September 24, 2023, 4:30 am

উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠের জন্মদিন আজ

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারখ্যাত বগুড়ার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি আজিজুল হক কলেজের আজ ৮৪ তম জন্মদিন। ১৯৩৯ সালের ৯ জুলাই প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান আয়তন ৬৩ একর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলায় প্রথম সম্মান কোর্স চালু করেছিল এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন ড. এম এম মুখার্জি ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন শ্রী এস. পি সেন।

অবিভক্ত বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্যার মুহাম্মদ আজিজুল হকের নামে এ প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়। তখন তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে এ কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন। কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক শাহেদ আলী ও কবি আতাউর রহমান। শিক্ষার্থীদের তালিকায় আছেন কণ্ঠশিল্পী শওকত হায়াত খান, কবি মহাদেব সাহা, ভাষাসৈনিক গাজীউল হক, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ড. এনামুল হক, শিক্ষক মমতাজুর রহমান তরফদার প্রমুখ।

বর্তমানে সরকারি আজিজুল হক কলেজে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দুটি ক্যাম্পাস চালু রয়েছে। যার একটি ক্যাম্পাস ফুলবাড়িতে অন্যটি কামারগাড়িতে। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থার জন্য রয়েছে ৫ টি হল যার মধ্যে শহীদ আকতার আলী মুন, শের-ই বাংলা ও শহীদ তিতুমীর হল ২০০৯ সাল থেকে বন্ধ আছে। চালু আছে বেগম রোকেয়া হল ও ফখরুদ্দিন আহমদ হল।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের’ (আইসিএমএবি) কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (সিএমএ) কোর্স চালুর জন্য সমঝোতা স্বাক্ষর ছাড়াও নতুন আরেকটি ভবনে ১৯ টি নতুন অনার্স কোর্স চালুরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ।

শিক্ষার মান ধরে রাখায় এ প্রতিষ্ঠানটি উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল ছাড়াও এডমিশন রেজাল্টে প্রতিবছর এগিয়ে থাকে। ২০১৬ সালে কলেজ র‌্যাংকিংয়ে জাতীয় পর্যায়ে ৫ম স্থান এবং ২০১৮ সালে ৩য় স্থান অধিকার করে আজিজুল হক কলেজ।

২৩ টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের পাশাপাশি বি.এস.সি, বি.এ, বিএস.এস ও বি.কম কোর্স চালু আছে। এছাড়াও রয়েছে বিএনসিসি, রোভার, স্কাউট, রক্তদাতা সংগঠন বাঁধন, কলেজ থিয়েটার, পরিবেশবাদী সংগঠন তীর, রেড ক্রিসেন্ট, পুণ্ড্র ডিবেটিং ক্লাবের মতো সংগঠন। যার মধ্যে তীর-শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠনটি ২০২১ সালে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণে কাজ করায় জাতীয় পদক লাভ করে ।

উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ডের মেধা তালিকায় প্রতিবছরই এই কলেজ স্থান লাভ করে। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাক্রমেও প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানসহ প্রতিটি বিষয়ে এ কলেজের স্থান রয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি ছাড়াও কলেজ থেকে মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়। এছাড়াও হাবিবুর রহমান মেমোরিয়াল স্কলারশিপ ফান্ড ও রইস উদ্দীন খাতেমুন্নেছা বৃত্তি নামক দু’টি বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ বরাবরই শিক্ষার মান ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর। কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও একটি ফুলের বাগান ও বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪ টি ক্লাসরুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র লাগানো ও কয়েকটি বিভাগের রুমগুলোতে টাইলস লাগানো হয়েছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকে ২৪০ জন শিক্ষার্থী বুয়েট-ঢাবি-মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে বিসিএস ক্যাডার ও সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ লাভ করে।

কলেজের সাফল্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক আন্তরিক। শিক্ষকরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে কলেজের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানটি আরও এগিয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD