April 26, 2024, 1:33 pm

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সজিনার গ্রাম

যমুনা নিউজ বিডিঃ  সজিনা একটি অতি পরিচিত ও সুস্বাদু সবজি। ওষুধি গুণ সমৃদ্ধ ও মানবদেহের জন্য উপকারী সজিনা সাধারণত  মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে বাজারে পাওয়া যায়। ওডিসি-৩  বারোমাসি সজিনার জাত। নতুন জাতের এ সজিনা  সারা বছরই ফলন দেবে। গাছে সব সময় ফুল, কচি সজিনা দেখা যাবে। বসতবাড়ির জন্য সজিনা একটি আদর্শ সবজি গাছ।  গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নে তারাশি ও মাঝবাড়ি গ্রামে ২০০ টি পরিবারে ৫ টি করে মোট ১ হাজার সজিনার চারা রোপণ করে সজিনা গ্রাম সৃজন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর  কৃষি উন্নয়ন  প্রকল্পের আওতায় কোটালীপাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বাগান সৃজন করে দিয়েছে। কোটালীপাড়া উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ নাজমিন খানম (৩৫) বলেন, প্রায়োজনীয় সার ও অন্যান্য  উপকরণ দিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নতুন জাতের বারোমাসি সজিনার ৫টি চারা আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করে দিয়েছে। তাদের পরামর্শে আমরা সজিনার গাছ পরিচর্যা করছি। এখান থেকে বারোমাস ফলন পেয়ে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাব। অতিরিক্ত সজিনা বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করতে পারব। এতে আমাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা বাড়বে।  কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় জানান, বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই আমরা সজিনা বাগান সৃজন করেছি। এ বাগানে ওডিসি-৩  বারোমাসি সজিনার চারা রোপণ করা হয়েছে। আমরা  ১ মাস বয়সী চারা রোপণ করে দিয়েছি। সেই সাথে সার, প্রশিক্ষণ ও সজিনা গাছ পরিচর্যার প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি।  গাছের বয়স ৫ মাস হলেই এ জাতের সজিনা ফলন দিতে শুরু করবে।  সে হিসেবে নভেম্বর থেকেই তারা ফলন পাবেন। সজিনায় প্রচুর ওষুধি গুণ রয়েছে। এ সবজি মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। বাড়ির আঙ্গিনায় উৎপাদিত সজিনা খেয়ে কৃষক নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত সজিনা বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করবেন।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রতি গ্রাম সজিনা পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় আরো বলেন, এতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক রয়েছে।  পালংশাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয়রণ বিদ্যমান। সজিনা শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও অন্যতম অবদান রাখে। মানুষের শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ প্রোটিন। যার গাঠনিক একক হলো এমাইনো এসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবোলিজম এবং অন্যান্য কার্যাবলী পরিপূর্ণরুপে সম্পাদনে এমাইনো এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।  মানুষের শরীরের যে ৯টি এমাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সবগুলোই এ সজিনার মধ্যে রয়েছে। এটি শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মত কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। এটি শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। শরীরের ওজন কমাতেও ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাতা থেকে তৈরি এক টেবিল চামচ পাউডারে ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% আয়রণ রয়েছে।  এটি ১ থেকে তিন বছরের শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন সময়ে ৬ টেবিল চামচ পাউডার একজন মায়ের প্রতিদিনের আয়রণ এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে। সজিনায়  এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি যকৃত ও কিডনী সুস্থ রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেও কাজ করে।

সজিনাতে প্রায় ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এতে ৩৬ টির মত এন্টি-ইনফ্ল্যামমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এ ছাড়া এটি অকাল বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।  গোপালগঞ্জ হর্টি কালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম দেশি-বিদেশি পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সজিনাকে অত্যাশ্চর্য বৃক্ষ বা অলৌকিক বৃক্ষ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এর পাতায় আট রকম অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮% আমিষ আছে যা বহু উদ্ভিদেই নেই। সজিনা সবজির চেয়ে এর পাতার উপকার আরও বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ গাছকে মায়েদের ‘উত্তম বন্ধু’ এবং পুষ্টির এক অনন্য সহজলভ্য উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ওই কৃষিবিদ ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের বরাত দিয়ে আরও বলেন, সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ওষুধিগুণ আছে। এসব কারণে   বারোমাসি সজিনা চাষ সম্প্রসারিত হলে আমাদের কৃষকের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবে।  এ ছাড়া ও সজিনা তাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD