ি

রকৃতি ও পাখির চোখ ধাঁধাঁনো দৃশ্য এবং অবিরাম পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে মুখরিত-মশগুল থাকে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের মাড়গাঁও গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়ি। এছাড়াও ওই গ্রামের পন্ডিতপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, সইরতপাড়া ও বড়দা শাহ্পাড়াতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে মুখর থাকে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে স্থানীয় লোকজনের। মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুঁটে আসেন পাখিপ্রেমিরাও। এ চেয়ারম্যানবাড়িটি যেন পাখির অভয়ারণ্য। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে মনে হবে এ যেন পাখি স্বর্গরাজ্য। মনপ্রাণ খুলে ডানা মেলছে হরেক রকম বক আর পানকৌঁড়ি। সবুজ পাতার ফাঁকে ও ওপরে পাখা গুটিয়ে বসে আছে সাদা-কালো আর হরেক রকম বাহারী পাখি। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন সাদা ফুল ফুটেছে। প্রতিটি গাছেই রয়েছে পাখির ঝাঁক। প্রতিবছর বেড়েই চলেছে পাখির সংখ্যা। সকাল-সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কোলাহলে মুগ্ধতা ছড়ায়। এসব পাখি সকালে খাবারের সন্ধানে বাইরে চলে যায় আর সন্ধ্যা নামার পূর্বেই ফিরে আসে তাদের নিজ কুটিরে। চেয়ারম্যানবাড়ির বাঁশঝাড়, গাছ-গাছালি যেন পাখিদের স্বর্গরাজ্য ও অভয়ারণ্য। প্রতিবছর শীতকালে পরিযাত্রী পাখিরদল ঝাঁক বেঁধে উপস্থিত হয় চেয়ারম্যানবাড়ির গাছ ও বাঁশঝাড়ে। সরজমিনে দেখা ও জানা গেছে-পাখিপ্রেমি মরহুম সফিউদ্দিন মন্ডল শাহ্, হযরত আলী শাহ্ ও ভাবকী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নজরুল হক শাহ্ পাখির নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেন। অন্তত দেড় শতাধিক বছর ধরে পাখিরা এখানে নিরাপদে বসবাস শুরু করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারাবছর পাখিদের আসা-যাওয়া এ চেয়ারম্যানবাড়িতে। বাড়ির চারপাশে অন্তত অর্ধ-শতাধিক বিঘা জমির ওপর সবুজ ছায়াঘেরা হাজারো গাছ ও বাঁশঝাড়ে পাখিরা অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে।

এখানে সারাবছরই দেখা মেলে বিলুপ্ত প্রায় কালো পানকৌঁড়ি, সারস, সাদা-বক, জ্যাঠা-বক, আম-বক, কানি-বক, ডাহুক, ঘুঘু, ডাউকী, বাদুড়, হারগিলা ও রাতচোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। আরো দেখা গেছে, পাখিরা বাঁশের বা বিভিন্ন গাছের চূড়ায় বসে ডানা ঝাপটাচ্ছে। আবার গাছের মগডালের উপর দিয়ে দুই-এক চক্কর দিয়ে গাছের চূড়ায় বসছে। কোনটা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে, আবার কোনটা বাঁশের এক কঞ্চি থেকে অন্য কঞ্চিতে উড়ে চলছে। পাখিদের বাসার ভেতর থেকে ছানাগুলো টেক টেক শব্দ করছে। তাদের খাওয়াতে ব্যস্ত মা-পাখিরা। কোনোটি বাসা বাঁধছে আপন মনে, আবার কোনোটি ডিমে তা দিচ্ছে। নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না পাখির সঙ্গে মানুষের কতটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছে। গাছগুলোতে রঙ-বেরঙের পাখির ছোটাছুটি যে কারো মন কেড়ে নেয়। পাখিদের কিচিরমিচির ডাক ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় ইটপাথরের জীবনের কথা। এখানে সকাল-বিকাল হাজার হাজার পাখির দেখা মিলে। এসব পাখি আশপাশের বিল ও ক্ষেতে খাবার খেয়ে ও সংগ্রহ শেষে চেয়ারম্যানবাড়ির গাছ ও বাঁশঝাড়গুলোতে আশ্রয় নেয়। শুধু তাই নয়-এ চেয়ারম্যানবাড়িতে বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে লঙগোর, বারোবিড়াল, বেজী, ভিন্ন ভিন্ন ধরণের গুইসাপ। মরহুম সফিউদ্দিন মন্ডল শাহ্র ছেলে পাখিপ্রেমি মো. জেফরুল হক শাহ্ বলেন, আমি আমার বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি আমাদের বাড়ির চারপাশ ঘিরে পাখিদের অভয়ারণ্য। এখানে দিনরাত পাখিরা অবস্থান করে। পাখিগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে। এরা দিনরাত প্রায় সময়ই কিচিরমিচির করে থাকলেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না। তিনি আরো জানান, প্রতিবছর শীতকালে পাখিদের বিচরণ দেখা গেলেও এবার এখনো অসংখ্য পাখি রয়েছে। প্রতিবছরই পরিযাত্রী পাখিতে মুখরিত থাকে বাড়ির চারপাশ। পাখির এ অভয়ারণ্য দেখতে ছুঁটে আসেন পাখিপ্রেমিরা।

মরহুম সফিউদ্দিন মন্ডল শাহ্র নাতী মো. তুহিন শাহ্ জানান, আমি অন্তত ১০ বছর ধরে এসব পাখি দেখভাল করছি। সারাদেশে পাখি শিকারের মহোৎসব চললেও চেয়ারম্যানবাড়ির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে কেউ পাখি শিকার করে না। পাখিদের কেউ উৎপাত করে না। কেউ করে না বিরক্তও। তারপরেও অনেক সময় বিলে বা জমিতে পাখিরা খাদ্যের সন্ধানে গেলে তখন দুষ্টপ্রকৃতির কিছু লোকজন পাখি শিকার করে।  এ নিয়ে ওইসব লোকদের সাথে অনেক সময় মনোমালিন্য হয়। চেয়ারম্যানবাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসী পাখিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যই জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে হাজার হাজার পাখি। দূরদেশ থেকে আসে পরিযাত্রী পাখিও।  ভাবকি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল আলম তুহিন বলেন, সরকারি উদ্যোগে পাখি সুরক্ষার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়িকে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। এতে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং এলাকার মানুষ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পাবে। উপজেলা পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান জনবন্ধু এটিএম সুজাউদ্দিন শাহ্ লুহিন বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমণ ঘটে এবং জুলাইয়ের শেষদিকে চলে যায়। এবার এখন পযন্ত অসংখ্য পাখি আছে। পাখিগুলো বিলে বা জমিতে যখন খাবার আহরণে যায়, তখন দুষ্ট প্রকৃতির কিছু মানুষ পাখি শিকার করে। এটা বন্ধ করা গেলে পাখির আগমণ আরো বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন, পাখিগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হলে উপজেলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য গ্রাম হিসেবে গড়ে উঠবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD