April 23, 2024, 6:06 am

নন্দীগ্রামে ধান ক্ষেত জুড়ে সবুজের সমারোহ : বাম্পার ফলনের আশা

আব্দুর রউফ উজ্জলঃ বগুড়া জেলার শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নন্দীগ্রাম উপজেলায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আমন মৌাসুমের মাঝামাঝি এই সময় মাঠের পর মাঠ শোভা পাচ্ছে সবুজের সমারোহ। আর এ সময়েই উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আমন ধানের লকলকে তরতাজা সবুজ গাছগুলোতে পোকামাকড় দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

উপজেলার ভাদুম গ্রামের আনছার আলী, বড় ডেরাহার গ্রামের আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল গফুর, কদমা গ্রামের আবুল কালামসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে কাজ করছেন। এই অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন করে অত্র অঞ্চলের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেও ৭০/৭৫ ভাগ ধান দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর চলতি রোপা আমন মৌসুমে শুধু নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সর্বমোট ২০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল যা অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৭৬০ হেক্টর। এই জমি থেকে ৬১ হাজার ১০ মেট্রিকটন ধান (চাউল হিসেবে) উৎপাদনের ল্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

এ বছর কৃষকরা জমিতে ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান ৫১, ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান ৮৭, বির ধান ৯০ বিনা-৭, বিনা-১৭, কাটারীভোগ এবং হাইব্রিড তেজসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছে। যা এ উপজেলার চালের চাহিদা পূরণ করেও বাহিরে রপ্তানী করতে পারবে কৃষকরা। এ বছর যদিও আবহাওয়া খুব একটা অনুকূলে ছিলনা, সেচের মাধ্যমে রোপা আমন চাষাবাদ করেছে কৃষকরা তবুও রোগ বালাই কম। কৃষি অফিসের সময় মত পরামর্শ পেয়ে কৃষকরা জমিতে যে পরিশ্রম করেছে তাতে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি দেখা যাচ্ছে। উপজেলার ভাদুম, গোছন, ডেরাহার, কদমা, হাটলালসহ বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ যেন সবুজের সমারোহ ছড়িয়েছে।

উপজেলার ভাদুম গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফারুক হোসেন স্প্রে মেশিন নিয়ে আমন ধান ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তার কাছে গিয়ে কি স্প্রে করছেন জানতে চাইলে তিনি জানালেন, আমন ধান মৌসুমের এটা মাঝামাঝি সময়, এ সময়েই ধান গামর হবে ঠিক এই সময়টাতেই ধানে রোগসহ বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে

সে আরও জানায়, কীটনাশক স্প্রে করছি যাতে কোন রোগ ও পোকা-মাকড় আক্রমণ করতে না পারে। একই মাঠে একটু দুরে গিয়ে আমন ধান ক্ষেতে কৃষক হাসানের সাথে কথা বললে সে জানায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূলে থাকায় সময় মত বৃষ্টি না গভীর নলকূপের পানি সেচের মাধ্যমে রোপা আমন চাষাবাদ হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমন ধানতে ভালোই আছে। ইতোমধ্যে ধান গামর হতে শুরু করেছে।

গোছন গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর আমন ধান অনেক ভালো হয়েছে যদিও সারের কিছুটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছিলো তারপরও বিভিন্নভাবে কষ্ট করে হলেও সার সংগ্রহ করে জমিতে প্রয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে ধানের বাজারও বেশ ভালো, ধানের বাজার যদি পরিবর্তন না হয়ে বাড়তির দিকে থাকে তাহলে কৃষক এবার অনেকটা লাভবান হবে বলে মনে করছি।

এছাড়াও এ উপজেলার বেশ কয়েক জন সাধারণ কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা জমিতে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়েছে এতে করে আমাদের আমন ফসল অনেক ভালো হয়েছে। সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণের ফলে আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আদনান বাবু জানান, এ উপজেলার কৃষকরা নিয়মিত কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং আমাদের পরামর্শমত ধান চাষ করেছে, তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূলে থাকলেও রোগ-বালাই পোকামাকড় তেমন একটা নেই। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD