October 26, 2024, 4:48 pm

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ডাটা এন্ট্রি/কম্পিউটার অপারেটররা আদালতের শরণাপন্ন

সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার: প্রায় ২০০০ সাল থেকে দেশের ৬৪টি জেলায় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সমূহে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত ৫১ জন ডাটা এন্ট্রি/কম্পিউটার অপারেটররা দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে সুচারুভাবে প্রবাসগামী শতশত কর্মীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ফিংগার প্রিন্ট কার্যক্রম দ্রুততার সাথে পরিচালনা করলেও এই দীর্ঘ সময়েও তাদের নিয়োগ স্থায়ীকরণ হয়নি। উপরোন্ত প্রত্যেক অফিসে কর্মরত অপারেটরদের স্থলে নতুন করে কর্মচারী নিয়োগের জন্য অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রত্যেক কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে চরম হতাশা ও অনিশ্চিয়তা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে ডাটা এন্ট্রি/কম্পিউটার অপারেটরদের সাথে কথা বললে তারা জানান, বিগত ২০০০ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলা অফিসে অস্থায়ী ভিত্তিতে ডাটা এন্ট্রি/কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ করা হয়। শুরু থেকেই মাসিক নামমাত্র ২০০০-৫০০০ টাকা সম্মানী ভাতা নির্ধারণ করা হয়। তার পরও ভবিষ্যতে চাকুরী স্থায়ী হওয়ার আশায় অনেক কষ্ট করেও আমরা প্রবাসী কর্মীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ফিংগার কার্যক্রম দায়িত্বশীলতার সাথে সম্পন্ন করে আসছি। বরং অফিসে দীর্ঘসময় অবস্থান করে সুচারুরূপে কাজগুলো সম্পন্ন করায় আমাদের বিকল্প কাজের কোন সুযোগ থাকে না। ফলশ্রুতিতে চরম আর্থিক দৈনতা সত্বেও পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করা সত্বেও আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অদ্যাবধি পালন করে যাচ্ছি। ডাটা এন্ট্রি/কম্পিউটার অপারেটররা আরও বলেন, ২০০৮ সালে ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড পরিচালনা বোর্ডের ১৮৯ সভায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার/ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের বেতন সুষমকরণের প্রস্তাব উত্থাপন পূর্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের জন্য বোর্ড কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৩তম সভায় বিষয়টি পুনরায় উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে আমাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের নিমিত্তে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সদয় বিবেচনালক্ষ্যে আমরা আমরা ২০১৭ সালে ১৭ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বরাবর আমাদের বর্তমান দুরাবস্থা তুলে ধরে একটি আবেদন করি। অথচ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে উপরোন্ত নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় আমরা চরম ভাবে হতাশ। শুধু তাই নয়, বর্তমানে ৬৪টি জেলা অফিসে কর্মরত প্রায় ৫১ জন ডাটা এন্ট্রি/কম্পিউটার অপারেটরের চাকুরীচ্যূতির আশংকায় তারা নিজেরা সহ পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিক সদস্য চরম অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কে ভুগছে।

একাধিক ডাট্ াএন্ট্রি অপারেটর বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সমূহে সহকারী পরিচালকদের নির্দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবাসগামী কর্মীদের জরুরী টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা তৎপর ছিলাম। এমনতর পরিস্থিতিতে অদ্যাবধি চাকুরী স্থায়ী করণ না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। উপরোন্ত প্রত্যেক জেলা কর্মসংস্থান অফিসে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বহাল রেখে তাদের স্থলে নতুন করে কর্মচারী নিয়োগের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, ঢাকা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (কর্মসংস্থান) ও আহ্বায়ক, বিভাগীয় নির্বাচন কমিটি এ এইচ এম আনোয়ার পাশা (যুগ্ম সচিব) স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চলতি বছরে ৯ মে প্রকাশ করে। এতে করে সারাদেশে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সমূহে কর্মরত প্রায় ৫১ জন কর্মী ও তাদের পরিবারে বিরাজ করছে চরম হতাশা। শুধু তাই নয়, নিজেদের পেশার অস্থিত্ব রক্ষায় বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ স্ব-স্ব অফিসে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীরা চলতি বছরের ১০ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন করেছেন। এবিষয়ে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস গোপালগঞ্জে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর রায়হান শেখ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা শ্রম-মেধা-সময় ব্যয় করে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছি। অথচ ১৮/২০ বৎসর যাবৎ অফিসে কর্মরত থাকা সত্বেও চাকুরীস্থায়ীকরণ না করেই নতুন করে অত্র পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় কর্তৃপক্ষ শুধু আমাদের সঙ্গে তামাশা করেনি উপরোন্ত আমাদেরকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা উচ্চ আদালতে এর প্রতিকার পেতে রিট করেছি।

একই ভাবে জনশক্তি কর্মসংস্থান অফিস বগুড়ায় কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বাবু বলেন, দীর্ঘসময় ধরে আমরা প্রচন্ড কষ্ট স্বীকার করেও কর্মে নিয়োজিত রয়েছি। বর্তমান বাস্তবতা এমন যে অন্যকোন পেশায় আমরা নিজেদের খাপ খাওয়াতেও পারব না। তাই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন মানবিক দিক বিবেচনা করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত পূর্বক জরুরী ভিত্তিতে আমাদের চাকুরী স্থায়ীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। নতুবা আমরা নিজেদের পেশার অস্থিত্ব রক্ষায় আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করতে বাধ্য হব। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অস্থায়ী ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের দাবী যুক্তিসংগত। কেননা দীর্ঘ ১২/১৩ বৎসর যাবৎ তারা কাজ করায় তাদের যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেটা নতুন করে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মীর পক্ষের স্বল্প সময়ে স্কিল ডেভেলপ করা সম্ভব হবে না। তাই অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের স্থায়ীকরণ করলে দাপ্তরিক কার্যক্রম আরও বেগবান হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD