March 28, 2024, 10:05 am

ইথিওপিয়ায় গৃহযুদ্ধ আবার তীব্র হয়ে উঠেছে

যমুনা নিউজ বিডিঃ ইথিওপিয়ার ফেডারেল সরকার ও টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) মধ্যে আবারও তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। ফলে শান্তি আলোচনা আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল। দুই পক্ষই বলছে, আমহারা রাজ্যের কোবো শহর-সংলগ্ন টিগ্রের দক্ষিণে সীমান্ত এলাকায় গুলি বিনিময় শুরু হয়েছিল ২৪ আগস্ট ভোরে। উভয় পক্ষ এ জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।

তবে পশ্চিমা কূটনীতিকদের থেকে পাওয়া তথ্য থেকে এটি পরিষ্কার যে ইথিওপিয়ান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স ও ফানো হিসেবে পরিচিত তার সহযোগী আমহারা মিলিশিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরেই ওই এলাকায় সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছিল। অন্যদিকে টিপিএলএফ নতুন করে বিপুল পরিমাণ সৈন্য নিয়োগ দিয়ে পদস্থ কর্মকর্তাদের তাদের প্রশিক্ষণের জন্য নিয়োজিত করেছে। যদিও তারা নতুন নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। উত্তেজনা বাড়ছে। যদিও কয়েক সপ্তাহ আগেই একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো যে শিগগিরই শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ শান্তি আলোচনার জন্য কমিটির নেতৃত্ব দিতে তার ডেপুটি ডেমোকে মেকোনেনকে মনোনীত করেছেন। ওই কমিটি জুলাইতে কাজ শুরু করেছে। এমনকি এর আগে অ্যাবি গোপনে কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে টিপিএলএফের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সিসিলি ও জিবুতিতে কয়েকটি আলোচনায় মনে হচ্ছিল যে একটা সমঝোতায় তারা উপনীত হয়েছে যে ইথিওপিয়ান সৈন্যরা টিগ্রে থেকে অবরোধ সরিয়ে নেবে। আর এরিত্রিয়া তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করবে।

আর দুইপক্ষ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে খোলামেলা আলোচনায় বসবে, যেখানে প্রথম এজেন্ডা হবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।

পর্দার অন্তরালে যুক্তরাষ্ট্র এ আলোচনাকে শক্তভাবে সমর্থন দিচ্ছে এবং তারা এ নিয়ে কেনিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত মাইক হ্যামার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতরা ও জাতিসংঘ গত ২ আগস্ট টিগ্রের রাজধানী মেকেলে সফর করে সেখানে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংকিং ও অন্যান্য মৌলিক সেবা এবং ত্রাণ সহায়তা দ্রুত চালুর আহ্বান জানান। তবে আফ্রিকান ইউনিয়নের দূত অলুসেগুন ওবাসানজো কোন মন্তব্য করেননি। তিনি নিজেকে মধ্যস্থতাকারী দাবি করেছেন এবং ইথিওপিয়ার সহযোগী এরিত্রিয়াকে আলোচনায় ডেকে অন্যদের অবাক করে দিয়েছেন। টিপিএলএফ সরকারকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। তবে সরকার কোন ধরনের আলোচনা হয়েছে বলে স্বীকার করেনি। আবার আন্তর্জাতিক দূতরাও কি কারণে আলোচনা সফল হলো না তা নিয়ে নিশ্চুপ। জুলাই ও আগস্ট মাসজুড়ে আদ্দিস আবাবা শুধু খাবার, ওষুধ ও সার নেয়ার অনুমতি দিচ্ছিল ওই এলাকাগুলোয়। অবশ্য টিগ্রেতে সীমিত আকারে হলেও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কার্যক্রম আবার চালুর অনুমতি দেয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা পেয়েছে টিপিএলএফ। তারা আদ্দিস আবাবার অবরোধের সমালোচনা করে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করে বলে বলেছে, যে ত্রাণ যাচ্ছে সেটি পর্যাপ্ত নয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অবশ্য বলেছে, তারা লাখ লাখ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। তারা এটিকে সূচনা বললেও প্রায় ৪৮ লাখ মানুষের তুলনায় এটি খুবই কম। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেয়া এক খোলা চিঠিতে টিপিএলএফ নেতা ডেবরেটসিওন জেবরেমাইকেল বলেছেন, ‘মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। হয় অনাহারে কিংবা লড়াই করে মর্যাদার সাথে মৃত্যু- এ দুটির একটিকে আমাদের বেছে নিতে হচ্ছে।’ ব্যাপক অনাহারে টিগ্রের মানুষ জর্জরিত। বেলজিয়ামের একটি একাডেমিক দলের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের নভেম্বরের পর থেকে টিগ্রের অন্তত ৫ লাখ মানুষ অনাহারে মারা গেছে।

২০২১ সালে জুনের টিপিএলএফ ওই অঞ্চলের পুনর্নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর একটি ফরাসি চ্যানেল ছাড়া আর কোনো বিদেশি মাধ্যমের প্রতিনিধি সেখানে নেই। অল্প কিছু ত্রাণ কর্মী সেখানে যাওয়ার অনুমতি পেলেও শিশু মৃত্যুর তথ্য তারা সংগ্রহ করতে পারেনি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র বলেছেন ‘আমরা জানি না সেখানে দুর্ভিক্ষ চলছে কি-না।’ অল্প সময়ের মধ্যেই মানবিক সংকট আরও গভীর হতে পারে। অল্প কিছু যে ত্রাণ তৎপরতা চলছিলো সেটিও এখন বন্ধ। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে শস্য আবাদ হচ্ছে না। যুদ্ধ সেটিকে আরও বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ইথিওপিয়ার বিমানবাহিনী মেকেলে এলাকায় বোমা বর্ষণ করেছে। কিন্ডারগার্টেনে বোমায় তিন শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছে। সরকার অবশ্য বলেছে যে তাদের লক্ষ্য ছিলো সামরিক এলাকাগুলো। তবে মঙ্গলবার রাতেও মেকেলেতে আবারো বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘ থেকে ১২ ট্যাংকার তেল পেয়েছে টিগ্রের মানুষ। টিপিএলএফ বলছেন তারা কয়েক মাস আগে ঋণ হিসেবে তেল নিয়েছে জাতিসংঘ থেকে। ইথিওপিয়ার বিমান বাহিনী বলছে, তারা সুদানের আকাশসীমা থেকে টিগ্রেতে অস্ত্র আনার সময় একটি বিমানকে ভূপাতিত করেছে। টিপিএলএফ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ওদিকে এরিত্রিয়ায় বড় একটি সৈন্য দলের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। যে দলটিতে এরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার সৈন্য আছে। তারা টিগ্রের সীমান্তের কাছে অবস্থান নিয়েছে। এরিত্রিয়া সরকার সবসময়ই এ বিষয়ে নিশ্চুপ। বুধবার সুদান সীমান্তের কাছে টিগ্রের পশ্চিমাঞ্চলে লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। কোবো শহর নিয়ে ব্যাপক লড়াই হয়েছে। টিগ্রের সূত্রগুলো বলছে তারা একটি বড় জয় পেয়েছে এবং বেশ অস্ত্রও তাদের দখলে এসেছে। যদিও নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে এসব তথ্য যাচাই করা যায়নি। ইথিওপিয়ার সরকার কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা সংবাদমাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করতে বলেছে। তারা দাবি করেছে, কোবো শহর তারা খালি করেছে এবং ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের একটি শহর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেখানে সেনাবাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি। যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে টিপিএলএফ তাদের সেনাদের সরায়নি। তাদের মুখপাত্র বলেছেন ভলদিয়া সিট দখলের যে খবর এসেছে তাও সত্যি নয়। টিপিএলএফ বলছে, তারা শিগগিরই শান্তি আলোচনা চায়। অরমো লিবারেশন আর্মির সাথে তাদের আনুষ্ঠানিক জোট আছে এবং তারা একসাথেই দেশের দক্ষিণে ও পশ্চিমে সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই করছে। কিন্তু তারপরেও তাদের এমন কোনো জোট নেই, যারা দেশ শাসন করতে পারে। আর টিগ্রের মানুষের সেন্টিমেন্ট হলো যে তারা তাদের অঞ্চলের জন্যই শুধু লড়াই করুক। এ মুহূর্তে কোনো গ্রহণযোগ্য শান্তি প্রক্রিয়া চলমান নেই। জেনারেল ওবাসানজো ইথিওপিয়া সরকারের সমর্থন পেলেও কিছু আফ্রিকান ও পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন যে তিনি এটি করতে সক্ষম নন। তবে যুক্তরাষ্ট্র-কেনিয়ার উদ্যোগ আবার হোঁচট খেয়েছে কেনিয়ার নির্বাচনের কারণে। সেখানে উহুরু কেনিয়াত্তা সমর্থিত রাইলা ওডিঙ্গা নির্বাচনে হেরে গেছেন। এ উদ্যোগে কেনিয়াত্তার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতা ছিল। তবে এটা এখনো সম্ভব হতে পারে যদি ওডিঙ্গা এখন মিস্টার কেনিয়াত্তাকেই দায়িত্ব দেন শান্তি আলোচনাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। তবে কেনিয়ার রাজনীতিতে সব সময়ই অনিশ্চয়তা কাজ করে। আমেরিকানদের আপাতত কোন প্ল্যান বি আছে বলে মনে হয় না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহবান জানিয়েছেন। তবে সেদিকে কারও কোনো আগ্রহ আছে বলে মনে হয়না। অ্যাবি নিজেকে দুর্বল দেখাতে চাইছেন না। আবার আদ্দিস আবাবা এখন টিপিএলএফকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করছে। টিপিএলএফের দাবি, সরকারি বাহিনীর অবরোধ তুলে নেয়া এবং এটিই আলোচনার জন্য তাদের শর্ত। এটিকে তারা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে গত সপ্তাহের দুর্ভোগ ও মৃত্যু একটি বিষয়ই প্রমাণ করে। আর সেটি হলো- টিগ্রের যুদ্ধের কোনো সামরিক সমাধান নেই।
খবর বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD