March 29, 2024, 1:50 pm

কুড়িগ্রামের ৪০ গ্রাম প্লাবিত, ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : টানা বর্ষণ ও ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে কুড়িগ্রামের সীমান্তঘেঁষা রৌমারী উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের কমবেশি ৪০টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে নিদারুণ কষ্টের মুখে রয়েছেন।অন্যদিকে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ক্রমেই বাড়ছে। তবে এখনো এসব নদনদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা জিঞ্জিরাম, ধরনী ও কালজানি নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত লাগোয়া রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা ও যাদুরচর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মেঠোপথ তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ফলে এসব ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির মুখে রয়েছেন। এসব এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা। আকস্মিক পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় জমির বাদাম, পাট, সবজিসহ চর এলাকার বিভিন্ন প্রকার ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

রৌমারী উপজেলার শৌলমারী এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রামের মানুষজন। নৌকায় করে যাতায়াত করছেন এসব এলাকার মানুষ। বাদাম, পাট ও সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। শৌলমারী ইউনিয়নের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জমির বাদাম ও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছি। রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্যা উপজেলার ৩৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানান।

এছাড়া উপজেলার ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় এগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রয়েছে বলে শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, রৌমারী উপজেলার ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম রাসেল জানান, বৃষ্টির সঙ্গে নেমে আসা উজানের পানিতে রৌমারী উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা নিরূপণে প্রশাসন কাজ করছে। এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য পৌঁছায়নি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্যা আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০৬ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢলে ও বৃষ্টিতে রৌমারী উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে পানি ঢুকে পড়লেও আপাতত বড় ধরনের কোনো বন্যার সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী ২০ থেকে ২৫ জুনের মধ্যে একটি বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে বলে তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD