September 24, 2023, 3:27 am

ছয় মাসে ১১৯ সাংবাদিককে নির্যাতন-হয়রানি: আসক

যমুনা নিউজ বিডিঃ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বাংলাদেশে ১১৯ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ২৯ জন রয়েছেন। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় ৮ জন করে সাংবাদিককে হয়রানি-নির্যাতন করা হয়েছে।

দেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ১০টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং তাদের ‘নিজস্ব সূত্র’ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে আসক।

ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনা করে সোমবার সংগঠনটি জানিয়েছে, এই ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক। এছাড়া, বেআইনি আটকের অভিযোগ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়ন, সীমান্তে হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে।

আসক জানায়, গত ৬ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৪টি মামলার মোট আসামি ৬০। এর মধ্যে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার হয়েছেন ২৬ জন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ৪ জন এবং গুলিতে ২ জনসহ মোট ৬ জন মারা গেছেন।

এর মধ্যে র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাকে বিদ্যমান আইন ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ১৭৯টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে নরসিংদীতে ৩ জন নিহত, ঢাকায় ৭টি ঘটনায় ১৯২ জন আহত এবং বরিশালে ১০টি ঘটনায় ১৩৯ জন আহত হয়েছেন।

বাংলানিউজের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম রব্বানির ওপর হামলা ও মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে আসক বলেছে, সাংবাদিকের ওপর এ ধরনের হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী, জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সংকুচিত করে তোলে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, বিশেষত প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামানকে সিআইডি পরিচয়ে ভোররাতে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং দিনভর তাকে আটকের ঘটনা সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায়োগিক আচরণ যে অসংগত ও বেআইনি তা প্রতীয়মান হয়েছে। এ ধরনের অমানবিক আচরণের অভিযোগ সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে আটকের সময়ও পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছিল। রঘুনাথ খাঁকে আটকের পর পুলিশ দিনভর অস্বীকার করে প্রায় ৯ ঘণ্টা পরে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখায়।

আসক বলেছে, গত ছয় মাসে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ১৭৯টি ঘটনা ঘটে। এতে ১৪ জন নিহত এবং ২ হাজার ৪২২ জন আহত হন।

গত ৬ মাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ১১ বাংলাদেশি নিহত হন। আহত হন ১৪ জন। পাঁচটি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের তিনটি বাড়িঘরসহ একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের হামলা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় একজন নিহত ও কমপক্ষে ৬২ জন আহত হন। হামলার এ ঘটনায় ১০৩টি বাড়ি ও ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

গত ৬ মাসে যৌন হয়রানিকেন্দ্রিক সহিংসতা হয়েছে ১৫৪ জন নারী-পুরুষের ওপর, এর মধ্যে ৭৯ জন নারী ও ৭৫ জন পুরুষ। যৌন হয়রানির কারণে ১০ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২০ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ৩ জন নারী। এ ছাড়া, ৬৬ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।

পারিবারিক নির্যাতন করা হয়েছে ২৫৩ জন নারীর ওপর। এর মধ্যে ১৫৬ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫৯ জন নারী। এ ছাড়া, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে ৩৮ জন নারীর ওপর। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতন করা হয়েছে ৭৪ জন নারীর ওপর। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৩৪ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের পর আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ৩৭ জনকে। এই ছয় মাসে মোট ১৩ জন গৃহকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৭ জন মারা গেছেন।

গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৮০৪ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে, এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১০৯ শিশুকে। এক ছেলে শিশুকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ৪৫ শিশু, বিভিন্ন সময়ে মোট ৮৭ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ মাসে গণপিটুনিতে নিহত হন মোট ২৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, খুলনা, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে নিহত হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD