March 29, 2024, 10:12 am

ফেনীর ইতিহাসে খাজা আহমদ

ফেনীর ইতিহাসে খাজা আহমদ একটি জনপ্রিয় নাম মোস্তফা হোসেন। ফেনীর ইতিহাস লিখতে গেলে অনেকের নাম আসবে, তবে খাজা আহমদের নামটি আসবে সবার আগে ও আদর্শের। খাজা আহমদ জন্মগ্রহন করেন ফেনী শহরের রামপুর গ্রামে। পিতা মরহুম আছলাম মিয়া মোক্তার। খাজা আহমদ শৈশবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়েন। তিনি ১৯২০ সালে জন্মগ্রহন করেন। ২৬শে মার্চ-এই মাসে ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনা ও স্বাধীনতা দিবস, বঙ্গবন্ধর জন্মদিন ও একই মাসে, ১৯৭৬ সালে ২৯শে মে ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুবরণ করেন। খাজা আহমদ ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ফেনী জেলা গভর্ণর মনোনিত হন। ফেনী হইতে সাপ্তাহিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল ‘ল’ এর সময়ে। সাপ্তাহিক সংগ্রামে একটি নিউজ ছিলো দেশের চকিদার আজ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এরপর পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে তার সম্পাদনার সাহস জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া জাগায়। ফেনী সরকারী হাসপাতালে স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে খাজা আহমদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ করে ডাক্তার সাহেবকে নাজেহাল করার কারণে খাজা আহমদ, জয়নাল হাজারী, নুর মোহাম্মদ হাজারী, মাথিয়ারার বাহার ও আমি সহ অনেকেই গ্রেপ্তার হন। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন ও স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার মামলা প্রত্যাহার করেন। রিক্সা চালকের ভাড়া পরিশোধ না করা ও নির্যাতন করার কারণে তৎকালীন ই.পি.আরকে ফেনী রেল ষ্টেশনে প্রতিবাদ করেন খাজা আহমদ। রিক্সা ভাড়া আদায় করা হয়। খাজা আহমদ তখন রেল ষ্টেশনে বেচু মিয়া চা-দোকানে বসা ছিলেন। তখন রিক্সা চালক খাজা আহমদকে বিষয়টি জানালে খাজা আহমদ উক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। খাজা আহমদ পীর আওলিয়াদের ভক্তি করতেন। তিনি ফেনীর হযরত আমির উদ্দিন পাগলা মিয়া ও হযরত শাহ কামাল মামা শাহকে সম্মান করতেন। একবার ফেনীর কালীদহ আওয়ামী লীগের এক জনসভায় যাওয়ার জন্য ফেনী রেল ষ্টেশন হইতে কালীদহ রেল ষ্টেশনে তিনি ও আবদুল মালেক উকিল সহ ১৭ জন বিনা টিকেটে ভ্রমন করেন। ট্রেনে টিকেট কাটার সময় ছিলো না। পরে তিনি কালীদহ হইতে আবার ফেনী আসার জন্য ৩৪ টি টিকেট কাটেন (১৭+১৭)। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমরাতো মানুষ ১৭ জন, ৩৪টি টিকেট কেন? তিনি আমার কান ধরে বললেন আসতে ১৭ জনের টিকেট কাট নাই। তখন বুঝলাম আসতে ১৭ জন হইলে যাইতে ১৭ জন মানুষ হইলে টিকেট ৩৪টি। যার ফলে সরকারের সম্পূর্ন পাওনা ৩৪ টিকেট ক্রয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা হইল রেলওয়ের পাওনা। এই হল খাজা আহমদ। ১৯৭১ সালে ১লা মার্চ খাজা আহমদ সহ আমরা ঢাকায় ছিলাম। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করলেন। তখন ঢাকা ষ্টেডিয়ামে কিক্রেট খেলা চলছিলো। খেলার দর্শকেরা খেলা দেখা বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ (জিন্নাহ এ্যাভিনিউ) মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে শ্লোগানে আওয়াজ করলো ইয়াহিয়া খানের ঘোষনা, মানি না, মানব না, পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা। তখন বঙ্গবন্ধু হোটেল পূর্বানীতে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষেদের সদস্যদের নিয়ে সভা করছিলেন। জনতা পূর্বানী হোটেল গেইটে গেলে-শ্লোগান হল ইত্যাদি। এই রাতে খাজা আহমদ ফেনী রওয়ানা হলেন। ২ তারিখ সকালে খাজা আহমদ ফেনীতে জনতাকে নিয়ে মিছিল, মিটিং করলেন। আমি ৩/৪ মার্চ ফেনী এসে খাজা সাহেবের সাথে যোগদান করলাম। তখন আমি খাজা সাহেবের বাঁশপাড়া কোয়াটারের বাসায় থাকতাম। তার কিছুদিন পর খাজা আহমদের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য পবিত্র কোরআন শপথ করলাম। বর্তমানে আবদুর রহমান বি.কম ও আমি আল্লাহর রহমতে জীবিত-আপনাদের দোয়া চাই। খাজা আহমদ এমন একটি সংগ্রামী নাম। যেই কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের ফেনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। সবার আগেই মিছিল, মিটিং এ থাকতেন। খাজা আহমদ সম্পাদিত সাপ্তাহিক আমার দেশ পত্রিকা তৎকালীন বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক আন্দোলনের মুখপাত্র হিসাবে ফেনীতে প্রকাশিত হইত। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন শ্রী শ্রীদাম চন্দ্র দাস। আমার দায়িত্ব বার্তা সম্পাদক রিপোর্টারসহ সংগ্রহ করা। ১৯৬৬ সাল হইতে ১৯৭৩ সাল নাগাদ আমি দৈনিক ইত্তেফাকের ফেনী মহকুমা প্রতিনিধি। তখন ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের দপ্তার সম্পাদক ও বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক ও শ্রমিকলীগের ফেনী মহকুমা সম্পাদক। খাজা আহমদ ফেনীর রাজা, ফেনীর মুকুটহীন সম্রাট। চিরকুমার খাজা আহমদ তাই সকলের নিকট আমার আবেদন খাজা আহমদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যে খাজা আহমদকে জান্নাতবাসী করেন। খাজা আহমদের মত রাজনৈতিক নেতা দেশবাসীর পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এমন নেতা বিরল ও পাওয়া যাবে না। খাজা আহমদ ফেনীর রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের যেই শিক্ষা দিয়াছেন তারা যদি খাজা আহমদকে অনুসরন করেন তাহলে ফেনীর রাজনীতি অন্যদের জন্য অনুকরনীয় হবে। ফেনীর মানুষ রাজনৈতিক সুফল পাবে। খাজা আহমদ কেন বিয়ে করেন নাই তার মুখে শুনা বিষয় নিয়ে আজকের লেখা শেষ করব। ১৯৪৩ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন তিনি কুমিল্লা জেল হইতে মুক্তি লাভ করেন। জেল হইতে বাহির হইতে সন্ধা হয়ে যায়। যার ফলে তিনি কুমিল্লা হইতে ফেনী আসতে পারেন নাই। ঐ রাতে তিনি তার এক বন্ধুর বাসায় থাকেন। বন্ধুরা কুমিল্লাতে দুর্ভিক্ষকালীন মানুষকে খাদ্য বিতরণ করিতেন। খাজা আহমদ বন্ধুর সাথে খাদ্য বিতরণ দেখতে বাহির হলেন। খাদ্য যেইখানে বিতরণ হইতেছে, সেইখানে খাজা আহমদের মায়ের মত একমহিলা খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সেই দিন খাজা সাহেব সিদ্ধান্ত নেন, যতদিন এই দেশের গরীব মানুষের মুখে ভাত তুলে দিতে না পারেন ততদিন তিনি বিয়ে করবেন না। এই হল খাজা আহমদ। পরিশেষে স্মরণ করছি মুরুব্বী আলহাজ ছৈয়দ আহমদ, এম.এস হুদা, আবদুল মালেক, শ্রীদাম চন্দ্র দাস, চেয়ারম্যান ছিদ্দিক আহমদ (ষ্টেশন রোড), ছালেহ আহমদ, পেয়ার মিয়া, ছুফি ইসহাক, সুজাত আলী, ডিলার ছালামত উল্ল্যা, জানু মিয়া ও অদু মিয়া, এ.কে.এম সামছুল হক, মনা মিয়া (বর্তমান নবী হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা), আবদুল ওহাব, বড় বক্কর, তোফাজ্জল হোসেন, হেকিম মুন্সী, বতু দরবেশ, লাকী সুলতান আহমেদ, ওয়াজি উল্লা (রামপুর)

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD