March 19, 2024, 11:22 am

ঠাকুরগাঁওয়ে দিগন্তজুড়ে এখন মরিচের লালগালিচা

যমুনা নিউজ বিডিঃ এ যেন লালের সমারোহ। পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ এবং ডানে বামে এবং সামনে পেছনে সর্বত্রই লালে-লাল। এ যেনো দিগন্তজুড়ে লালগালিচা। কোনো অনুষ্ঠানের চিত্র নয়, এটি ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের ফলন ও ফলনের পরবর্তী পাকা মরিচ শুকানোর চিত্র।

এবার চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার হাট-বাজারগুলোয় উঠতে শুরু করেছে কাঁচা ও পাকা মরিচ। মরিচের দাম ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুঁটেছে। আর তাই মরিচ শুকাতে ও মরিচের প্রক্রিয়া করণে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ জেলার কৃষকরা।

সরেজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার রুহিয়া রেলস্টেশনসহ প্রতিটি রেললাইনে এখন লাল মরিচের সমারোহ। মরিচ শুকিয়ে বাজারজাত করলে বাড়তি দাম পাওয়া যায়। তাই লাইনের শুকনো মাটির ওপর পাটি বিছিয়ে শুকাতে দেয়া হচ্ছে লাল মরিচ। একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রায়পুর ইউনিয়নের ভেলাজান এলাকায়। এখানেও মরিচের বাজার ও কৃষকের মাঠ রয়েছে মরিচ শুকানোর। কৃষক ও তাদের পরিবারের লোকজন ও তাদের সহযোগিরা এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানে চলে পাইকারি মরিচ বেচা-কেনাও। সদর উপজেলার রেল গেইট এলাকায়ই প্রতিদিন কয়েকটি এলাকার চাষিরা মরিচ শুকাতে আসেন। এখান থেকেই মরিচ পাইকারি দরে কিনে নেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, প্রতিদিন এ স্টেশন এলাকা থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার শুকনা মরিচ কেনাবেচা হয়।
রুহিয়া ইউনিয়নের কৃষক আবদুর রহমান ১ বিঘা জমিতে বিন্দু ও বাঁশগাড়া জাতের মরিচ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিড়ানি, সেচ ও পরিচর্যা পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মরিচ উৎপাদন হচ্ছে কমপক্ষে ১০ মণ। এবার প্রতি মণ মরিচ ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় লাখ টাকা পাওয়া যাবে। কৃষকরা মরিচের রংয়ের ন্যায় লাভে লাল হবে বলেও আশা করেন তিনি।

একই এলাকার আরেক কৃষক কোরবান আলী জানান, এ রেল গেইট এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ কৃষকই মরিচ চাষের সঙ্গে যুক্ত। আমি ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ১ লাখ টাকা খরচ হলেও লাভ থাকবে প্রায় ৩ লাখ টাকা। আর এই মরিচের জন্য অনেক মানুষ কাজ করছেন। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে এখানে।

একই উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমে এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে মরিচের। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।

ওই এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, পৌষ মাসে চারা রোপণ করার পর থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস প্রয়োজন। বিন্দু, সেকা, মাশকারা, মল্লিকাসহ বিভিন্ন জাতের মরিচ হয় এ এলাকায়।

রুহিয়া ইউনিয়নে স্বামীর সঙ্গে মরিচ শুকাতে আসা তহমিনা বেগম বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। মরিচের চারা রোপণ, সার-বিষ, রোদে শুকানোসহ সব কাজ নিজেরাই করি। গতবারের তুলনায় অনেক ভালো মরিচ হয়েছে। মরিচ নষ্ট হয়নি। দামও বেশ ভালো। আমরা এবার খুশি।

এদিকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে মরিচের শুকানো ও যতেœ। জমিতে মরিচ সংগ্রহের কাজে শিশু-কিশোরের পাশাপাশি পরিবারের বয়স্করাও যোগ দেন। প্রতিটি মরিচের ঝুড়ি ভর্তি হলে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হিসেবে দিনে আয় করছেন কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় মরিচ পাঠিয়ে লাভবান হচ্ছেন। রহমত আলী নামে মাগুরার এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি বছরই মরিচ কিনতে আসি এই এলাকায়। লাভও হয়। এবার ফলন ও মরিচের কোয়ালিটি বেশি ভালো হওয়ায় এই মরিচের দাম ভালো পাওয়া যাবে তাই বিগত বছরের তুলনায় লাভও বেশি হবে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর আরেক ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম জানান, উত্তরাঞ্চলের মরিচ অনেক ভালো বিশেষত ঠাকুরগাঁওয়ের। এবারও মরিচ কিনতে এসে ফলন ও মান দেখে অবাক হই। সরকার উদ্যোগ নিলে এই মরিচ বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১৬৩ কোটি টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদিত হবে। এছাড়াও এখানে মরিচের ব্যবসায়ের কারণে মৌসুমি কর্মসংস্থান এবং মরিচের বিশাল বড় ব্যবসায়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। যা আমাদের কৃষি ও কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলেও জানান এ কৃষিবিদ।
সূত্র : বাসস

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD