April 19, 2024, 7:38 pm

রাজশাহীতে এবার ৯০২ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা

যমুনা নিউজ বিডিঃ আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীতে শুক্রবার (১৩ মে) থেকে চলতি মৌসুমের আম নামানোর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এই মহাউৎসব চলবে আগামী ২০ আগস্ট পর্যন্ত। আর এই কর্মযজ্ঞ শুরু হলো গুটিজাতের আম বাজারজাত করণের মধ্য দিয়ে। তবে এই কর্মযজ্ঞের প্রথম দিন শুক্রবার বিকেলে যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি। এ প্রতিবেদন শুক্রবার সন্ধ্যায় লেখা পর্যন্ত দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি চলছিল। তারপরেও এদিন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ^র বাজারে গুঠি আম বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। আর কাচামিঠা প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং আঁটি আম বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আর রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিকটন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৬০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ মে) রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জাতের আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী তিন ধাপে গাছ থেকে আম নামাতে পারবেন চাষীরা। এর মধ্যে, ২০ মে গোপালভোগ, ২৫ মে লক্ষনভোগ ও রাণিপছন্দ, ২৮ মে খিরসাপাত বা হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আ¤্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও সর্বশেষ ২০ আগস্ট ইলমতি আম নামাতে পারবেন চাষিরা। আর বিশ^ করোনা মহামারীর ক্ষতি পুশিয়ে নিতে এবার আম ব্যবসায়ীরাও আটঘাট বেধেই প্রস্তুতি নিয়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন কম। প্রকৃতিগতভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন হওয়ায় রাজশাহীর আমবাগানগুলোর গাছে মুকুল কম আসায় আমের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারী ও আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাস পড়ে যাওয়ার কারণে চাষিরা ন্যায্য মূল্য পায়নি।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে (১৭ হাজার ৯ শত ৪৩ হেক্টর) আমের চাষ হয়েছিল। আর গেল মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ মেট্রিকটন আম। গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা বেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদপ্তর। সেই হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিকটন।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সে অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে। এবার রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগরীর ১২টি থানার মধ্যে ২টি থানা এলাকায় মোটামুটি আমের চাষ হয়ে। তবে রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় বাঘা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাঘা উপজেলায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৯৬ হাজার ৮৪১ মেট্রিকটন (হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১১.৩০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া জেলার চারঘাটে ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ২৮৪ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১১.৪০ মেট্রিকটন), পুঠিয়ায় ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৫১৩ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিকটন), গোদাগাড়ীতে ১২২০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৮২৩ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ১৭৮ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৭০ মেট্রিকটন (হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১২.২০ মেট্রিকটন), বাগমারায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৮৬৪.৭৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), মোহনপুরে ৪০৭ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯৫৩.১৯ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৭ মেট্রিকটন), তানোরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৩২৬ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.০২ মেট্রিকটন), মহানগরীর মতিহারে ১৩৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৬৪১ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৬ মেট্রিকটন) এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৮৮৩.৩০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাগান মালিক আরেজ আলী বলেন, এবার ১০ বিঘা জমির আমবাগানের প্রায় দুই শতাধিক গাছে আম ধরেছে। গত কয়েক বছর ফলন ভালো হলেও করোনা ও রোজার কারণে আমের দাম পাইনি। তবে এবার ফলন কম হলেও আমের ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের আম ব্যবসায়ী মাকসুদুল আলম বলেন, গত বছর করোনার কারণে ব্যবসায় কিছুটা লোকসান হয়েছে। তবে এবার হয়তো আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।
রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলীম উদ্দীন বলেন, সামগ্রীক অর্থে রাজশাহীতে এবার আম বাগানের পরিধি বেড়েছে। ফলে এ মৌসুমে ফলন কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছি। এছাড়া এবার ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব সেভাবে না হওয়ায় আমের গুটিও কম ঝরেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন। স্বভাবতই কোন বছর আমের বাম্পার ফলন হলে পরের বছর কিছুটা কম হয়। যেটি এবার হয়েছে। তবে চাষিরা এবার দাম ভালো পেলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
রাজশাহী কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. মোজদার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন থেকে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৫৭২ হেক্টর বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৫২ মেট্রিকটন আম কম উৎপাদন হতে পারে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার আমের দাম চড়া যাবে। সেই দিক বিবেচনায়, আমচাষিরা বেশ লাভবান হবে বলে আশা করি।
আম বাজারজাত করণ বিষয়ে রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারে আমের বাজারজাতকরণে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। আর বেঁধে দেয়া তারিখের আগে কোনো আমচাষি আম নামালে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে ফরমালিনমুক্ত আম বাজারজাত করণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান টিম সব সময় মনিটরিং করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD