July 27, 2024, 5:44 am

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তালুকদারের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ষ্টাফ রিপোর্টার:  আজ ৪ জুন ২০২৪  মঙ্গলবার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক দৈনিক উত্তরকোণ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তালুকদারের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তালুকদার সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সিরাজুল হক তালুকদারের জ্যেষ্ঠপুত্র, সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বড় ভাই।
তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৪ জুন শুক্রবার দিনব্যাপী কলাকোপা বেগম হায়াতুন নেছা সিরাজুল হক হাফেজিয়া মাদ্রাসায় কুরআন খতম, বাদ আছর দক্ষিণ বগুড়া গোরস্থান বায়তুর রহম মসজিদে (ভাই পাগলা মাজার মসজিদ) দোয়া মাহফিল এবং বাদ মাগরিব কলাকোপা বায়তুস সূজূত জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তালুকদারের সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তালুকদার বগুড়ার একজন প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি শুধু বয়সেই প্রবীণ নয় বগুড়া বর্তমানে যত সাংবাদিক রয়েছে তিনি তাঁদের মধ্যে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। ১৯৫৭ সালে স্কুলে পড়ার সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদের সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন। তারপর তিনি দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক বার্তা সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের বগুড়া প্রতিনিধি হিসেবে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংবাদ সংস্থা বাসসেরও বগুড়া প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৮২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর বাংলাদেশ বেতারের বগুড়া প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে, দেশ স্বাধীন হবার ১৯৭১ সালে বগুড়া থেকে দৈনিক বাংলাদেশ নামের একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলে তিনি সেই পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার ও পরে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন দৈনিক করতোয়ার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক মুক্তবার্তার বার্তা সম্পাদক এবং দৈনিক উত্তরাঞ্চলের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে দৈনিক উত্তরকোণ পত্রিকার যাত্রা শুরু হলে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দৈনিক উত্তর কোণ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কমর্রত ছিলেন।

সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০২ স্বল্পোন্নত দীর্ঘ ৩৫ বছর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে সুনামের সাথে অধ্যাপনা করেছেন। সমাজসেবামূলক কাজেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন বগুড়া রোটারি ক্লাবের সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন বগুড়ার লায়ন্স ক্লাবের সদস্য ছিলেন। এই দুটি সংগঠনের সদস্য থাকাকালে তিনি উভয় সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুঃস্থ মানবতার কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। এছাড়া ২০০৬-২০০৭ সালে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩২৮০ এর অ্যাসিস্ট্যান্ট গভর্নর ও ২০০৯-১০ সালে ডেপুটি গর্ভনর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি উত্তরাঞ্চলের দুঃস্থ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে অনেক জনহিতকর কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি রেড ক্রিসেন্ট, এফপিএবি, বগুড়া ডায়াবেটিক সমিতি, শাহ সুলতান চক্ষু হাসপাতাল, বগুড়া স্টেশন ক্লাব, উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরী, বগুড়া হার্ট ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্য।

এছাড়া তিনি বগুড়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি দেশের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির অবৈতনিক মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, পরিবার কল্যাণ, বাল্যবিবাহ রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রজন্ম স্বাস্থ্য, এইচ আই ভি এইচ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কলাকোপা হাইস্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও এফপিএবি, বগুড়া শাখার সভাপতি এবং বগুড়া ডায়াবেটিক সমিতির কমিটির কোষাধক্ষ্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি সরকারি আজিজুল হক কলেজে অধ্যায়নকালে ১৯৬২ ও ১৯৬৩ সালে কলেজ ছাত্র সংসদের বিভাগীয় সম্পাদক ও ১৯৬৪ সালে ভিপি পদে নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গাবতলী ও সারিয়াকান্দি থানা এলাকায় সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং সেসব এলাকার যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে যোগদানের লক্ষ্যে কিছু যুবকদের তিনি আসামের মানকেরচডে পৌঁছে দেন। ক্রীড়াবিদ হিসেবে ও তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশেষ করে সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় তিনি ছিলেন একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও চৌকস খেলোয়াড়। তিনি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভলিবল ও ক্রিকেট সম্পাদক ছাড়াও যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জেলার খেলাধুলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশ ভ্রমণ তার অন্যতম হবি।

তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও সার্ক কান্ট্রি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ একাধিকবার সফর করেছেন। তার সাংবাদিকতা ও সমাজ কল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত রোমেনা আফাজ স্মৃতি পরিষদ, ঢাকাস্থ বগুড়া সমিতি, বগুড়া হোমিও রিসোর্স সেন্টার, হাজী জয়নাল আবেদীন কমার্স কলেজ ও ভারতের উত্তরবঙ্গ নাট্য পরিষদ কর্তৃক তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তালুকদার সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সিরাজুল হক তালুকদারের জ্যেষ্ঠপুত্র, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বড় ভাই। তার স্ত্রী অধ্যাপিকা ফজিলাতুন নেছা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণের পর গাবতলী মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসর গ্রহণ করেন। মরহুম মোজাম্মেল হক তালুকদার এক সন্তানের জনক।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD