February 9, 2023, 11:46 am
চট্রগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা শতাধিক মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভারের মতো গাড়ি বার বার নিলাম ডেকেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে ২৫টি মার্সিডিজ বেঞ্জ, ২৫টি বিএমডব্লিউ, ৭টি রেঞ্জ রোভার, ৭টি ল্যান্ড ক্রুজার, ৬টি লেক্সাস, ৫টি ফোর্ড, ২৬টি মিৎসুবিসিসহ নামিদামি ব্র্যান্ডের ১০৮টি গাড়ি। সময়ক্ষেপণ, সিদ্ধান্তহীনতা ও সিন্ডিকেটের কারণে বিলাসবহুল গাড়িগুলোর এমন সর্বনাশ হচ্ছে বলে জানা যায়। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের চত্বরেই নষ্ট হচ্ছে ৩শ কোটি টাকা মূল্যের দামি গাড়িগুলো। অথচ ওসব গাড়ি বিক্রির দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া গেলে তা থেকে শতকোটি টাকা রাজস্ব পেত সরকার। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পর্যটশরা প্রায় ১০ বছর আগে পর্যটক সুবিধার সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ওসব গাড়ি আমদানি করেছিল। তারা শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে ওসব গাড়ি দেশে হাতবদল করতো। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে গাড়ি খালাসে ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেয়ার শর্তারোপ করে। ফলে গাড়িগুলো আর খালাস না করে তারা বন্দর চত্বরেই ফেলে রাখে। কাস্টমসের নিয়ম অনুযায়ী এওসব গাড়ি নিলামে তুলে বিক্রি করার কথা। ওই লক্ষ্যে কাস্টমস বেশ কয়েক দফা গাড়িগুলো নিলামেও তুলেছিল। কিন্তু নানা কারণে ওসব গাড়ি নিলামে বিক্রি হয়নি। গাড়িগুলো এখনো চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মধ্যে পড়ে আছে। ওসব গাড়ি জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। বয়স ১১ থেকে ২৫ বছর।
সূত্র জানায়, গাড়ি নিলামের আগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একটি ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করে। সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে তা করার কথা থাকলেও যথাযথভাবে তা হচ্ছে না। আর গাড়ির লাইফটাইম যতো কমবে গাড়ির দামও ততো কমতে থাকে। তাছাড়া দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ওসব গাড়ির অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে চাবিও। নিলামে তোলা গাড়ির মধ্যে রয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার রেঞ্জ রোভার, ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার মিৎসুবিসি জিপ, ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার মার্সিডিজ বেঞ্জ জিপ, ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ল্যান্ড রোভার জিপ, ২ কোটি ১২ লাখ টাকার লেক্সাস জিপ, ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মিৎসুবিসি পাজেরো, ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ, ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার মিৎসুবিসি শোগান, ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ এক্স ফাইভ জিপ স্পোর্টস।
সূত্র আরো জানায়, পুরোনো ওসব গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে নতুন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। যদি বিআরটিএর সঙ্গে কথা বলে ওই জটিলতা দূর করা যায় তাহলে নিলামে এবার গাড়িগুলোর ভালো দাম উঠতে পারে। আবার নিলামের ক্ষেত্রে সংযোজিত পণ্যের মূল্যের ৬০ শতাংশ কাভারেজ করার নিয়ম রয়েছে। বিলাসবহুল ওসব গাড়ির ৬০ শতাংশ মূল্য কাভারেজ করতে গেলে ভ্যাটসহ ৪ কোটি টাকার গাড়িতে অন্তত ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্য দিতে হবে। অথচ কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই পুরোনো গাড়ি দেশে এক কোটি টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। সেজন্য ৬০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের বিষয়টি অবমুক্ত চায় ব্যবসায়ীরা। বিগত ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ৮৫টি গাড়ি একসঙ্গে নিলামে তোলা হয়েছিল। সেবার ২৬টি গাড়ির আগ্রহী কোনো ক্রেতা ছিল না। অবশিষ্ট ৫৯টি গাড়ি কিনতে সেবার ব্যবসায়ীরা দর দিয়েছিল মাত্র ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ওই নিলামে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মাত্র তিনটি গাড়িতে প্রত্যাশিত দাম পেয়েছে। প্রথম নিলামে কাক্সিক্ষত দর না পাওয়ায় ২০১৭ সালের আগস্টে আগের ৮৫টিসহ একসঙ্গে ১১৩টি গাড়ি নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। কিন্তু দ্বিতীয় নিলামেও ২০টি গাড়ির জন্য আগ্রহী কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। অবশিষ্ট ৯৩টি গাড়ির দাম উঠেছে মাত্র ২৭ কোটি টাকা। তাই ২০১৮ সালে একই গাড়ি তৃতীয় নিলামে তোলা হয়। তাতে ১১১টি গাড়ির মধ্যে ৫৬টিতে আগ্রহী কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। অবশিষ্ট ৪৫টি গাড়ির দর উঠেছে মাত্র ৭ কোটি ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। দ্বিতীয় নিলামের তুলনায় তৃতীয় নিলামে গাড়ির দাম কম পড়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় গত ৪ নভেম্বরের নিলাম অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে খুব শিগগিরই চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা ১০৮টি গাড়ি নিলামে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। গতবার ১১২টি গাড়ি নিলামে তুললেও মাত্র ৩টি বিক্রি হয়েছে। সেবার ২০টি গাড়ির সিপি (ক্লিয়ারিং পারমিট বা ছাড়করণ অনুমোদন) নেয়া ছিল। এবারে নিলামে তোলার আগে সব গাড়ির সিপি পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার ফখরুল আলম জানান, গাড়িগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে অনেকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও ভালো সাড়া মিলেছে। আশা করা যায়, এবারের নিলামে গাড়িগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে।