July 27, 2024, 1:41 am

জনপ্রিয় হচ্ছে বগুড়ায় ট্রেতে উৎপাদিত হাইব্রিড পেঁপে চারা

শাজাহানপুর প্রতিনিধিঃ চারার নগর খ্যাত বগুড়ার শাজাহানপুরের শাহ্নগর গ্রামে মাটির পরিবর্তে কোকো ডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়ার ধুলা) দিয়ে ট্রেতে উৎপাদন হচ্ছে হাইব্রিড পেঁপে চারা। নেট হাউসের ভেতরে উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলে মাটি ও বায়ুবাহিত রোগ মুক্ত থাকছে এসব চারা। বিভিন্ন নার্সারিতে এরই মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার চারা উৎপাদন ও বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল নাগাদ আরো ৪০ হাজার চারা উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে।

শাজাহানপুরে হাইব্রিড পেঁপে চারা উৎপাদন শুরু করেন শাহ্নগর গ্রামের আমজাদ হোসেন এবং মাদলা গ্রামের রেজাউল করিম। গত বছর ৮ থেকে ১০ হাজার চারা উৎপাদিত হয়েছিল। এসব চারায় পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন জোঁকা গ্রামের আবু জাফর মাস্টার, শাহ্নগর গ্রামের আবদুস সালাম, দুরুলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম। তারা চলতি বছরেও পেঁপে চাষ শুরু করেছেন। অপরদিকে শাজাহানপুরে উৎপাদিত হাইব্রিড পেঁপে চারা আশপাশের এলাকা ছাড়িয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে সিলেট, ফেনী, পিরোজপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

চারার চাহিদা বাড়ায় চারা উৎপাদনকারী নার্সারির সংখ্যাও বেড়েছে। এ বছর শাহ্নগর গ্রামে ‘কৃষিসেবা ট্রে নার্সারি’, ‘ফাইম নার্সারি’, ‘তোহা নার্সারি’ এবং মাদলা গ্রামে ‘নাফিসা ট্রে-নার্সারি’ তে ‘ফাস্ট লেডি’ নামের উন্নত জাতের হাইব্রিড পেঁপে চারা উৎপাদন চলছে। এসব নার্সারিতে এরই মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার চারা উৎপাদন ও বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল নাগাদ আরো ৪০ হাজার চারা উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে।

কৃষিসেবা ট্রে নার্সারির মালিক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলে মাটি ছাড়া কোকো ডাস্টে চারা উৎপাদনের আধুনিক কলাকৌশলের ব্যবহার প্রথম শুরু হয় রংপুরে। এরপর শাজাহানপুরে শুরু হওয়ায় বগুড়া হলো এ প্রযুক্তি ব্যবহারে দ্বিতীয় জেলা। নেট হাউস থাকায় প্রখর রোদ, কীটপতঙ্গ ও পোকা-মাকড়ের হাত থেকে চারাগাছ রক্ষা পায়। অপরদিকে মাটির পরিবর্তে কোকোপিটের ব্যবহার চারাকে মাটিবাহিত রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখে। তিনি আরো বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে একই জমিতে বার বার চারা উৎপাদন করায় জমিগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। উৎপাদিত চারা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। এতে লোকসান গুনতে হয় নার্সারি মালিকদের। সবজি উৎপাদনেও ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা।

নাফিসা ট্রে নার্সারির মালিক রেজাউল করিম মণ্টি জানিয়েছেন, তবে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ট্রে নার্সারি পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন খরচ শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেশি হলেও রোগমুক্ত ও সুস্থ সবল হওয়ায় কীটনাশকের খরচ থাকে না। তুলনামূলক কম খরচেই চাষিরা বেশি ফলন পাচ্ছেন। উভয়লিঙ্গ এসব প্রতিটি গাছে পেঁপে ধরে। ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন আসে। ৪ কেজি পর্যন্ত একটি পেঁপের ওজন হয়ে থাকে। তাই প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ট্রে নার্সারি পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা হলে নার্সারি মালিক ও সবজি চাষি উভয়ের জন্যই লাভজনক।

চাষিরা আরো জানান, ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সি চারা তারা বিক্রি করে থাকে প্রতি পিস ২০ টাকায়। এসব চারা বগুড়ার বাহিরের জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যাচ্ছে। ২৫টির বেশি চারা নিলেই ১০০ টাকা কুরিয়ার খরচে পৌঁছে যায় চারা। ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন ঘরে তোলা যায়। একটি গাছে দুই মণেরও বেশি ফলন হয়ে থাকে।

ট্রে নার্সারিতে সবজি চারা উৎপাদন কার্যক্রম অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী উল্লেখ করে শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানিয়েছেন, আধুনিক এ প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে নার্সারি মালিক ও সবজি চাষিরা দারুণভাবে লাভবান হবেন। অপরদিকে মাটির উর্বরতা হ্রাস এবং রোগ বালাইয়ের কারণে সবজি উৎপাদনে যে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD