September 28, 2023, 2:06 am

News Headline :
জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের অভিনন্দন ভিসানীতি নিয়ে বিব্রত বিভ্রান্ত কিংবা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই: নওগাঁয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লেন টাইগাররা মহানবী (সা.) এর আদর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নন্দীগ্রাম সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা নন্দীগ্রামে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালি বগুড়া মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল এন্ড কলেজ বার্ষিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় উদ্ভাবন মেলা অনুষ্ঠিত বগুড়া সদরের বামনপাড়া থেকে অটোরিক্সা ছিনতাইকারী মহিলা গ্যাং এর ২ সদস্য আটক বগুড়ায় বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত ৫ বছরে এআইআইবি বাংলাদেশে ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে

এক পেঁয়াজু ৪ কেজি

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা ইউনিয়নের চন্দ্রবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তিনটি দোকান। এসব দোকানে দিনভর মানুষের উপচেপড়া ভিড় লেগেই থাকে। দূর থেকে দেখে মনে হবে এখানে কোনো বিষয় নিয়ে জটলা বেঁধেছে। কিন্তু এমন কিছুই নয়, মূলত বিশাল আকৃতির পেঁয়াজু কিনতেই এত মানুষের সমাগম ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চন্দ্রবাস গ্রামের বাসিন্দা রশিদুল ইসলাম ও মফিজুল রাস্তার পাশেই গড়ে তোলেন পেঁয়াজুর দুটি দোকান। এছাড়া মুনছুর আলী ও নজরুল ইসলাম শেখ রাস্তার দুপাশে বিশাল আকৃতির পেঁয়াজুর ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছেন। দোকানগুলোতে তৈরি হচ্ছে ২-৪ কেজি ওজনের পেঁয়াজু। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়, আকারে বড় হওয়ায় ক্রেতাকে সহজেই আকৃষ্ট করে। বিশাল আকৃতির এ পেঁয়াজুর প্রেমে মোহিত হয়ে চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসেন এখানে।

দোকানিরা জানান, দুই ভাইয়ের দোকানে প্রতিদিন ৪০-৬০ কেজি পেঁয়াজু বিক্রি হয়। সাপ্তাহিক হাটের দিন ১০০-১৫০ কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া পেঁয়াজু আবিষ্কারক নজরুল ইসলাম শেখ ও পার্শ্ববর্তী মুনছুর আলীও প্রতিদিন ২৫-৩০ কেজি বিক্রি করেন।

বিশাল আকৃতির পেঁয়াজুর আবিষ্কার

চন্দ্রাবাস গ্রামে ৪৩ বছর আগে বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন খুলনার দৌলতপুর উপজেলার দীঘলিয়ার নজরুল ইসলাম শেখ। তিনিই ১৯৯০ সালের পর বিশাল আকৃতির পেঁয়াজু বানানো শুরু করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা এক দশক পেঁয়াজু বানিয়ে বিক্রি করলেও লোকসানে পড়েন তিনি। ২০১০ সালের দিকে নজরুল ইসলাম শেখের আবিষ্কার করা পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন চন্দ্রবাস গ্রামের আব্দুল সাত্তার। সে সময়ও এটা তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলে রশিদুল ইসলাম এবং মফিজুলও একই ব্যবসা শুরু করেন।

ধীরে ধীরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশের পর বিশাল আকৃতির এ পেঁয়াজু এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালের পর নজরুল ইসলাম শেখ আবারো বিশাল আকৃতির পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন। এখন তার বিক্রিও ভালো।

যেভাবে তৈরি হয়

প্রথমে কাঁচা ঝাল, পেঁয়াজ, ময়দা, কালা জিরা ও মুহুরী (সুগন্ধি মসলা) একসঙ্গে মিশিয়ে খামি করা হয়। লাকড়ির চুলায় বড় কড়াইয়ে তেল গরম করে বিশাল আকৃতির এ খামি তেলের মধ্যে ছেড়ে ভাজা হয়। মুচমুচে হলে কড়াই থেকে তুলে তেল নিঙড়ানো হয়। এরপর ক্রেতাদের কাছে তাদের চাহিদা মতো বিক্রি করা হয়।

এক পেঁয়াজু ৪ কেজি, লেগেই থাকে ক্রেতার ভিড়

যেভাবে বিক্রি হয়

একেকটা পেঁয়াজুর ওজন হয় ২-৪ কেজির। অনেকে আস্ত একটা কিনে নেন। আবার অনেকে কয়েকজন মিলে কিনে তা ভেঙে ভেঙে খান। এছাড়া দোকানিরাও ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম বা আড়াইশ গ্রাম করে ভেঙে ভেঙে পেঁয়াজু বিক্রি করেন।

দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদাহ গ্রাম থেকে পেঁয়াজু খেতে আসেন লিজন শেখ নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিন এখানে আসা হয় বিশাল আকৃতির পেঁয়াজু খেতে। মাঝে মধ্যে একা আসি আবার পরিবার ও বন্ধুদের নিয়েও আসি। এটা খুব সুস্বাদু ও মুচমুচে।

এক পেঁয়াজু ৪ কেজি, লেগেই থাকে ক্রেতার ভিড়

চন্দ্রাবাসের পাশের গ্রাম আটকবরের বাসিন্দা বাবু বলেন, এখানে আশপাশ দুই তিন জেলা থেকে মানুষ আসে শুধু পেঁয়াজু খেতে। এরকম পেঁয়াজু বড়া বাংলাদেশের আর কোথাও হয় বলে আমার জানা নেই। এটা খেতে খুব মজাদার।

চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে আসা কামরুজ্জামান সেলিম ও মোহাম্মদ কাইফ বলেন, আমরা অন্য কাজে যাচ্ছিলাম। এখানে জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। পরে বুঝলাম এখানে বড় আকারের পেঁয়াজু বিক্রি হচ্ছে। আমরাও খেলাম খুব সুস্বাদু ও মজাদার। সত্যিই মনে রাখার মতো স্বাদ।

এক পেঁয়াজু ৪ কেজি, লেগেই থাকে ক্রেতার ভিড়

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা মাহফুজ মামুন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, আমি খোঁজ পেয়ে এখানে এসেছি। সত্যিই রুচিসম্মত পেঁয়াজু এটা। বেশ মন ভরে খেলাম।

দোকানি রশিদুল ও মফিজুল বলেন, ২৫ বছর আগে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন আমার বাবা। সেসময় থেকে বাবার কাজে সহযোগিতা করতাম। বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা দুই ভাই এ ব্যবসায় পাকাপোক্তভাবে নেমে পড়ি। আমাদের পেঁয়াজুর বিশেষত্ব হলো পেঁয়াজের সঙ্গে অল্প বেসন, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা এবং বিশুদ্ধ সয়াবিন তেল। পুরনো তেল দিয়ে কখনোই পেঁয়াজু ভাজি না। কাজেই আমাদের এ পেঁয়াজু খেলে পেটে কোনো গ্যাস বা সমস্যা হয় না। পেঁয়াজুর স্বাদ বাড়াতে নিজস্ব তৈরি কিছু মসলা ব্যবহার করি। কেউ যদি ৫ টাকার পেঁয়াজু কিনতে আসে তাও বিক্রি করি। পেঁয়াজু বিক্রির টাকায় বোনদের বিয়ে দিয়েছি, বাড়িঘর করেছি। ভালোই চলছে আমাদের দুই ভাইয়ের সংসার।

এক পেঁয়াজু ৪ কেজি, লেগেই থাকে ক্রেতার ভিড়

পেঁয়াজু আবিষ্কারক হিসেবে যাকে ধরা হয় সেই নজরুল ইসলাম শেখ নজু বলেন, পেঁয়াজুর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫-২৩ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। আমি ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এত বড় পেঁয়াজু তৈরি করি। লোকসান হওয়ায় এ ব্যবসা বন্ধ করে দেই। এরপর আবার ২০১৮ সালের পর থেকে খুলেছি। এখন এটা বিক্রি করেই আমি স্বাবলম্বী। এটা খুব জনপ্রিয়ও।

কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বলেন, চন্দ্রাবাস গ্রামে বিশাল আকৃতির পেঁয়াজু বিক্রি হয়। এখানে দু-তিন জেলার মানুষ আসে পেঁয়াজু খেতে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে প্রচুর লোকসমাগম হয়। এখানে খেয়াল রাখি যেন পেঁয়াজু বিক্রেতারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে ও ক্রেতারা যেন কোনো ঝামেলায় না পড়ে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD