March 19, 2024, 6:54 am
স্টাফ রিপোর্টার:মিথ্যা মামলার খড়্গ আর কারণে অকারণে পুলিশ দিয়ে হয়রানীর অভিযোগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর মন্দির পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর কৃষক, শ্রমিক ও ভ‚মিহীন বসতবাড়ি রক্ষা ঐক্য পরিষদ।গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় বগুড়া প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা অভিযোগ করেন, ধর্মকে হাতিয়ার করে বগুড়ার কতিপয় মামলাবাজ ব্যক্তি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রায় ৩শ’ হিন্দু-মুসলিম দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের বসতবাড়ি জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে অবৈধভাবে দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। ১নং খাস খতিয়ানের এসব সম্পত্তি ব্রিটিশ আমল থেকেই সম্পূর্ণরূপে সরকারি খাস সম্পত্তি। সিএস ও এসএ খতিয়ানেও সরকারি ১নং খাস খতিয়ান হিসাবে রেকর্ডভুক্ত আছে। মন্দির পরিচালনা কমিটি এসব সম্পত্তি কিভাবে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে দাবী করেন তা মোটেও বোধগম্য নয়।সংবাদ সম্মেলনে বসতবাড়ি রক্ষা ঐক্য পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহŸায়ক কেএমএ হান্নান। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় অর্ধেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আমদের ভেতরে ভাতৃত্বের যে বন্ধন আছে তাতে ধর্ম কখনোই দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়নি; বরং পরস্পরের সকল উৎসব আমরা মিলেমিশে উদযাপন করে থাকি।তিনি বলেন, এই ৩শ’ পরিবারের মধ্যে প্রায় আড়াইশ’ পরিবার একেবারে ভুমিহীন ও হতদরিদ্র। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। মন্দিরের সম্পত্তি বেদখল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে মন্দির কমিটি বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়েছে। যেসব মামলায় আমাদের অনেক নীরিহ মানুষ জেল খেটেছেন। অনেকের বাড়িঘর মেরামত করতে কিংবা গাছের ডালপালা পর্যন্ত কাটতে দেয়া হচ্ছেনা। কোন কিছু হতে না হতেই পুলিশ পাঠিয়ে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনে জমিদারী অধিগ্রহণের মাধ্যমে ভবানীপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের সম্পত্তির এসএ রেকর্ড প্রস্তুত হয়েছে। যার গেজেট নোটিফিকেশন নং ৪৮২৪ এলআর ও ৪৮৩৯ এলআর, তারিখ ০২ এপ্রিল ১৯৫৬ইং।তিনি বলেন, ১৯২৪ সালের দিকে প্রস্তুতকৃত সিএস রেকর্ডেও বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর মৌজার ১নং সিএস খতিয়ানের রেকর্ডে মালিকানা ভারত স¤্রাটের নামে রেকর্ডভুক্ত আছে। অধিগ্রহণের তথ্য গোপন করে ভবানীপুর মন্দির পরিচালনা কমিটি এতদিন এসব সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি মর্মে দাবী করেছেন।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তৎকালীন রাজশাহী জেলার রেভিনিউ অফিসার বরাবর ৬০/১৯৫৪ নম্বর একটি মিস কেস এর মাধ্যমে ভবানীপুর মৌজার প্রায় ৪৬ একর সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি বলে দাবী করা হলেও এসব খাস সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি নয় মর্মে রাজস্ব অফিসার ঘোষণা করেন। তবে কিছু দাগে মন্দির আছে এই বিবেচনায় প্রায় ১৭ একর সম্পত্তি “সেবায়েত-এর নামে বরাদ্দ দেয়ার জন্য মতামত প্রকাশ করলেও রেভিনিউ অফিসারের সেই মতামতও ছিল অস্পষ্ট। উক্ত খাস সম্পত্তিটি কত বছর মেয়াদে বরাদ্দ দেয়া হবে তার কোন উল্লেখ ছিলনা। অথচ, সরকারি খাস সম্পত্তি বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি নির্দ্দিষ্ট সময়সীমার উল্লেখ থাকে।তিনি বলেন, রাজশাহী জেলার রাজস্ব অফিসার কোনভাবেই বগুড়া জেলার কোন সম্পত্তি বরাদ্দ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না। তার অধিক্ষেত্র ছিল রাজশাহী জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এছাড়া একজন রাজস্ব অফিসার সেবায়েতকে সম্পত্তি বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রজাস্বত্ব আইনের ২০ ধারার ৫ উপ-ধারার বিধান মতে শুধুমাত্র দেবোত্তর তৌজি হতে সম্পত্তি বরাদ্দের আদেশ দিতে পারেন। সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের সম্পত্তি ২০ এর ৫ ধারায় বরাদ্দ দেয়া যায়না।সংবাদ সম্মেলনে দাবী করা হয়, অধিগ্রহণের তারিখ বাংলা ১৩৬৭ সনের ১লা বৈশাখ থেকে দেবসেবার জন্য সেবায়েত এর অনুকূলে নিয়মিতভাবে ধার্যকৃত ৫৩,৩১০/-নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। অ্যানুইটির অর্থ সরকার প্রদান করছে বিধায় মন্দির পরিচালনা কমিটি অর্থ আয়ের জন্য ভবানীপুর মৌজার ভ‚মিহীনদের উচ্ছেদ ও সরকারি সম্পত্তি লীজ দিতে পারেন না। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মন্দির পরিচালনা কমিটি ভবানীপুর মৌজার যেসব সম্পত্তি দেবোত্তর হিসাবে বরাদ্দপ্রাপ্ত বলে দাবী করছেন তার কোনে বৈধ বরাদ্দপত্র বা রেজিস্ট্রি দলিল নেই। প্রজাস্বত্ব আইনের ৮১’র বি ধারায় রেজিস্ট্রি দলিল ব্যতিরেকে সরকারী খাস সম্পত্তির প্রজাস্বত্ব সৃষ্টি হবে না মর্মে উল্লেখ আছে।সংবাদ সম্মেলনে দাবী করা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ৯০ নম্বর আদেশের ২ ধারার আদেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে অধিগ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা।সংবাদ সম্মেলনে, সরেজমিন তদন্ত করে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জোর দাবী করে বলা হয়, জমিদারী অধিগ্রহণেরও বহুবছর পূর্ব থেকে এসব সম্পত্তির উপর স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম ভুমিহীন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোনরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসাবে এসব জায়গায় বসবাস করে আসছে। ১৯৮৪ সালের ভ‚মি সংস্কার অধ্যাদেশ এর বিধান অনুসারে কোনো বাস্তুকে তার বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবেনা মর্মে উল্লেখ আছে।সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভ‚মিমন্ত্রী, ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ও বগুড়ার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট ভবানীপুর মৌজার সরকারি সম্পত্তিসহ ভুমিহীনদের বসতবাড়ি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ধর্মকে হাতিয়ার করে অন্যায়ভাবে ভবানীপুরের স্থানীয় কৃষক, শ্রমিক, ভুমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে মন্দির কমিটি কর্তৃক সকল দমন পীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করার জোর দাবী জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মোঃ নুরুজ্জামান, শ্রী অবিনাশ চন্দ্র রায়, আমজাদ হোসেন, অনিল কুমার মোহন্ত, দুলাল চন্দ্র সাহা, মজিবুর বিশ^াস, মাসুদ রানা, রিপন প্রমুখ।