March 28, 2024, 4:31 pm

বগুড়ায় ২ হাজার ইজিবাইক কে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়া শহরের তীব্র যানজট নিরসনে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহল। অচিরেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নীতিনির্ধারকরা। বগুড়ায় অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম বন্ধের মাধ্যমে যানজট নিরসনে ২ হাজার ইজিবাইককে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সাথে যানজট এর এই তীব্র সমস্যা নিরসনে বগুড়ার সকল মহলের প্রতিনিধিদের সন্মিলিত সিদ্ধান্তে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে মোট ২১টি সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। যার মাঝে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে প্রনয়ণকৃত ৯টি উদ্যোগ বৃহস্পতিবার থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে এবং শুধু ইজিবাইকের রেজিষ্টেশন এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে সম্ভাব্য আগামী ১৫ই জুলাইয়ের মাঝে। তবে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজি চালিত যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে মর্মেও সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

বগুড়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার দুপুর ৩টা থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ করতোয়ায় অনুষ্ঠিত বগুড়া শহরের তীব্র যানযটের কারণ ও সম্ভাব্য প্রতিকার বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো: জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে এবং জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম এর উপস্থিতিতে সভায় যানজট নিরসনে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাস্বরুপ প্রথম সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ইজিবাইকের রেজিষ্ট্রেশন এর বিষয়ে। প্রাথমিকভাবে শহরের সুশৃঙ্খল পরিবেশ প্রণয়নে বগুড়ার ধারণক্ষমতা বিবেচনায় সকল সড়ক মিলে বগুড়া পৌরসভার মাধ্যমে মোট ২ হাজার ইজিবাইককে রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হবে। আর অনুমোদন পাওয়া ইজিবাইকে জোড় সংখ্যা একদিন, বেজোড় সংখ্যা একদিন অথবা লাল ও সবুজ রং করে ভিন্ন ভিন্ন দিনে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রশাসনের স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যা হলোঃ ব্যাটারিচালিত চিকন চাকার রিক্সা মূল শহরে প্রবেশ করতে পারবে না তবে মূল শহরের বাইরে রিক্সাগুলো চলাচলের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, রেজিষ্ট্রেশানবিহীন কোন সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার শহরের মধ্যে চলাচল করতে পারবে না, রাস্তার উপর কোন সিএনজি স্ট্যান্ড, ইজিবাইক স্ট্যান্ড থাকতে পারবে না তবে দত্তবাড়ি স্ট্যান্ড নিয়ে কি করা হবে তা দ্রæত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, শহরের রাস্তা ও ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে, যত্রতত্র রাস্তায় গাড়ী, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন পার্কিং করা যাবে না আর করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে, সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত শহরে কোন ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না, বগুড়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘পার্কিং নিষেধ’ সম্বলিত সাইন বোর্ড এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেখানে রোড ডিভাইডার নেই, সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে রোড ডিভাইডার স্থাপন করা হবে যা দ্রæততম সময়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও যানযট নিরসনে অনুষ্ঠিত প্রাণবন্ত এই সভায় মধ্যমেয়াদী কিছু সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়। যেগুলো হলো, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিক্সার উৎপাদন, শোরুম ও চার্জিং স্টেশন বন্ধ করা হবে, বগুড়া জেলার সকল সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার রেজিস্ট্রেশনের আওতায় না আসা পর্যন্ত বগুড়া জেলায় সেগুলোর বিক্রি বন্ধ থাকবে, শহরে পার্কিং জোনের সংখ্যা বাড়ানো হবে, যেসব স্বল্প আয়ের মানুষ রাস্তা ও ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করে তাদের জন্য বিকল্প স্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে মাটিডালি থেকে বনানী পর্যন্ত টাউন সার্ভিসের ব্যবস্থা করা যায় কি না সেই প্রসঙ্গে! যা বাস্তবায়নে সভায় জেলা প্রশাসক মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দদের দ্রুততম সময়ে পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন।

এছাড়াও যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয় যা হলোঃ শহরে বিকল্প রাস্তা তৈরী করা, করতোয়া নদীর ধার দিয়ে মাটিডালি থেকে বনানী পর্যন্ত রাস্তা তৈরী করা যেতে পারে, শহরের চেলোপাড়া থেকে কাটনারপাড়ায় আসার জন্য একটি ব্রিজ করা যেতে পারে, বেশ কিছু সংখ্যক স্থায়ী পার্কিং জোন তৈরী করা যেতে পারে, দরিদ্র জনগণের জন্য ব্যাপকহারে বিকল্প কর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি করণ যাতে তারা ইজিবাইক এবং ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালনার পেশায় না আসেন এবং সকল স্তরের জনগণকে নিয়ে কমিউনিটি ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে এবং ট্রাফিক আইন ব্যাপক আকারে জনসাধারণের মাঝে প্রচার করতে হবে এবং তাদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে। এছাড়াও সভায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু যানজট নিরসনে উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করেন যার মাঝে শহরে ৩টি রেলওভার ব্রিজ নির্মাণ করা, জেলা কারাগার শহরের বাহিরে স্থানান্তর করা, বড়গোলা থেকে কাঁঠালতলা যাওয়ার রাস্তা যানযটমুক্ত করতে পাইকারী বাজার সম্প্রসারিত পৌর এলাকায় স্থানান্তর করা উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব।

আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে ইজিবাইক ও সিএনজির লাইসেন্স নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য দেড় মাস সময় নির্ধারণ করেন। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার থেকেই স্বল্পমেয়াদী অন্যান্য সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি চালিত যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনার কথা বলেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সালাহউদ্দিন আহম্মেদ এর সঞ্চালনায় সভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে আরো বক্তব্য রাখেন বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা, জেলা মটর মালিক গ্রæপের নেতা আকতারুজ্জামান ডিউক ও তৌফিক হাসান ময়না, চেম্বার অব কমার্স এর পক্ষে এনামুল হক দুলাল, জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হামিদ মিটুল ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহম্মেদ মিঠু, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, বিআরটিএ বগুড়া সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ময়নুল হাসান, বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজা, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম, বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ, জেলা ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি মাইসুল তোফায়েল কোয়েল প্রমুখ। উল্লেখ্য, বগুড়া শহরের তীব্র যানজটের কারণ ও সম্ভাব্য প্রতিকার বিষয়ে গত ২৭শে ফেব্রæয়ারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কে প্রধান করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যানজট নিরসনে যে কমিটি সন্মিলিতভাবে গত ৮ই মার্চ ৩ মেয়াদভিত্তিক উপরোক্ত ২১টি সুপারিশমালা প্রদান করেছিলেন যা নিয়ে বুধবার চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD