December 7, 2023, 3:58 am
যমুনা নিউজ বিডিঃ আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। উন্নত জীবনের আশায় ইট পাথরের পাকা বাসস্থানের পেছনে ছুটছে মানুষ। এতে করে কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক মাটির ঘর।
একসময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতেই দেখা মিলতো মাটির ঘরের। তবে নগর জীবনের ছোঁয়া লেগেছে এ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে পাল্লাদিয়ে জীবনমান উন্নয়নে ইট পাথরের বাসস্থান তৈরিতে ব্যস্ত সবাই। মাটির ঘরের জায়গা দখল করে নিয়েছে ইট-পাথরের তৈরি দালান। এতে করে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের মাটির ঘর। কিছুদিন আগেও রূপগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর চোখে পড়তো। তবে এখন সেসব ঘরের জায়গা দখল করে নিয়েছে দালানকোঠা।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মাটির ঘরে বসবাস করে আসছে। মাটির সহজলভ্যতা, প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে বেশ আগ্রহী ছিল। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগতো দুই থেকে তিন মাস। কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা না থাকায় কারিগররাও এই পেশা ছেড়ে অন্য অন্য পেশায় জড়িয়ে পরেছে।
মাটির ঘর শীতের সময় উষ্ণ, আর গরমের সময় শীতল থাকে। তাই মাটির ঘরকে গরিবের এসিও বলা হয়ে থাকে। কাদামাটি দিয়ে দেড় থেকে দুই ফুট চওড়া করে ৮ থেকে ১০ ফিট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে টিনের ছাউনি দিয়ে মাটির ঘর তৈরি করা হতো। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসব এলেই কাঁদামাটির প্রলেপের মাধ্যমে গৃহিণীদের হাতের ছোঁয়ায় সেই মাটির ঘরের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ হয়ে যেত। মাটির ঘরকে ভেতর ও বাইরে থেকে আরও আকর্ষণীয় করতে আল্পনা আঁকাতেন গৃহীনিরা। কেউবা এই মাটির ঘরে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে আরও মজবুত করে তাতে রং বা চুন লাগিয়ে দৃষ্টি নন্দন করতো। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিলনা এটি মাটির ঘর না পাকা দালান বাড়ি।
তারাব পৌরসভার কর্নগোপ এলাকার গৃহিণী সাহিদা বেগম বলেন, ৩০ বছর ধরে মাটির ঘরে বসবাস করছি। দুই ছেলেকে পাকা ঘর করে দিয়েছি। আমরা মাটির ঘরেই থাকি। মাটির ঘরে গরমের সময় গরম লাগে না। শীতের সময় শীত লাগে না। মাটি ঘরে থাকা খুবই আরামদায়ক।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের প্রবীণ আব্দুল আউয়াল মোল্লা (৭০) বলেন, জন্মের পর থেকেই মাটির ঘরেই বড় হয়েছি। এখনো মাটির ঘরেই থাকি। ছেলেদের ইট পাথরে পাকা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ওরা ওখানেই থাকে। আমরা বুড়াবুড়ি যতদিন বাঁচি বাবার ভিটা মাটির ঘরেই থেকে যাব।
উপজেলার মুড়াপাড়া ব্রাম্মনগাঁও এলাকার মাটির ঘর তৈরির কারিগর আনু মিয়া বলেন, এক সময় উপজেলায় মাটির ঘরের অনেক কদর ছিল। মাটির সঙ্গে পানি মিশিয়ে কাদা করে ৩-৪ দিন রেখে আবার সেই মটিতে পানি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে আঠালো করে তা দিয়ে ২ থেকে ৩ মাসে ঘর প্রস্তুত করতাম। রূপগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর ছিল। রুচিশীল মানুষরা এই ঘরে বিভিন্ন নকশা করাতো। অনেকে নকশার সাথে সাথে সিমেন্ট বালির প্রলেপ দিয়ে রঙ করাতো। দুর থেকে দেখে অবিকল পাকা ঘরের মতো লাগতো। বুঝাই যেতো না মাটির ঘর না পাকা ঘর। উপজেলায় এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ইট পাথরের বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। এখন মানুষ মাটির ঘর তৈরি করে না। তাই বাধ্য হয়েই পেশা পরিবর্তন করে রাজমিস্ত্রির কাজ করছি।
সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের মার্কেটিং বিভাগীয় প্রধান ফয়েজ মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, মাটির ঘর পরিবেশবান্ধব। এক সময় রূপগঞ্জের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর শোভাপেতো। শৈশবে আমিও মাটির ঘরে থেকেছি। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই পরিবেশবান্ধব বাসস্থান এখন আর নতুন করে তৈরি করতে দেখা যায় না। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মাটির ঘর।