October 3, 2023, 1:16 pm
আবুল কালাম আজাদঃ বগুড়া জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি কেস ছাড়াই জোনাল-এর আইডি ব্যবহার করে একজনের খতিয়ান কেটে অন্যজনের খতিয়ানে সম্পত্তি পার করার অভিযোগ উঠেছে। এই রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ভূমি মালিকদের অভিযোগ, সিট মিসটেক এবং খতিয়ান যাচাই মিসটেক সংশোধনের নামে ভূমি মালিকদেরকে নোটিশ করে ডেকে এনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রেকর্ড সংশোধন করে নেয়ার প্রলোভন দেয়া হচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে তৈরি হয়েছে বড় এক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কাছে এখন জিম্মি সাধারণ মানুষ।
জামির খতিয়ান যাচাই করার নামে রেকর্ড টেম্পারিং করে একজনের জমি অন্যজনের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কার্যালয়ের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে বগুড়া অঞ্চলের শত শত মানুষ এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ছাপা খতিয়ান ও ম্যাপ বিতরণ, মাঠ জরিপ ও আপত্তি শুনানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে চলছে দুর্নীতি ও অনিয়ম। এসব অনিয়মের অভিযোগে বগুড়া জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হাফিজুর রহমানকে (উপসচিব) গত ২২ মে আঞ্চলিক পরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, রাজশাহী অঞ্চল, শেরপুর, বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। এতে ভূমি মালিকদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ভূমি মালিকদের অভিযোগ, একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের পিয়ন থেকে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত খতিয়ান যাচাই মহরার আনন্দ কুমারকে ভারপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারীর দায়িত্ব দেয়া হয়। কোনো আপত্তি কেস ছাড়াই বগুড়া সদরের ফুলবাড়ি মৌজার সাবেক দাগ নং ১৭৪ হালে ৮৯৫ দাগের দুই শতক সম্পত্তি ৩৮৬৭ ডিপি খতিয়ানের মালিক মিনারা বিবির (জং দিরাজ উদ্দিন, সাং জয়পুরপাড়া) জমি কেটে ৬৯৫১ ডিপি খতিয়ানে পার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হাল ৮৯৬ দাগটির ০৯৫০ সহস্রাংশ জমি ৩৩৬৮ ডিপি থেকে আপত্তি কেস ছাড়াই ৬৯৫১ ডিপি খতিয়ানে, ৮৯৭ হাল দাগের ০৩২৫ সহস্রাংশ ৮৯৮ হাল দাগের ১৯০০ ডিপি থেকে কেটে ৮৯৯ হাল দাগে এবং ০৮৫০ সহস্রাংশ জমি ৬৯৫১ খতিয়ানে পার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারী আনন্দ কুমার বগুড়া শহরের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হাফিজুর রহমানের আইডি থেকে চলতি ৬ জুন সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে পূর্বের খতিয়ান বাতিলপূর্বক ৬৯৫১ ডিপি খতিয়ানে জমিগুলো পার করে নিয়েছেন। বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া মৌজার মতিউর রহমানের স্ত্রী রওশনারার অভিযোগ, সাবেক দাগ নং ২৩৪৫ হালে ১০৮৩ দাগের ১৫০০ সহস্রাংশ জমি ৪২৪৬ ডিপি হতে টেম্পারিং করে ৬৯৫১ ডিপি খতিয়ানে প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে তার প্রায় ৬০-৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বগুড়া শহরের চরফরিদ এলাকার আকতারুজ্জামান চৌধুরী ও কাটনারপাড়া এলাকার যন্ত্র বিজ্ঞানী খ্যাত আমির হোসেনসহ অনেকেই অভিযোগ করেছেন। আকতারুজ্জামান চৌধুরী অভিযোগ করেন, চরফরিদ মৌজায় সি এস মালিক থেকে কবলা ক্রয়কৃত ১৩৭ ও ১৩৮ দাগের সাড়ে সাত শতক জমি ভুয়া দলিলের ফটোকপিতে টেম্পারিং জালিয়াতি করে অন্য লোকের নামে রেকর্ড করা হয়েছে। আমির হোসেন বলেন, ফুলবাড়ি মৌজায় তার কবলা ক্রয়কৃত সম্পত্তির মূল নকশা কেটে অন্যায়ভাবে পার্শ্ববর্তী ভূমি মালিককে দেয়া হয়েছে।
বগুড়া সেটেলমেন্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হাফিজুর রহমানের চাহিদামতো অর্থ দিতে না পারায় তিনি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত গালিগালাজ করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বগুড়া জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, আমার আইডি ব্যবহার করে কে বা কারা বেশ কয়েকটা খতিয়ান কেটে অন্য খতিয়ানে জমি পার করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, যা ভূমি জরিপ অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে। ঘটনা উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।