March 29, 2024, 2:34 pm

উত্তরে দৈনিক ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা আয় করেন চা শ্রমিকরা

পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়সহ উত্তরের পাঁচ জেলার সমতলের চা বাগানগুলোতে ধর্মঘটের কোনো প্রভাব নেই। অস্থায়ীভাবে কেজি হিসেবে কাঁচা চা পাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলে আগের মতোই চলছে সব কাজ। মৌসুম চলায় প্রতিদিনই চা বাগান থেকে কাঁচা পাতা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। দৈনিক একেকজন শ্রমিক আয় করছেন ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

পঞ্চগড় চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় ১০ হাজার ২০০ একর জমিতে চা আবাদ হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলে রেকর্ড ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। এ থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি বা ১৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। বর্তমানে চলছে উৎপাদনের মৌসুম। প্রতিবছর মার্চ থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত চলে চা উৎপাদনের কার্যক্রম। এক মৌসুমে ৭ পর্বে পাতা তোলার কাজ হয়। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি-এ ৩ মাস চা পাতা সংগ্রহ এবং কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ থাকে। এসময় চাষিরা বাগান প্রুনিং করে থাকেন। পাতা তোলার ৪০ দিন পরিচর্যার পর আবারও শুরু হয় সেই কাজ। বছরের ৯ মাস কাঁচা চা পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন শ্রমিকরা। এখানে মূলত অস্থায়ীভাবে তারা পাতা তোলার কাজ করে থাকেন।
প্রতিকেজি তুলে ৩ টাকা করে পারিশ্রমিক পান শ্রমিকরা। নারীরা প্রতিদিন দেড়শ থেকে ২০০ কেজি এবং পুরুষরা সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত পাতা তুলতে পারেন। সে হিসাবে একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিক ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। ৯ মাস পাতা তোলার কাজের পর এসব শ্রমিক আবার পরের ৩ মাস বাগান পরিচর্যার কাজ করে থাকেন। পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল এলাকার চা শ্রমিক হোসনে আরা বেগম জানান, তিনি প্রতিদিন গড়ে ২০০ কেজি চা পাতা তুলছেন। প্রতি কেজি ৩ টাকা হিসাবে তার মজুরি দাঁড়ায় ৬০০ টাকা। ৯ মাস ব্যস্ত সময় কাটান ।

একই এলাকার চা শ্রমিক খয়রুল হোসেন জানান, আগে তিনি কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি পেতেন ৫০০ টাকা। গত কয়েক বছর ধরে তিনি চা বাগান থেকে পাতা তোলার কাজ করছেন। এখানে প্রতিদিন উপার্জন করছেন ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। তেঁতুলিয়া উপজেলার বিল্লাভিটা এলাকার সফল চা চাষি কাজী আনিস জানান, সমতলের চা অঞ্চলের চাষিরা, অস্থায়ী চাষি, এসব শ্রমিক কেজি দরে বাগান থেকে চা প্লাকিং করে থাকেন। গড়ে প্রতিজন শ্রমিক দিনে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করেন। একই উপজেলার শিলাইকুঠি বালাবালি এলাকার চা বাগান মালিক অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা আলহাজ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাগান থেকে ছোট করে পাতা কাটি। এজন্য প্রতি কেজি কাঁচা পাতা কাটার জন্য শ্রমিককে দেই ৪ টাকা করে। একজন পুরুষ শ্রমিক ৩ থেকে ৩০০ কেজি এবং নারী শ্রমিক ১ থেকে দেড়শ কেজি পর্যন্ত পাতা কাটতে পারেন। আগে বড় করে পাতা কাটতে দিতাম ৩ টাকা কেজি দরে। পঞ্চগড় চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকরা স্থায়ী। মজুরি ছাড়াও তারা রেশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। পঞ্চগড়সহ উত্তরের চা বাগানগুলোতে শ্রমিকরা অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। এ অঞ্চলের শ্রমিকরা বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা তুলে কেজি হিসাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে এখানে প্রতি কেজি পাতা তুলে শ্রমিকরা পান ৩ টাকা করে। পঞ্চগড় জেলার চা বাগানগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। যার অর্ধেকই নারী শ্রমিক। এখানে নারীরা গড়ে ৫ থেকে ৬০০ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে ৮ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। অধিকাংশ নারী শ্রমিক সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি থেকে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD