October 4, 2024, 11:32 am
কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর মাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
তাকে পুলিশে প্রহরায় কাহালু উপজেলা সদরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ মে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ক্লাস শুরুর সময় রুমে ঢুকতে গেলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান তাকে বাধা দিয়ে বলে তুমি বাড়ি চলে যাও এবং তোমার অভিভাবককে ডেকে আন।
এরপর ওই শিক্ষার্থী ক্লাস না করেই বাড়ি চলে যায়। শিক্ষার্থীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় তার প্রতি এ ধরনের অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে ওই শিক্ষার্থী প্রথমে কাহালু থানায় গেলে পুলিশ তাকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট গিয়ে অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়। এরপর ওই শিক্ষার্থী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।
শিক্ষার্থীর মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোতাহার হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট জেলা শিক্ষা অফিসার নিকট জমা দেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বেশ কিছু সত্যতা মিলেছে।
এদিকে উল্লেখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সকালে ওই শিক্ষার্থী মনের ক্ষোভে ১৫ টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে বিদ্যালয়ে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ দ্রুত তাকে কাহালু হাসপাতালে এনে ভর্তি করে দেন।
বর্তমানে সে শঙ্কামুক্ত। শিক্ষার্থীর ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং প্রধান শিক্ষকের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের বাইরে এসে হাতে প্লাকাড নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা সহ পাঁচপীর মাজার রেলস্টেশনের পাশে প্রতাপপুর-লোকনাথপাড়া সড়কটি অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এ সময় প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের শান্ত না করে তিনি বিদ্যালয়ের মধ্যে তার অফিস কক্ষে অবস্থান করছিল। শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিচারসহ তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করার দাবি জানায়। এছাড়া তারা আরও দাবি করেন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অবস্থান করা কালীন কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে যাবে না। শিক্ষার্থীরা উল্লেখিত দাবি নিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা রাস্তায় অবস্থান করতে থাকে।
এদিকে সড়ক অবরোধের বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানতে পেরে দ্রুত সেখানে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় কাহালু থানার এস.আই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকালে দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান খান বদেরসহ দুর্গাপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বাদল তারাও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বের না করে দেওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে যাবে না। অবশেষে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রধান শিক্ষককে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিদ্যালয় ত্যাগ করার নির্দেশ দিলে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় থেকে বের হবার মুহুর্তে কিছু মারমুখী জনতার রোষাণালে পড়েন।
অবস্থা বিগতিক হওয়ায় তাকে পুলিশি প্রহরায় কাহালু উপজেলা সদরে পৌঁছে দেওয়া হয়। এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক একেএম ফজলে রাব্বিকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।
তবে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রধান শিক্ষকের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন যেহেতু বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি নেই সেজন্য সাথে সাথে তাকে বরখাস্ত করা যাচ্ছে না।
তবে তদন্তে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। দ্রুত তার শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় আসলে তারা ক্লাসে যাবে না এবং তারা এমন প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় দেখতে চায় না।