April 26, 2024, 3:11 am

বগুড়ায় স্কুল হেলথ ক্লিনিকে বয়স ১৯ পর্যন্ত ফ্রি চিকিৎসাসেবা

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত যে কেউ এলেই পাবে চিকিৎসা। তাও বিনামূল্যে। এ জন্য আসতে হবে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র জলেশ্বরীতলার স্কুল হেলথ ক্লিনিকে। তবে প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি এখনও অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে।

সম্প্রতি বগুড়ার এই স্কুল হেলথ ক্লিনিক থেকে আরও একটি সুখবর মিলেছে। আগে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিলেও এখন সেই বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। ১৯ বছর পর্যন্ত কিশোর বয়সী ছেলে-মেয়েরা শারিরীকের পাশাপাশি মানসিক সমস্যার জন্যও পাচ্ছে চিকিৎসা সেবা। দেয়া হচ্ছে কাউন্সেলিং। এ জন্য ইউনিসেফের সহায়তায় চালু হচ্ছে কিশোর কর্নার।

স্কুল হেলথ ক্লিনিক সূত্র জানায়, ১৯৫১ সালে তৎকালীন ঢাকা ও চট্টগামে স্কুল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটি দেশব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করে। এই সেবার আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের ২৩টি জেলায় স্কুল হেলথ ক্লিনিক চালু করে।

বগুড়ায় এই ক্লিনিকটি স্থাপিত হয় ১৯৬০ সালের দিকে। তবে ৯০ দশকের গোড়ার দিকে এই ক্লিনিকের সেবা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছিল। একসময় এখানে চক্ষু সেবা দেয়া হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

ক্লিনিক সংশ্লিষ্টদের আক্ষেপ, ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে এখনও এই ক্লিনিকের কথা জেলার অনেক মানুষই জানে না।

বগুড়ার স্কুল হেলথ ক্লিনিকের কর্মকর্তারা জানান, এখানে দুজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, একজন ফার্মাসিস্ট, দুজন নার্স ও একজন এমএলএস এর পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে আরও ৪ জন নার্স ডেপুটেশনে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়াও একজন উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। তিনি ইউনিসেফের সার্ভিস প্রোভাইডারের দায়িত্ব পালন করছেন।

ক্লিনিকে কর্মরত নার্স শামিমা আকতার ২০১৮ সালে ডেপুটেশনে এখানে এসেছেন। তার মূল কর্মস্থল আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও এখানে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবায় কাজ করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

শামিমা আকতার জানান, ক্লিনিকে বর্হিবিভাগ সেবা রয়েছে। আগে বিভিন্ন স্কুলে ক্যাম্পেইন করা হতো। করোনার কারণে তা বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার সময় আমাদের মেডিক্যাল টিম কাজ করে।

শামিমা বলেন, ‘হাসপাতালে গেলে অন্তত টিকিট কাটতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে টিকিটও লাগে না। শুধু আসতে হয়। চিকিৎসকরা রোগের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থাপত্র দেন। সেটি দেখে এখান থেকে ওষুধও দেয়া হয়। আর বড় ধরনের সমস্যা থাকলে আমরা মোহাম্মদ আলী বা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে দিই।’

ক্লিনিকের উপসহকারী স্কাস্থ্য কর্মকর্তা মোছা. নাজমা খাতুন এখানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে এলেও তার দায়িত্বে এখন কাউন্সেলিং সেবাও যোগ হয়েছে। এ জন্য ক্লিনিকে চালু করা হচ্ছে অ্যাডলসেন্ট কর্নার (কিশোর কর্নার)।

নাজমা খাতুন বলেন, ‘বয়োসন্ধির সময় কিশোর-কিশোরীরা মানসিক সংকটে ভোগে। এ সময়টায় তাদের কাউন্সেলিং খুব প্রয়োজন। বগুড়া স্কুল হেলথ ক্লিনিকে এই কাউন্সিলিং জুলাই মাস থেকে চালু হয়েছে। এর মধ্যেই অনেক কিশোর-কিশোরীকে এখানে কাউন্সিলিং করা হয়েছে। মাদকের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতেও কিশোরদের এই সেবাটি দিতে হয়।’

এ বিষয়ে ইউনিসেফের বগুড়া বিভাগীয় কর্মকর্তা ডা. রাকিন আহমেদ জানান, ‘ফরেন কম্বাইন্ড ইউকে’ এর অর্থায়নে ইউনিসেফের কার্যকরী সহায়তায় কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার ১১টি উপজেলা হল কমপ্লেক্স ও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে কিশোর কর্নার স্থাপন হবে।

পাশাপাশি স্কুল হেলথ কমপ্লেক্সেও এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবরে কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় পুরোদমে শুরু করা যায়নি। ক্লিনিকে শুধু লজিস্টিক বিষয়গুলো স্থাপন করা হয়েছে।

এ ছাড়া ইউনিসেফ থেকে একজন প্রশিক্ষিত সার্ভিস প্রোভাইডার নির্বাচিত করা হয়েছে। তিনি কিশোর-কিশোরীদের শারিরীক ও মানসিক বিষয়ে কাউন্সিলিং করবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাও দেবেন।

এখনও অনেকে না জানলেও বগুড়ার স্কুল হেলথ ক্লিনিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

ক্লিনিকের রেজিস্টারের তথ্যে দেখা গেছে, জুন মাসে ৪৫৯ জন শিক্ষার্থী সেবা নিয়েছেন। আর জুলাইয়ের সেবা পেয়েছে ৩২৬ শিক্ষার্থী। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই কিশোরী।

সম্প্রতি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা হয় নুরুন্ননাহার নামে এক গৃহিনীর সঙ্গে। তার ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। মেয়ে নুসরাত সর্দি-কাশিতে ভুগছে।

জলেশ্বরীতলার বাসিন্দা নুরুন্নাহার বলেন, ‘স্কুল ক্যাম্পেইন থেকে ক্লিনিকটি সম্পর্কে জানতে পারি। পরে এখানে এলে বুঝতে পারি চিকিৎসকরা খুব যত্ন করে বাচ্চাদের দেখেন। এ জন্য মেয়ের যে কোনো অসুখে এখানেই আসি।’

ক্লিনিকে গেলে দেখা যায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে আছেন ফার্মাসিস্ট ফারজানা। তিনি জানান, দেশের ২৩টি স্কুল হেলথ ক্লিনিকের একটি বগুড়ার এ প্রতিষ্ঠান। ৬০ এর দশকে এটি স্থাপন করা হয়।

ফারজানা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির আরও প্রচার-প্রচারণা দরকার। এ ছাড়া ক্লিনিকের চারপাশেই আবাসিক ভবন। মানুষ বাসা-বাড়ির ময়লা জানালা কিংবা বারান্দা থেকে ক্লিনিকের আঙিনায় ফেলে দেন। একাধিকবার বলার পরও তারা সচেতন হন না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD