April 25, 2024, 5:40 pm

বগুড়ায় কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে বেশি খাজনা আদায়ের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : মুসলমানদের ধর্মীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। কোরবানিদাতারাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পছন্দের পশুটি ক্রয়ে। কিন্তু পশুর খাজনা আদায়ের সরকারি নীতিমালা কোন হাট ইজাদারারা মানছেনা। ফলে জেলার অধিকাংশ হাটে ক্রেতাকে দ্বিগুন খাজনা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। হাটের নির্ধারিত খাজনার মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে কোরবানির পশু ক্রেতাদের। এমনকি বিক্রেতাদের কাছে থেকে টাকা আদায় করছে হাট ইজারাদারেরা। শুধু তাই নয়, খাজনা আদায়ের রশিদে ইজারাদারেরা টাকার পরিমাণ উল্লেখ না করেই ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। তবে বগুড়া জেলা প্রশাসন জানিয়েছে কোরবানির হাটে বড় গরুর জন্য ৫০০, ছোট গরুর জন্য ৪০০ এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জমে উঠেছে কোরবানির পশুরহাট। গত কয়েকদিন ধরে ল্য করা গেছে জেলার বিভিন্ন পশুরহাট বাজারে অসংখ্য গরু-ছাগল ও ভেড়া উঠেছে। কোরবানির পশুরহাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভীড়। কোরবানির হাট-বাজারের শেষ মুহুর্তে এসে পশুরহাটগুলোতে কোথাও তিলধারণের ঠাঁই নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা ও কোরবানির পশুর হাঁকডাকে পুরো এলাকা সরগরম হয়ে উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে এবছর কোরবানির পশুরহাটে অসংখ্য বড় গরু উঠলেও বড় গরুর ক্রেতা কম। যার ফলে বড় গরুর মূল্য তুলনা মূলকভাবে অনেক কম। অপরদিকে পশুরহাটে অসংখ্য ছাগল উঠলেও ছাগলের ক্রেতাও অনেক কম। তবে মাঝারী- ছোট সাইজের গরুর চাহিদা এবছর অনেক বেশী। যারা ছোট ও মাঝারী গরু কিনছে তাদেরকে অনেকটা বেশী মুল্য দিয়েই কিনতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার কাহালু মাদ্রাসা মাঠে পশুরহাটে গিয়ে ল্য করা গেছে, মাদ্রাসার বিশাল মাঠ জুড়ে পশু আর ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভীড়। এখানে বড় গরুর ক্রেতা কম হলেও বিক্রি হচ্ছে অসংখ্য ছোট ও মাঝারী সাইজের গরু। ক্রেতা-বিক্রেতার মতে এখানে দু-আড়াই লাখ টাকা মূল্যের অসংখ্য গরু উঠলেও তেমন ক্রেতা নেই। বেশীরভাগ মানুষ লাখ টাকার নীচে মূল্য সেই গরুগুলোই বেশী কিনছে। লাখ টাকার উপরে কিছু গরু বিক্রি হলেও তুলনা মূলকভাবে এই গরুগুলোর দাম অনেক কম। গত সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার জেলার কয়েকটি হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও শিবগঞ্জের হাটগুলোতে এমন পরিস্থিতি চলছে।

বুধবার মহাস্থান হাটে ক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, তার কাছে থেকে হাট ইজারাদার প্রতিটি গরুর জন্য এক হাজার টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ৫০০ টাকা আদায় করছে। আর বিক্রেতাদের কাছে গরুর জন্য ২০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ছোট-বড় সব গরুর েেত্রও একই খাজনা আদায় করা হচ্ছে।

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানহাট ইজাদারাদের প্রতিনিধি আমির আলী জানান, সরকার নির্ধারিত খাজনার বাইরে কোন টাকা নেওয়া হচ্ছে না। ক্রেতা বিক্রেতারা যাতে প্রতারিত না হন সেজন্য মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং পুলিশ নিয়োজিত রয়েছেন।

সাবগ্রাম হাটের ইজারাদার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, খাজনা বেশি না নিয়ে উপায় নেই। এ হাটের মূল্য এক কোটি টাকা। হাটের জায়গা নেই। গরু-ছাগলের হাট লাগে না। শুধু ঈদের সময় এই হাট লাগে। টাকা বেশি না নিলে ইজারার টাকা কেমনে উঠবে। মঙ্গলবার শাজাহানপুরের দুবলাগাড়ী হাটেও প্রতিটি গরুর জন্য ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আদায় করছিলেন ইজারাদারের প্রতিনিধিরা। আর ছাগল-ভেড়ার েেত্র নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। কিন্তু রশিদের কোথাও টাকার কথা উল্লেখ নেই। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে রুহুল আমিন নামে ইজারাদারের এক প্রতিনিধি অস্বীকার করে বলেন, হাটে কারও কাছে থেকে বেশি খাজনা নেয়া হচ্ছে না। পরে শাজাহানপুর ইউএনও আসিফ আহমেদ পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ পান। ঘটনার সত্যতা পেয়ে ইজারাদারকে সতর্ক করেন।

কাহালু উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা সরকারি বিধি মোতাবেক গরু-ছাগলের ছাপ নির্ধারণ করে দিয়েছে। নির্ধারিত গরুর ছাপ ৫০০ টাকা ও ছাগলের ছাপ ১৫০ টাকা করা হয়েছে। গরু-ছাগলের ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকায় আদায় করলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউএনও পাপিয়া সুলতানা।

বগুড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উজ্জল কুমার ঘোষ জানান, হাটের খাজনা আদায়ে টাকার মূল্য অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। সরকার পশুর খাজনা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বড় গরুর ক্ষেত্রে এই মূল্য হবে ৫০০ টাকা। ছোট গরুর জন্য ৪০০ এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে কোরবানির হাটের ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু বাঁধার খুঁটি স্থাপন এবং নির্ধারিত রেইটে টোল আদায় নিশ্চিতকরণ । কিন্তু জেলার হাটগুলোয় এসব নিয়ম মানার কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD